শান্তিগঞ্জে গায়েবী মামলায় থেকে মুক্তি চান বিএনপির নেতাকর্মী

সোহেল তালুকদার, শান্তিগঞ্জ


আগস্ট ১৮, ২০২৪
০৪:৩৪ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১৯, ২০২৪
০৩:৫৫ অপরাহ্ন



শান্তিগঞ্জে গায়েবী মামলায় থেকে মুক্তি চান বিএনপির নেতাকর্মী


সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি ও তাঁর অঙ্গ সংগঠনের দুই শতাধিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধ হরতাল, গাড়ি ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে গত ১৫ বছরে শান্তিগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রত্যেকটি মামলার বাদী পুলিশ।  এখন নেতাকর্মীরা এসব মামলায় হাজিরা দিতে দিতে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। বিএনপির আইনী সহায়তা সেল থাকলেও অর্থের যোগান দিতে বিএনপির অনেক পরিবার গুলো নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন।  বিগত ২০০৯ সাল থেকে উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা দমন পীড়ন, হামলা মামলায় ছিলেন জর্জরিত।

এদিকে শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রশিদ আমিন বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে আমরা ও আমাদের নেতাকর্মীরা একাধিক হামলা ও মামলার স্বীকার হয়েছি। বিশেষে করে পাগলা ও শান্তিগঞ্জ সদরে হরতাল পালন, অবরোধ ও পিকেটিং করতে গিয়ে পুলিশের দ্বারা একাধিক গায়েবী মামলার আসামী করা হয়েছে।  আমাদের দাবি মামলাগুলোতে নেতাকর্মীদেরকে অন্যায় ভাবে অভিযুক্ত ও অনেককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন সরকারের কাছে পুলিশের দেয়া গায়েবী মামলা থেকে মুক্তি চান বিএনপির নেতাকর্মীরা। 

দলীয় সূত্র জানা যায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপিতে দীর্ঘদিন ধরে দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে। একাংশের নেতৃত্বে আছেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি, শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ, অপর অংশের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনসার উদ্দিন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ আমিনের নেতৃত্বাধীন বলয়ের নেতাকর্মীদের একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ২০০৯ সাল থেকে মাঠে ময়দানে সরকার পতনের আন্দোলন সংগ্রামে মিছিল, মিটিং ও সমাবেশ করেছেন তারা। বিএনপির হরতাল অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে মামলায় জর্জরিত থাকলেও বিএনপির নেতাকর্মী এবং দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করায় গত ১৫ বছরে একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে। এসকল মামলায় উপজেলার দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘর ছাড়া ও স্ত্রী-সন্তান, পরিবার রেখে পালিয়ে কেউ হাওরে ও বিভিন্ন লোকালয়ে রাত্রিযাপন করে ফেরারি হয়ে ঘুরেছেন।  সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি  এম এ মান্নান দায়িত্ব পালনকালে তিনি স্বজ্জন রাজনীতিবিদ হিসাবে জনশ্রুতি থাকলেও তার নির্বাচনী এলাকার শান্তিগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের শক্ত অবস্থান থাকার কারণে বিএনপির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ দিয়ে ধড় পাকড় এবং রাজনৈতিক গায়েবী মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানী করা হয়েছে।  তবে বিএনপির গুটিকয়েক নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের সাথে আতাত করে এম এ মান্নান এমপির সহযোগী হাবিল কাবিল খ্যাত আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড হিসাবে কাজ করেছেন।  গত ১৫ /১৬ বছর থেকে এটাই ছিল বাস্তবতা। কিন্তু দিন বদল হয়েছে, পতন হয়েছে স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের। দীর্ঘদিন পর শান্তিতে নি:শ্বাস ছাড়ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। শান্তিগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির একটি শক্ত অবস্থানে বিবাদমান দুইটি গ্রুপই রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন।  আনছার উদ্দিন বলয় ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ নেতৃত্বাধীন বলয়ের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক গায়েবী মামলার আসামী হয়েছেন। তবে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদের বলয়ের বিএনপির নেতাকর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় তাহাদের বিরুদ্ধে ৫/৬টি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।  এখন এসকল গায়েবী মামলা থেকে পরিত্রান পেতে চান বিএনপির নেতাকর্মীরা। 

শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়ন বিএনপি সিনিয়র সহ সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন,বিগত দ্বাদশ নির্বাচনে ডামি প্রার্থীদের পক্ষ নিয়ে শান্তিগঞ্জের একজন নেতা  সুপরিচিত আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী শাহীনুর পাশার পক্ষে কাজ করার কথা বলে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেছেন। ঐ নেতা বিগত ১৫/১৬ বছরে কখনো উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির প্রার্থীদের পক্ষে ভোটে অংশগ্রহণ মূলক কাজে জড়িত ছিলেন না। তিনি সব সময়েই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করে গেছেন ইউনিয়ন থেকে উপজেলা পর্যায়ে। গত দ্বাদশ নির্বাচনেও নিজ দলীয় কর্মীদের দিয়ে ডামি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন।  জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কারাবরণকারী নেতাকর্মীরা এ নেতার ব্যাপারে অবগত আছেন বলে  আমি মনে করি। 

শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রশিদ আমিন বলেন, মা, মাটি, মানুষের আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া'র রাজনৈতিক আদর্শে আমি বিশ্বাসী এবং বিএনপির বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে শান্তিগঞ্জ উপজেলার নেতাকর্মীদের নিয়ে সংক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেছি।  আমি শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তে আন্দোলন করি। গত দ্বাদশ নির্বাচনের আগেও আন্দোলন সংগ্রম চালিয়ে যাওয়ায় আমাকে সহ আমাদের দলের শতাধিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশি গায়েবী মামলা দেয়া হয়েছে।  আমাদের নেতাকর্মীদেরকে প্রতি মাসে ২/৩ বার করে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। 

সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক  চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে মামলা আর নতুন কিছু নয়।  বিগত ১৫ বছর ধরেই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়েছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার। এ উপজেলায় আমরা মাঠে ময়দানে নেতাকর্মীদের নিয়ে হরতাল, পিকেটিং করলেও বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের সাথে আতাত করে সুবিধা নিয়েছেন।  ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারের পতন হয়েছে। এখন সুবিধা নিতে মাঠে ময়দানে সুবিধাভোগীদের ঢল নেমেছে।  আমরা দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের মুল্যায়ন দেখতে চাই।  কেন্দ্র থেকে দল তাদেরকে মুল্যায়ন করবে।  আমরাও দুর্দিনে কাছ পাওয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে আমৃত্য কাজ করে যেতে চাই।


এএফ/০৯