অনলাইন ক্লাসে ফিরতে শাবি শিক্ষার্থীদের ১২ দফা

শাবি প্রতিনিধি


জুন ০৬, ২০২০
০৪:১৬ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ০৬, ২০২০
০৪:১৭ অপরাহ্ন



অনলাইন ক্লাসে ফিরতে শাবি শিক্ষার্থীদের ১২ দফা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) চলমান অনলাইন ক্লাস বর্জনের ঘোষণার পর এবার অনলাইন ক্লাসে ফিরে যেতে ১২ দফা দাবি ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে দাবিসমূহ মেনে না নিলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যাবেন না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। 

আজ শনিবার (৬ জুন) বিকালে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শর্মিলা সিদ্দিকা মিলা, মইনুল ইসলাম রাশু ও শাহরিয়ার আবেদীন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনা সংকটকালীন সময়ে নানা অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং মানসিক কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের সামর্থ্য না থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে অনলাইনভিত্তিক সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণার পরও অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই হতাশাজনক এবং শিক্ষার্থীদের চাহিদার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্পূর্ণ উদাসীন থাকার প্রবণতা বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। তাই পুনরায় অনলাইন ক্লাসে ফিরে যেতে ১২ দফা দাবি ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা।

১২ দফা দাবিসমূহ হলো-

১. অনলাইন মাধ্যমে শিক্ষা-কার্যক্রম চালাতে চাইলে সকল শিক্ষার্থীর জন্য ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রত্যেককে ডাটা কেনার পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করে শিক্ষা ভর্তুকির আওতায় আনতে হবে। একজন শিক্ষার্থীর কী পরিমাণ সাহায্য প্রয়োজন তা একটি সমীক্ষা করে স্বচ্ছভাবে নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি সুনিশ্চিত করবেন ওই বিভাগের ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ। একই সঙ্গে পরিস্থিতি এবং শিক্ষার্থীদের আর্থিক সমস্যা বিবেচনা করে ভর্তি ফি ও সেমিস্টার ফি মওকুফ অথবা কমাতে হবে।

২. যাদের ডিভাইস নেই এবং ডিভাইস ক্রয় করার মতো আর্থিক অবস্থা নেই, প্রশাসনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য ডিভাইস সরবরাহ করতে হবে। ভুক্তভোগীদের তালিকা প্রতিটি বিভাগের ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ থেকে সংগ্রহ করতে হবে এবং অনলাইন ক্লাস শেষ হলে প্রশাসন ডিভাইসগুলো ফেরত নিতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাস চলাকালীন সময়ে ডিভাইসের কোনোরূপ ক্ষয়ক্ষতি যেমন- চুরি হয়ে গেলে কিংবা ভেঙে গেলে ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করে নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ একটি সহজ কিস্তিতে পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. আমাদের দেশের সকল এলাকা ইন্টারনেট সংযোগের আওতাভুক্ত নয়, বিভিন্ন এলাকায় নেটওয়ার্কিং খুব বাজে; সেই সঙ্গে রয়েছে বিদ্যুৎবিভ্রাট। তাই সরাসরি কোনো ক্লাস নেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে ক্লাস-উপস্থিতির পূর্ণ নম্বর রাখতে হবে সকলের জন্য। রেকর্ড করা ভিডিও বা প্রয়োজনীয় কোর্স ম্যাটেরিয়ালস তৈরি করে শিক্ষার্থীদের নিকট পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

৪. বিগত ক্লাসসমূহের অভিজ্ঞতায় অনলাইনের শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষকগণের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় আশানুরূপ শিক্ষা পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। তাই  শিক্ষকগণের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাস করাতে হবে।

৫. অনলাইনের মাধ্যমে কোনোরকম পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। কোনো এসাইনমেন্ট দেওয়া হলে তার ডেডলাইন সেমিস্টার ফাইনাল পর্যন্ত দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে টার্মটেস্ট নিতে হবে।

৬. ক্যাম্পাস খুললে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন সাপেক্ষে কমপক্ষে দেড় মাস বা ততোধিক সময় রিভিউ ক্লাস নেওয়ার পর পরীক্ষা নিতে হবে। এছাড়া যেসব ডিপার্টমেন্টে ল্যাব, প্রজেক্ট ও থিসিস আছে, তাদের এসব করার জন্যে কমপক্ষে আড়াই মাস সময় দিতে হবে।

৭. সেমিস্টার ফাইনালসমূহের আগে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ পিএল এর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৮. সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাগুলোর মাঝে ১ ক্রেডিটের পরীক্ষায় কমপক্ষে ১ দিন, ২ ক্রেডিটের পরীক্ষায় কমপক্ষে ২ দিন, ৩ ক্রেডিটের পরীক্ষায় কমপক্ষে ৩ দিন ও ৪ ক্রেডিটের পরীক্ষায় কমপক্ষে ৪ দিন বন্ধ, যা সাধারণ নিয়মেই আছে তা নিশ্চিত করতে হবে। করোনা পরিস্থিতি পরিবর্তন হলেও এই নিয়ম কোনোভাবেই পরিবর্তন করা যাবে না।

৯. চলতি সেমিস্টার ২০ জুনের মধ্যে শেষ করার অযৌক্তিক দাবি প্রত্যাহার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী এর সময়সীমা বাড়াতে হবে। পরিস্থিতি প্রতিকূলে থাকায় যদি পরবর্তী সেমিস্টারও অনলাইনে চালিয়ে যেতে হয়, তাহলে অবশ্যই দুই সেমিস্টারের মাঝখানে পর্যাপ্ত বিরতি দিতে হবে। পরবর্তী সেমিস্টার সম্পূর্নরূপে অনলাইনে সংঘটিত হলে রিভিউ ক্লাস বর্ধিত করে অন্তত দুই মাস করতে হবে।

১০. যদি অনলাইন কার্যক্রমের মাধ্যমে একের অধিক সেমিস্টার শেষ করা হয়, তাহলে সেমিস্টারের ক্রমানুসারে সেমিস্টার ফাইনাল নিতে হবে। এক্ষেত্রে ক্যাম্পাস খুললে এবং সরাসরি ক্লাস চালু হলে প্রথমে চলতি সেমিস্টারের রিভিউ ক্লাস, পরে চলতি সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা ও পর্যাপ্ত বিরতি দিয়ে পরবর্তী সেমিস্টারের রিভিউ ক্লাস ও পরবর্তী সেমিস্টারের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নিতে হবে।

১১. সকল অনলাইন ক্লাস সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে নিতে হবে। বিকেলের পর কোনো অনলাইন ক্লাস নেওয়া যাবে না।

১২. উদ্ভুত সামাজিক ও মানসিক পরিস্থিতির কারণে অথবা নেটওয়ার্কজনিত সমস্যায় কোনো শিক্ষার্থী যদি একান্তই ক্লাসে অংশগ্রহণে অপারগ হয়, তবে তাকে বাধ্য করা যাবে না এবং তার সঙ্গে সর্বোচ্চ সহযোগিতামূলক আচরণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরে শিক্ষক মহোদয় উক্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বিষয়ে প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ সাহায্য করবেন এবং রিভিউ ক্লাসসমূহ যেন তথ্যবহুল হয় তা নিশ্চিত করবেন।

 

এনএইচ/আরআর-০১