শামীম আহমদ, বালাগঞ্জ
জুন ০৬, ২০২০
০৫:৫৬ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ০৬, ২০২০
০৫:৫৬ অপরাহ্ন
সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে একই স্থানে গ্রামীণ, বাংলালিংক ও রবি-এয়ারটেলের টাওয়ার রয়েছে। কিন্তু টাওয়ার থাকলে কী হবে? এই টাওয়ারগুলোর মাত্র ২০০ ফুট দূরবর্তী বাড়িতেও মোবাইলের নেটওয়ার্ক নেই।
টাওয়ারের নিকটবর্তী একটি বাড়ির বাসিন্দা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কর্মকর্তা সাবেক সাংবাদিক মাছুম চৌধুরী ও আরেক বাড়ির বাসিন্দা ইউপি সদস্য আছাব মিয়া বলেন, আমরা সব কোম্পানির সিম ব্যবহার করে দেখেছি। কোনো সিমেরই শক্তিশালী নেটওয়ার্ক পাচ্ছি না। নেটভিত্তিক এ্যাপসগুলোতে ইনকামিং-আউটগোয়িং কলে বার বার লাইন কেটে যায়। এমন ভোগান্তি না সওয়া যায়, না বলা যায়।
একই ইউনিয়নের চান্দাইরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক এ এস রায়হান জানান, তাদের পুরো গ্রাম ও এলাকাজুড়ে নেটওয়ার্ক ভোগান্তি বিদ্যমান। তার বাড়িতে স্বাভাবিক নেটওয়ার্ক নেই। মোবাইলে ইনকামিং-আউটগোয়িং কল সম্ভব হয় না। নিরুপায় হয়ে বাড়তি টাকা ব্যয় করে তিনি বাড়িতে ওয়াইফাই সংযোগ নিয়েছেন।
বালাগঞ্জ ইউনিয়নের গৌরীনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক মো. কাজল মিয়া বলেন, আমার বাড়িতে এয়ারটেলের সিম বন্ধ দেখায় আর গ্রামীণ সিমে বার বার কল কেটে যায়। বাড়িতে বসে জরুরি তথ্য আদান-প্রদান করতে পারি না। এ বিষয়ে মোবাইল অপারেটরগুলোর কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের হটলাইন নম্বরে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছি। তারা শুধু আশ্বাস দিচ্ছেন, কিন্তু নেটের গতি বাড়াতে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না এটা রীতিমতো প্রতারণার শামিল।
নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে একই ইউনিয়নের দক্ষিণ রিফাতপুর গ্রামের এক বৃদ্ধার প্রবাসী ছেলে তার মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে না পারার কষ্টের কথাও জানা যায়। ওই বৃদ্ধার পক্ষে মোবাইল নিয়ে বাইরে গিয়ে নেটওয়ার্ক খুঁজে কথা বলাও সম্ভব নয়।
উপজেলার পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নের সারসপুর গ্রামের বাসিন্দা ছদরুল হাসান নবীন বলেন, নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে বার বার সিম পরিবর্তন করেছি। এর পরও নিরবচ্ছিন্নভাবে কথা বলতে পারি না।
উপজেলার দেওয়ান বাজার ইউনিয়নের গৃহবধূ শাহানারা বেগমের স্বামী প্রবাসে থাকেন। কাজের ফাঁকে অধিকাংশ সময় রাতে ফোন করেন ওই প্রবাসী। কিন্তু স্ত্রীর পক্ষে রাতে মোবাইল নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে কথা বলা সম্ভব হয় না। কল এলে লাইন কেটে যায়। এ জন্য বাড়িতে ফোন করতে অনীহা প্রকাশ করেন তার প্রবাসী স্বামী।
নেটওয়ার্কের এমন নাকাল দশায় আছেন বালাগঞ্জ উপজেলাবাসী। স্বচ্ছন্দে কথা বলতে না পারায় গ্রাহকদের আর্থিকভাবে লোকসান হচ্ছে। মোবাইল অপারেটরগুলো ফোর জি নেটওয়ার্ক চালু করার কথা বললেও স্বাভাবিক নেটওয়ার্কের সুবিধা থেকেই বঞ্চিত এ অঞ্চলের গ্রাহকরা। সর্বাধিক গ্রাহক দাবিদার গ্রামীণফোনেরও একই অবস্থা। এতে ডিজিটাল ভোগান্তিতে রয়েছেন এ অঞ্চলের মোবাইল গ্রাহকরা।
মোবাইল কোম্পানিগুলো উন্নত সেবা দেওয়ার নামে রীতিমতো প্রতারণা করছে বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন। মোবাইল কেম্পানিগুলোকে 'রক্তচোষা' আখ্যায়িত করে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুরো উপজেলায় শক্তিশালী নেটওয়ার্ক কাভারেজ নেই। ফোনে কথার বলার সময় ঘর থেকে বের হয়ে নেটওয়ার্কের কভারেজ নিশ্চিত করতে হয়। রাতের বেলায় ঘরের বাইরে যাওয়াও সম্ভব হয় না। যারা ফোনে ভালো করে কথা বলতে পারেন না, তাদের পক্ষে ইন্টারনেট ব্যবহার করা তো কল্পনা মাত্র। আত্মীয়-স্বজন, পরিবার ও প্রিয়জনদের কাছে কল দিলে কথা বুঝতে না পারার কারণে খুবই বিব্রত প্রবাসীরা। নেটওয়ার্কের গতি বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ কি নেওয়া হবে- মোবাইল অপারেটরগুলোর কাছে এ প্রশ্ন রাখছেন তারা।
এদিকে বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোনে টিউটোরিয়াল ক্লাস করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তিগত কোনো ডিভাইস ব্যবহার করতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মোবাইল অপারেটরগুলোর অফিসিয়াল তথ্য বাতায়ন ও ফেসবুক পেজে দেওয়া নম্বরগুলোতে (৪ জুন বেলা ২টার দিকে) একাধিকবার কল দিলেও কল রিসিভ করেনি কেউ।
এসএ/আরআর-০৭