রাফিদ চৌধুরী
জুন ০৫, ২০২০
০৭:৩৪ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ০৫, ২০২০
০৭:৩৪ অপরাহ্ন
ঘড়ির কাটা তখন সাড়ে চারটা ছুঁই ছুঁই। সিলেট নগরের কিন ব্রিজের নিচে বসেছে ‘মায়ের দোয়া’ চটপটির দোকান। দোকানকে কেন্দ্র করে মানুষের ছোটখাটো এক জটলাই বলা চলে। কেউ কেউ যদিও এসেছিলেন সুরমার পাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতে। দৃশ্যটা নতুন না হলেও এই মুহূর্তের জন্য বেমানানই বটে। তবে অর্ধশতকেরও বেশি মানুষের এই সূর্যাস্ত বিলাস দেখতে আসার দৃশ্য বলে দেয়, ‘ডেডজোন’ পরিণত হওয়া সিলেটের মানুষেরা করোনাকে পরোয়া করেন না।
শুধু কিন ব্রিজই নয়। নগরের কাজিরবাজার ব্রিজ, শহরতলীর শাহপরাণ ব্রিজও ছিল মানুষের পদচারণায় মুখর। চটপটি আর বিকেলের অবসর সময় উপভোগ করতে কাজিরবাজার ব্রিজে আসেন অনেকে। অন্যদিকে কিশোর-তরুণদের মোটরসাইকেল রাইড আর স্টান্টিংয়ে মুখর ছিল শাহপরাণ ব্রিজ। রাইডের সময় এক মোটরসাইকেলে একাধিক জনকে বসতে দেখা যায়।
সরকারের নির্দেশনার পর লকডাউন উঠিয়ে নিলে সুরমা পাড়ে আবারও শুরু হয় মানুষের হাটাচলা। যাতে আবার প্রাণ ফিরে পায় সুরমা নদীর পাড় ঘেষা ওয়াক-ওয়ে। তবে প্রতিদিন যেখানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, প্রতিদিনই এই ভাইরাসে প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। এমন পরিস্থিতিতেও মানুষ করোনাকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে নগরের সচেতন মহলকে।
সারা দেশে করোনায় মৃত্যুহারের তুলনায় সিলেট জেলার হার দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। দেশে করোনাশনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার ১.৩৫ শতাংশ। আর সিলেটে এই হার ২.৯৪ শতাংশ, যা দেশের গড়মৃত্যুর চেয়ে ১.৫৯ শতাংশ বেশি।
এমন অবস্থায় মানুষকে করোনা বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সিলেটের সচেতন মহল। এই মুহূর্তে লকডাউন তুলে দেওয়াটাও যুক্তিসঙ্গত হয়নি বলে মানছেন তারা।
এই বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রতিদিন যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তা দেখে আমার মনে হয় সিলেট করোনার জন্য রেড জোনে পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে লকডাউন তুলে দেওয়াটাও আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত নয়। করোনার প্রভাব থেকে সিলেটকে বাঁচাতে হলে পুণরায় লকডাউন করা প্রয়োজন।
করোনাকে ‘সিরিয়াসলি’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সেই সঙ্গে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করার পক্ষে মত দেন তিনি।
এই বিষয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে সিলেটে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। মানুষজন যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানেন, তবে তাদেরকে তা মানাতে বাধ্য করতে হবে। নমনীয় ভাবে মানুষকে বুঝিয়ে ঘরে আটকে রাখা যায়নি। কেউ কোনো কথা শুনেননি। তাই আমি মনে করি কথা শুনাতে হলে কঠোর হতে হবে। কারণ কয়েকজনের এই অবাধ্যতার কারণে বাকিদের জীবন হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পারি না। এখানে মায়া দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। তাই মানুষকে বাধ্য করা ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই। তাছাড়া প্রশাসনের একার পক্ষে মানুষের আইন অমান্যের বিষয়টি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরই তৈরি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক হিমাংশু লাল রায়। তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই মানুষকে আটকে রাখা সম্ভব হয়নি। লকডাউনের সময়েও মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যায়নি। তাই লকডাউনও তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব তার নিজের হাতেই। কেউ যেন প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যান, এই অনুরোধ করা ছাড়া আমাদের বলার কিছু নেই।
জেডএসএস