এক সিএনজিতে পাঁচ যাত্রী, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ০৭, ২০২০
১০:০১ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ০৮, ২০২০
১১:০৮ পূর্বাহ্ন



এক সিএনজিতে পাঁচ যাত্রী, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

সিলেট নগরের বিভিন্ন রুটে একেকটি গ্যাসচালিত সিএনজি অটোরিকশাতে পাঁচজন করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। ঘেঁষাঘেঁষি করে চালকসহ ছয়জন বসার কারণে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মূলত উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। যেখানে সিলেট জুড়ে প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হচ্ছেন, সেখানে এ বিষয়টি চরম ঝুঁকি তৈরি করছে। প্রকাশ্যে স্বাস্থ্যবিধি না-মানার এমন ঘটনা দেদারসে ঘটলেও স্থানীয় প্রশাসন এ নিয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন নাগরিকেরা।

গতকাল রবিবার দিনভর সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের বন্দরবাজার-আম্বরখানা, বন্দরবাজার-কুমারগাঁও, বন্দরবাজার-মেডিকেল, সুরমামার্কেট-কদমতলী, আম্বরখানা-মদিনামার্কেট-কুমারগাঁও, আম্বরখানা-টিলাগড়, আম্বরখানা-বিমানবন্দর, বন্দরবাজার-মেজরটিলা-শাহপরান, ধোপাদিঘিরপার-কদমতলী, কিনব্রিজ-কাাজিরবাজারসহ বিভিন্ন রুটে হাজারো যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে। এসব সিএনজির পেছনে তিনটি আসন এবং চালকের দুই পাশে দুটি আসন রয়েছে। মোট পাঁচজন যাত্রী নিয়ে চালকেরা চলাচল করছেন। যাত্রী ও চালকের অধিকাংশের মুখেই মাস্ক নেই।

একাধিক যাত্রীর অভিযোগ, একটি সিএনজি অটোরিকশাতে ঠেসাঠেসি করে একাধিক যাত্রীকে বসতে হচ্ছে। সীমিতসংখ্যক যাত্রী পরিবহনের অনুরোধ জানালেও চালকেরা তা শুনছেন না। তাই বিকল্প কোনো উপায় না থাকায় চালকদের কাছে অনেকটা জিম্মি হয়েই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত থাকার বিষয়টি জেনেও একই সিএনজি অটোরিকশায় চলাচল করতে হচ্ছে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের জন্য সিএনজি রিজার্ভ করে চলাচল করতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু এতে প্রচুর টাকা খরচ হবে বলেই কেউ এমন সিদ্ধান্তও নিতে পারছেন না।

আম্বরখানা-টিলাগড় রুটের যাত্রী ফাহাদ আহমদ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘সিএনজিতে যাত্রীদের মধ্যে একমাত্র আমার মুখেই মাস্ক পরা আছে। অন্য যাত্রী কিংবা চালক কারো মুখেই মাস্ক নেই। এখন উপায় না দেখেই এখানে বসে পরিবহন করতে হবে। এই যে আমি ছাড়া অন্য কারো মাস্ক নেই, এতে তো আমার মাস্ক থেকেও কোনো লাভ নেই। এখানে যাত্রীদের কেউ যদি নিজের অজান্তেই করোনা আক্রান্ত থাকেন এবং তিনি যদি হাঁচি-কাশি দেন, তাহলে তো আমারও আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থেকে যায়। সবাই মিলে যদি স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম মেনে না চলি, তাহলে তো কোনোভাবেই করোনা এড়ানো সম্ভব হবে না।’

কয়েকজন সিএনজি চালক জানিয়েছেন, অনেক চালকই মাস্ক পরে যাত্রী পরিবহন করে থাকেন। অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। আর এক সিএনজি অটোরিকশাতে পাঁচজন করে যাত্রী পরিবহন না করলেও তাঁদের যথাযথ আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন। দুজন সচেতন যাত্রী জানিয়েছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চালক ও যাত্রীরা মাস্ক পরছেন না। এছাড়া সিএনজি অটোরিকশার ভেতরে ঠাসাঠাসি করে বসার কারণে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। পারভেজ হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে প্রয়োজনের কারণেই আমাকে মেজরটিলা এলাকা থেকে বন্দরবাজার এলাকায় নিয়মিত আসতে হচ্ছে। কিন্তু যেভাবে শরীর ঘেঁষাঘেঁষি করে সিএনজিতে বসে আসতে হয়, এতে ভয় আর আতঙ্ক তৈরি হয়। তাই সারাটা রাস্তা ভয়ে ভয়ে আসি। কার শরীরে যে করোনা বাস করছে, সেটা তো এখন আমরা অনেকেই জানি না। তাই কেউ সিএনজিতে বসে মাস্কবিহীন হাঁচি-কাশি দিলেই আতকে উঠি।’

নগরের সচেতন বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সিএনজি অটোরিকশাতে মাস্কবিহীন চলাচল করাটা একেবারেই অনুচিত। আর এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করতে পারে। মাস্ক নিয়ে চলাচল বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি একটি সিএনজি অটোরিকশার পেছনে তিন আসনে দুজন পরিবহন করার নির্দেশনা দিতে পারে। অন্যদিকে চালকের আসনের ডান ও বামে কোনো যাত্রী পরিবহন না-করতে আহ্বান জানাতে পারে। এইক্ষেত্রে প্রয়োজনে নির্দিষ্ট গন্তব্য অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত কিছু ভাড়া বাড়ানো যেতে পারে। এতে চালক এবং যাত্রী উভয় পক্ষের জন্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে।

এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. আজবাহার আলী শেখ সিলেট মিররকে বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে আমরা পরিবহন সমিতিগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন যাত্রী নেওয়া হয়, সেদিকে আমরা খেয়াল রাখছি। প্রতিটি চেকপোস্টেও বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। গাদাগাদি করে যাত্রী বসা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের অর্থদণ্ডও দেওয়া হচ্ছে।’

এএন/বিএ-০১