সিলেটে চিকিৎসা না দিয়েই ৭৫ হাজার টাকা বিল

নিজস্ব প্রতিবেদক ও ওসমানীনগর প্রতিনিধি


জুন ০৬, ২০২০
১১:৫০ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ০৭, ২০২০
১২:৪১ পূর্বাহ্ন



সিলেটে চিকিৎসা না দিয়েই ৭৫ হাজার টাকা বিল

সিলেটে এক সংকটাপন্ন কিডনি রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা বলে হাসপাতালে ভর্তির দুদিনেও সেই রোগী কোন চিকিৎসা সেবা পাননি। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে চাইলে রোগীর স্বজনদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ৭৫ হাজার টাকার বিল। ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের আখালিয়া শাখায়। বিলের কপিতে দেখা যায় বিভিন্ন খাত দেখিয়ে বিল ধরা হয়েছে ৭৪ হাজার ৩৭৫ টাকা ৫০ পয়সা। 

গতকাল শনিবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় ওই রোগীর স্বজনরা তাকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের হাতে এই বিলটি ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজনরা।

জানা যায়, কিডনী রোগে আক্রান্ত ওসমানীনগরের ইলাশপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক ম্যানেজার গুলাব মিয়ার স্ত্রী নাসিমা আক্তার চৌধুরীকে গত বৃহস্পতিবার মাউন্ড এডোরায় ভর্তি করা হয়। রোগীর অবস্থা খারাপ জেনেও দুইদিনে কোন ডাক্তার এসে দেখেননি। উপায় না পেয়ে শনিবার (৬ জুন) সন্ধ্যার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে যখন ঢাকায় নিয়ে যাবার প্রস্তুতি চলছে তখনই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রায় ৭৫ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেয়। যা দেখে অবাক হন রোগীর আত্মীয়রা।

নাসিমা আক্তারের চৌধুরীর স্বামী অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা গুলাব বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার আমার স্ত্রীকে নিয়ে আসি মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে। তখন কর্তৃপক্ষ জানায় ভর্তি হলে কিডনী বিশেষজ্ঞ নজমুস সাকিব চিকিৎসা দিবেন। আমরাও রোগীকে ভর্তি করি। তবে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও চিকিৎসক আসেননি। এমন অবস্থায় আমরা রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। তখনই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৭৫ হাজার টাকার বিল দেয়।’

তিনি দাবি করেন, ‘রোগী একরাত সিসিইউ ও একরাত কেবিনে ছিলেন। ঔষুধও আমরা কিনে দিয়েছি।’

অথচ সেই বিলের কপিতে দেখা যায় শুধুমাত্র ঔষধের বিল বাবত ধরা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মিথ্যা বানোয়াট কথা বলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। পরে চিকিৎসা দেয়নি। 

তিনি ক্ষেভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কোন চিকিৎসা সেবা না দিয়ে একদিকে আমার রোগীর অবস্থারও অবনতি হলো অন্যদিকে এমন বিল ধরিয়ে দিল। এখন রোগীর কিছু হলে দায় কে নিবে? এখন আমরা বাধ্য হয়ে রোগীকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি।’

এ বিষয়ে গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিক বলেন, ‘রোগী নাসিমা আক্তার চৌধুরী আমার আত্নীয়। সিলেটে চিকিৎসা না পেয়ে অসহায় হয়ে রোগীকে নিয়ে শনিবার রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি।’ 

নাসিমা আক্তার চৌধুরীর মেয়ের জামাই কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেই এখানে আমার শাশুড়িকে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু গত দুইদিনে কোন ডাক্তার তো দেখেননি। শনিবার উনার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আমরা যখন উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এম্বুলেন্স ডাকলাম তখনই কর্তৃপক্ষ হাতে বিল ধরিয়ে দেন প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। এখানে শুধু কয়েকটি টেস্ট করা হয়েছে। পরে আরেক ডাক্তারকে জিম্মায় রেখে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা দিয়ে রোগী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি।

এ বিষয়ে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের অফিসিয়াল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে কেউ কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ইউডি/এনসি/বিএ-০৩