‘রেড জোনে’র পথে সিলেট?

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ০৫, ২০২০
১০:১১ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ০৬, ২০২০
১২:৩৮ অপরাহ্ন



‘রেড জোনে’র পথে সিলেট?

সিলেট বিভাগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষত সাধারণ ছুটি বাতিলের পর থেকেই বিভাগের চার জেলা সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।  এ অবস্থায় স্থানীয়দের আশঙ্কা, সিলেটও কী তবে ‘রেড জোনে’র পথে ধাবিত হচ্ছে? তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা-পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। কেবল ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিবেচনায় সরকার দেশের বিভিন্ন এলাকাকে লাল, সবুজ ও হলুদ-এই তিন ভাগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছে। এক্ষেত্রে সংক্রমণ বেশি হওয়ায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামকে রোগটির জন্য বিপজ্জনক বা রেড (লাল) জোন করা হতে পারে। এরই সূত্র ধরে সিলেট অঞ্চলের সচেতন বাসিন্দারা মনে করছেন, অতি সম্প্রতি করোনাভাইরাসের সর্বশেষ আক্রান্তের তথ্য অনুযায়ী সিলেট অঞ্চলের কিছু এলাকাও এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সিলেট বিভাগের চার জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের সূত্রানুযায়ী, সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত বিশেষায়িত পরীক্ষাগারে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার করোনা সন্দেহে সংগ্রহ করা নমুনা শনাক্ত করা হচ্ছে। এর বাইরে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার নমুনাগুলো ঢাকায় শনাক্ত করা হচ্ছে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন কোভিড-১৯ পরীক্ষা বৃদ্ধির সংখ্যা বেড়েছে। তাই পাল্লা দিয়ে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। তাই করোনা এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি যতটা সম্ভব ঘরবন্দী থাকতে পারাটাই উচিত কাজ হবে।

স্বাস্থ্যবিধি মানায় ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বেশ কয়েকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানিয়েছেন, স্থানীয় প্রশাসন হাটবাজার তথা গুরুত্বপূর্ণ জনসমাগমস্থলে নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব মেনে জনগণের চলাচলের বিষয়টি নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছে। এরপরও মানুষজন প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিজেদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই অবাধে চলাচল করছেন। এতে করোনা-পরিস্থিতি অবনতির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। অবস্থা এমন যে, করোনার সংক্রমণ এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

সচেতন কয়েকজন নাগরিক জানিয়েছেন, বিভাগের সিলেট জেলায় সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এরপরই রয়েছে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলা। তুলনামূলকভাবে মৌলভীবাজার জেলা কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় সিলেট বিভাগের চার জেলাতেই সংক্রমণের মাত্রা দ্রুততার সঙ্গে বাড়ছে। এটি খুবই নেতিবাচক একটি বিষয়। আর এটা অসচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার কারণেই হচ্ছে বলে সাধারণ মানুষজন মনে করছেন। তাঁদের দাবি, করোনা-পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে দ্রুত স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কঠোরতার পরিচয় রাখতে হবে। আরও বেশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি বাধ্যতামূলক মাস্ক ও গ্লাভস পরার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) পরে আসার বিধানও চালু করা দরকার।

সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলায় মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৪১৩ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলাতেই রয়েছেন ৭৮৪ জন রোগী। আক্রান্তের দিক বিবেচনায় এরপরই রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। এ জেলাতে আক্রান্তের সংখ্যা ২৬৯ জন। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে হবিগঞ্জ জেলা। এখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০৮ জন। সবশেষে রয়েছে মৌলভীবাজার জেলা। এ জেলাতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৫২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩৫৪ জন। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মারা গিয়েছেন ২৯ জন। মৃতদের মধ্যে ২৩ জনই সিলেট জেলার। এছাড়া মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছেন ৪ জন। বাকি দুজন হচ্ছেন সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চললে করোনাভাইরাস এড়ানো সম্ভব। তাই সবার সচেতন হওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। কেউ যেন প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না বেরোন, সেজন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।   

উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার ঘোষণা আসে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় সাধারণ ছুটি। গত রবিবার থেকে সারা দেশের মতো সিলেটেও সাধারণ ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়। এই অবস্থায় পরিস্থিতি আগের চেয়ে ঢিলেঢালা হয়ে যায়। এরপর ঈদকে কেন্দ্র করে ঢিলেঢেলা ভাব এবং লোকজনের চলাচল বাড়ায় রোগী বাড়তে শুরু করেছে বলে জনস্বাস্থ্যবিদেরা মনে করছেন। এখন প্রতিদিনই পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।