শাবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি

শাবি প্রতিনিধি


জুন ১৬, ২০২০
০৬:২১ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ১৬, ২০২০
০৬:২১ অপরাহ্ন



শাবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা নাসিমকে নিয়ে 'কটুক্তি' করে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহির চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই মামলাকে হয়রানিমূলক ও অযৌক্তিক দাবি করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, শাবিপ্রবি শাখা।

আজ মঙ্গলবার (১৬ জুন) দুপুরে সংগঠন থেকে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ আহ্বান জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর গত ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহির চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাসের জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেই স্ট্যাটাসকে ‘ঘৃণাপূর্ণ স্ট্যাটাস’ ও ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মানহানিকর’ দাবি করে জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মার উল্লাস বেড়ে গেছে বলে দাবি করেন। মাহিরকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানান তারা। কেউ কেউ ‘করোনার জন্য এরা এত লাফাচ্ছে’, বলে কিছু করতে পারছেন না আক্ষেপ ব্যক্ত করে হুমকিও প্রদান করেন। এরপর ওই শিক্ষার্থী ভুল হয়েছে বলে স্ট্যাটাসটি মুছে ফেলেন এবং লাইভে এসে সকলের কাছে ক্ষমা চান। এর পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন মামলা করবেন বলে জানান।

আমরা মনে করি, সকলের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। ভিন্নমতের বিরুদ্ধে আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমেই সবার কাছে মতের বৈপরীত্য স্পষ্ট করে তুলে ধরতে হয়। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর স্ট্যাটাসেরর কোথায় ভুল সেটা ঠিকমতো তুলে না ধরে আলোচনা করার সুযোগ না দিয়ে তাকে একপ্রকার হুমকি দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে। কিন্তু আমরা বিস্মিত হয়ে দেখলাম, এসব হুমকির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে, ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে, তার পাশে না দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উল্টো সমালোচিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ এ উক্ত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার দাবি করেছেন যারা মাহিরের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছে, অভিযোগ করেছে, তাদের কথায় প্রশাসন মামলা করেছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'মাহির একজন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়েছে যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুন্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুন্ন হওয়া মানে রাষ্ট্রের মানহানি হওয়া। আর এই ছেলের বিরুদ্ধে আরও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সে কিছুদিন আগে অনলাইন ক্লাস বর্জনের আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছে।'

প্রশাসনের ব্যক্তিদের উপরোক্ত বক্তব্যগুলোর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়, বৈষম্যমূলক অনলাইন ক্লাস বর্জনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার পর থেকেই অনেক আন্দোলনকারীর মতো ওই শিক্ষার্থীর উপরও তারা ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ কারণে একটি সাধারণ স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে কিছু ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর বক্তব্য, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুন্ন হওয়া’র আশ্চর্য অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছেন। অনলাইন ক্লাস বা মেস ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে, দাবি করছে, তার কোনো সঠিক সমাধান না করে এ ধরণের পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে যেভাবেই হোক ‘এই আন্দোলনকারীদের শায়েস্তা করতে হবে’ এমন একটি মনোভাব কাজ করছে প্রশাসনের। গতবছরও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ‘অনুমতি ছাড়া মানববন্ধন করা যাবে না’ বলে মানববন্ধন বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। আমরা মনে করি, সেসময় অযাচিত হুমকি প্রয়োগ বন্ধ করার পক্ষে প্রশাসন যে সম্মতি দিয়েছিল, তার একদম বিপরীত পথে তারা চলছে। আরও আগ্রাসী হয়ে শিক্ষার্থীদের সকল প্রকার আলোচনা-সমালোচনা বন্ধ করে একটা দমবদ্ধ ক্যাম্পাস তৈরি করার চেষ্টা করছে, যেখানে কোনো সমস্যা নিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। যেখানে শুধু চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। যেখানে সমস্যা নিয়ে আত্মহত্যা করা যাবে, কিন্তু ‘টু’ শব্দটিও করা যাবে না। পরিস্থিতি ও কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, শাবি প্রশাসন এমনই একটা ক্যাম্পাস চাইছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আহ্বান জানানো হয়েছে, অবিলম্বে শাবি প্রশাসন যেন মাহিরের বিরুদ্ধে করা অযৌক্তিক মামলাটি তুলে নেয় এবং তাকে হয়রানি করার প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকে। একই সঙ্গে বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন এই মামলার বিরুদ্ধে দাঁড়ায় এবং মুক্ত ক্যাম্পাস নির্মাণের লক্ষ্যে অগণতান্ত্রিক ও অসহনশীল ক্যাম্পাস সৃষ্টির যেকোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে রুখে দাঁড়ায়।

 

এনএইচ/আরআর-১৬