সিলেট মিরর ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫
০৩:২০ অপরাহ্ন
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫
০৩:২০ অপরাহ্ন
সিলেটের মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসে মো. মিজানুর রহমান রিয়াদ নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে। বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রিয়াদ এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং কলেজ ছাত্রাবাসের প্রথম ব্লকের ১১১ নম্বর কক্ষে থাকেন। তিনি তালামীযে ইসলামীয়া এমসি কলেজ শাখার সহ তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘সামান্য একটি কমেন্ট নিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে। একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রক্ত দেওয়ার পরও আগে ছাত্রলীগ যা করত এখন যারা আসছে তাদের মধ্যেও তেমনটি দেখা যাচ্ছে।’
স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে অবশ্যই এমন মন্তব্য করার অধিকার আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, `ওই মন্তব্যের জেরে রাতে কলেজের ১০-১২ জন ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মী আমার কক্ষে গিয়ে ফেসবুকের ওই মন্তব্যটি বের করে মারধর করেছে। এসময় রড দিয়ে বেধরক পেটানো হয়।"
আহত রিয়াদের রুমমেট বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জুনেদ আহমদ জানান, রাতে ঘুমানোর সময় দরজায় ধাক্কা দেওয়া হয়। দরজা খুলে দিলে এমসি কলেজ ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জওহর লুকমান মুন্নাসহ ১০-১২জন শিবির কর্মী রুমে ঢুকে। তারা রিয়াদকে চড়-থাপ্পড়, লাথি-ঘুষি মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে পাশের রুম থেকে রড নিয়ে রুমে প্রবেশ করে নাজমুল ও সালমান। রিয়াদের রুমমেট জুনেদ এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করে রুমের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। দরজা লাগিয়ে রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় ।
এদিকে জাকিরুল ইসলাম নামের ছাত্রবাসের আরেক শিক্ষার্থীর দাবি তাকে মিজানুর রহমান মারধর করেছেন। তবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিওতে তিনি বলেন, ছাত্রাবাসে মিজানুর রহমান নামের ছাত্রলীগ সংগঠনের সদস্য থাকতেন। তিনি হোস্টেলে থেকে সাধারণ ছাত্রদের তথ্য ছাত্রলীগের কাছে আদান প্রদান করেন। তাকে অস্ত্রসহ ধরা হয়েছিল। এসময় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালিয়েছেন। এতে তার হাত ভেঙে গেছে।
এমসি কলেজ ছাত্র শিবিরের সভাপতি ইসমাঈল খান বলেন, কলেজে তিনদিন ব্যাপী বইমেলা চলমান রয়েছে। সেখানে ছাত্র শিবিরের একটি স্টল রয়েছে। স্টলে দলের নেতাকর্মীসহ তিনি দিনরাত থাকেন। গত বুধবার রাতে ছাত্রবাসে একটি ঘটনা শুনে সেখানে গিয়েছিলেন এবং গিয়ে দেখেন দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। পরে আহতদের তিনি হাসপাতালে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সে সঙ্গে বৃহস্পতিবার সকালেও দুইজনকেই হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে দুই পরিবারের সদস্যরা তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। হামলার ঘটনার সঙ্গে ছাত্র শিবির জড়িত থাকলে তিনি সেখানে যেতেন না । আহতদের পরিবারও তাদের স্বাগত জানাতো না।
আনজুমানে তালামীযে ইসলামের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মিজানুর রহমান আমাদের সংগঠনের এমসি কলেজ শাখার সহতথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হলেও সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শুরু থেকে অগ্রভাগে ছিল। তাকেও হামলার শিকার হতে হলো।’ ছাত্র শিবিরই এ হামলা চালিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এসএমপির শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন বলেন, ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় অভিযোগ করা হয়নি।
এ ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ূন কবির চৌধুরীকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।