করোনায় মৃত্যু, জকিগঞ্জে মাইকিং করে জনসমাগম করে জানাযা!

জকিগঞ্জ প্রতিনিধি


জুন ০৬, ২০২০
১১:১১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০৬, ২০২০
১১:১১ পূর্বাহ্ন



করোনায় মৃত্যু, জকিগঞ্জে মাইকিং করে জনসমাগম করে জানাযা!
খবর জানে না স্থানীয় প্রশাসন, নতুন শনাক্ত ১৮

সিলেটের চিকিৎসাধীন অবস্থায় জকিগঞ্জের একজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মৃত ব্যক্তি হলেন জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের হাইল ইসলামপুর গ্রামের মৃত কালা মিয়ার ছেলে আবুল কালাম (৪৬)। তবে সরকারি বিশেষ প্রক্রিয়া ছাড়াই স্বাভাবিকভাবেই মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

গত ২ জুন সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনি মারা যান। পরে স্বজনরা লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসলেও সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জকিগঞ্জের প্রশাসনকে এ তথ্য জানায়নি। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই মাইকিং করে মৃত ব্যক্তির জানাযা শেষে দাফন করা হয়। জানাযায় প্রচুর সংখ্যাক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

৫ জুন সিলেটের ল্যাব থেকে জকিগঞ্জে আবুল কালামের নামের একজনের পজেটিভ রিপোর্ট প্রশাসনের কাছে আসে। এ রিপোর্ট পেয়ে প্রশাসন ঐ লোকের খোঁজখবর নিতে শুরু করে। একপর্যায়ে প্রশাসন জানতে পারে ঐ ব্যক্তি সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ২ জুন মারা গেছেন এবং দাফন হয়েছে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। এমন খবর পেয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মনেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। উপজেলা জুড়ে  চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

করোনা প্রতিরোধে দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ মনে করেন, ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণে করোনা উপসর্গে মৃত ব্যক্তির দাফন হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই। জানাযায় ও দাফনকার্যে যারা অংশ নিয়েছেন তারাও মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণে এখন জকিগঞ্জে করোনা গণবিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।

জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, গত ২ জুন শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে আবুল কালাম নামের একজন লোক সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে মারা গেলেও ওসমানী হাসপাতাল থেকে এ তথ্য তখন আমাদেরকে জানানো হয়নি। এ কারণে স্বাভাবিক নিয়মেই মাইকিং করে মৃত ব্যক্তির দাফন হয়েছে। মারা যাবার ৩ দিন পর আমাদের কাছে ঐ ব্যক্তির নামে পজেটিভ রিপোর্ট আসে। তখন খবর নিয়ে জানতে পারি তিনি মারা গেছেন। করোনা উপসর্গে আবুল কালামের মৃত্যু হয়েছে এ খবরটি আমাদেরকে তাৎক্ষণিক জানানো হলে সরকারের বিধি অনুযায়ী তার দাফন করতাম। ওসমানী কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণে জকিগঞ্জ করোনার বড় ধরণের ঝূঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, আবুল কালামের জানাযাসহ দাফনকার্যে যারা অংশ নিয়েছেন তাদেরকে এখন তাৎক্ষণিক সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছেনা। যারা এ জানাযাসহ দাফনে অংশ নিয়েছেন তারা সবাই স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে অনুরোধ করছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহ আল মেহেদী এ প্রসঙ্গে বলেন, আবুল কালাম নামের একজনের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট হাতে পেয়ে জানতে পারি তিনি ওসমানী হাসপাতালে ৩দিন আগে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। সেখানে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিলো। মারা যাবার পর সিলেট থেকে আমাদেরকে তথ্য জানানো হয়নি। আবুল কালামের মৃত্যুর বিষয়টি তাৎক্ষণিক কেন জকিগঞ্জের প্রশাসনকে জানানো হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওসমানী হাসপাতালে কাজের অনেক চাপ রয়েছে। এ কারণে হয়তো তারা খবরটি জানাতে ভূলে গেছে। আবুল কালামের দাফনকার্যে কারা অংশ নিয়েছিলেন তাদেরকে শনাক্ত করতে চেষ্টা করছি।

এদিকে জকিগঞ্জে শনিবার রাতে মৃত্যু এ ব্যক্তিসহ উপজেলায় নতুন করে ১৮ জনের শরীরে করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তা, ইউপি সচিব, ছাত্রলীগ নেতা, বিদ্যুৎ কর্মী ও গৃহিণীও রয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশীরভাগের শরীরে উপসর্গ রয়েছে। এনিয়ে শুক্রবার রাত পর্যন্ত জকিগঞ্জে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৩  জনে।

জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র থেকে জানাগেছে নতুন আক্রান্তরা হলেন, মানিকপুর ইউনিয়নের এক গৃহিণী (৬০), একই পরিবারের আরকে নারী (২৮) ও শিশু মেয়ে (০৯), সোনালী ব্যাংক জকিগঞ্জ শাখার কর্মকর্তা (৩৮), পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের একজন (২১), মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব (৪২), পূবালী ব্যাংক জকিগঞ্জ শাখার একজন (৩৫), পৌর এলাকার নরসিংহপুর গ্রামের একজন (১৮), চাকুরীজীবি একজন (৩২), পৌরসভা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (২৪), সোনাসার এলাকার বাসিন্দা একজন (২৫), সোনালী ব্যাংক জকিগঞ্জ শাখার কর্মকর্তা একজন (২৭), পৌর এলাকার একজন (২৭), আলমনগর গ্রামের একজন (২৬), কাজলসার ইউনিয়নের পলাশপুর গ্রামের একজন (২০), পৌর এলাকার পীরেরচক গ্রামের এক নারী (৩৯), খলাছড়া ইউনিয়নের লামারগ্রামের বাসিন্দা জকিগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা (১৮), উপজেলা কৃষি অফিসে কর্মরত একজন (৩৫)।

আক্রান্ত সকলের বাসা-বাড়ি লকডাউনে কাজ করছে পুলিশ।

এএইচটি/বিএ-০৯