সিলেটে চিকিৎসা না পেয়ে ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ০৫, ২০২০
০৫:৫৪ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ০৫, ২০২০
০৬:২০ অপরাহ্ন



সিলেটে চিকিৎসা না পেয়ে ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ

সিলেটের চারটি হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন খোকার (৫৫) মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে। আজ শুক্রবার (৫ জুন) ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া ইকবাল বন্দরবাজারের আর এল ইলেকট্রনিকের স্বত্বাধিকারী ও সিলেট নগরের কুমারপাড়ার বাসিন্দা। 

ইকবাল হোসেনের ছেলে তিহাম হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাবার বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আমরা প্রথমে নগরের সোবাহানীঘাট এলাকায় অবস্থিত একটি হাসাপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন দেই। কিন্তু ওই হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন নিয়ে আমাদের বাসায় আসার পরই অক্সিজেন সিলিন্ডার সিস্টেম অকেজো হয়ে যায়। এ অবস্থায়ই বাবাকে সোবহানীঘাটের ওই হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে অক্সিজেনের ব্যবস্থার অনুরোধ করলেও কর্তব্যরতরা নিয়মকানুন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তারা বাবাকে রাখবেন না বলে জানিয়ে দেন। আমি তাদের সকাল পর্যন্ত চিকিৎসা দেওয়ার অনুরোধ করলেও তারা স্যরি পসিবল না বলেন। এরপর তারা নর্থ ইস্ট হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। পরে বাবাকে নিয়ে দক্ষিণ সুরমার নর্থ ইস্ট হাসপাতালে গেলে সেখানকার কর্তৃপক্ষ জানান তাদের হাসপাতালে এখন রোগী নেওয়া হচ্ছে না, সিট নেই। তাই রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। তখন আমরা পরিচিত এক চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওই চিকিৎসকের পরামর্শে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে সব গেইট বন্ধ পাই।’

তিনি অভিযোগ করেন, প্রায় ১০ মিনিট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের গেইটে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। পরে এক নিরাপত্তাকর্মী এসে হাসপাতালের সবাই ঘুমিয়ে রয়েছেন বলে জানান। তিনি রোগীকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে বলেন। 

তিহাম হোসেন বলেন, ‘এরপর আমরা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে জরুরি বিভাগে তারা ইসিজি মেশিন আনে, তবে তা কাজ করেনি। তারা সিসিইউতে নিয়ে যেতে বলে। পরে সিসিইউতে গেলে তারা বাবাকে বাইরে রেখে ইসিজি করে। তখন আমাদের নিচে যেতে বলে। এরপর আবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসি, তবে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পিপিই পরে থাকলেও বাবাকে ধরেননি। এরপর তিনি জানান বাবাকে যখন আনা হয়েছিল তখনই তিনি মারা যান।’ 

তবে মারা যাওয়া ব্যবসায়ীর ছেলে ইকবাল হোসেনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সুশান্ত কুমার মহাপাত্র। সিলেট মিররকে তিনি বলেন, ওই রোগী হাসপাতালে আসার আগেই আমি খবর পাই। তখন আমি হাসপাতালের দায়িত্বরত ডা. নওশাদকে রোগী এলে দ্রুত ভর্তির নির্দেশ দেই। কিছুক্ষণ পর আমি খবর নিয়ে জানতে পারি রোগী ওসমানী মেডিকেলে চলে গেছে। ঘটনা এখানেই শেষ।’

তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে আমি অভিযোগ পাই রোগী নাকি ১৫-২০ মিনিট বসে ছিলো, কেউ গেইট খুলেনাই। পরে আমি সিসি ক্যামেরা চেক করে দেখি ৫টা ৪৫ মিনিটের দিকে ওই রোগীকে নিয়ে তার স্বজনেরা একটি অ্যাম্বুলেন্সে আসে। দুইজন গাড়ি থেকে নামে তখন হাসপাতালের সকল গেইট খোলা। ৫ টা ৪৭ মিনিটে তারা অ্যাম্বুলেন্স করে আবার চলে যায়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তার ছেলেকে ফোন করে সমবেদনা জানাই এবং তাদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাই। প্রথমে তিনি দাবি করেন, হাসপাতালের গেইট বন্ধ ছিলো এবং ১৫-২০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন আমি সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড আছে জানাই। পরে তারা স্বীকার করে বলেন, এই রকম কিছু হয়নি। আমরা এইরকম কোনও অভিযোগ করিনি।’ 

এ বিষয়ে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে শুনিনি। এরপরও আমি তদন্ত করে দেখব।’

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক হিমাংশু লাল রায় সিলেট মিররকে বলেন, ‘ওই ব্যবসায়ীকে যখন হাসপাতালের আনা হয় তখন তিনি মৃত ছিলেন। মৃত ব্যক্তিকে তো আর চিকিৎসা দেওয়া যায় না।’

এনসি/এনপি-০৫