কবির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ
জুলাই ০৫, ২০২০
০৬:১০ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ০৫, ২০২০
০৬:২৬ পূর্বাহ্ন
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার 'ধলাই সেতু' সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম সেতু। খনিজ সম্পদে ভরপুর 'পাথরের রাজ্য' নামে পরিচিত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভারত সীমান্ত ঘেঁষা তিনটি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের উপজেলা ও জেলা শহরের সঙ্গে বন্ধন রচনা করেছে ধলাই সেতু। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য অবলোকন ও উৎমা ছড়া পর্যটন স্পটে যাতায়াতের একমাত্র পথ এটি।
ধলাই নদীর উপর নির্মিত সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম এই সেতু ঝুঁকির মুখে পড়েছে। সেতুর মধ্যবর্তী একটি অংশের ঢালাই খসে পড়ে রড বেরিয়ে পড়েছে। উভয়দিকের কয়েকটি স্থানে রেলিং ভেঙে গেছে। দুই পাশের অ্যাপ্রোচ সড়কও ভেঙে পড়ছে। আর এর উপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রকৌশল বিভাগ সেতুর এ অবস্থার জন্য পাথরবাহী ট্রাক চলাচলকে দায়ী করেছে। তবে স্থানীয় লোকজন জানান, উদ্বোধনের পর থেকে সেতুটি যথাযথভাবে দেখভাল করেননি সংশ্লিষ্টরা। সেতুটির মালিকানা নিয়ে সওজ-এলজিইডি'র রশি টানাটানিতে দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি সেতু।
সওজ সূত্র জানায়, ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির পাশের ধলাই নদের উভয় তীরের মানুষের যাতায়াতের জন্য ২০০৩ সালে সেতুটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১২ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রায় ৪৩৪.৩৫ মিটার দীর্ঘ ও ৯.৫ মিটার প্রস্থের সেতুটি সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম। টানা তিন বছর কাজ চলার পর সেতুটি ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেতুর স্থায়িত্ব ধরা হয় ৭৫ বছর। ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান সেতুটির উদ্বোধন করেন। সেতুটি প্রকল্পে 'ধলাই সেতু' নামে উল্লেখ থাকলেও উদ্বোধনকালে নামকরণ করা হয় 'এম সাইফুর রহমান সেতু'। পরে সেতুর কর্তৃত্ব এলজিইডি'র কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সেতু নির্মিত হওয়ায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দুই ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ সরাসরি সড়ক যোগাযোগের আওতায় আসেন। পাশাপাশি দেশের সর্ববৃহৎ ভোলাগঞ্জ কোয়ারি থেকে পাথর পরিবহন সহজতর হয়।
এদিকে, ২০১৪ সালে ধলাই সেতুর বিভিন্ন ত্রুটি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সেতুটি পরিদর্শন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেতুর ঝুঁকিপূর্ণ দিক খতিয়ে দেখে ঝুঁকি কাটাতে অচিরেই ত্রুটি সারানোর কাজ শুরু করার নির্দেশ প্রদান করেন। এরপর সওজের উদ্যোগে ধলাই সেতুর ত্রুটি সারানোর প্রায় ৭ বছর অতিবাহিত হলেও সেতুটি আর মেরামত হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর মধ্যবর্তী একটি স্থানের ঢালাই ভেঙে গিয়ে রড বেরিয়ে পড়েছে। উভয়দিকের কয়েকটি স্থানের রেলিং ভেঙে গেছে। বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোও হেলে পড়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় দুইপাশের অ্যাপ্রোচ সড়ক ভেঙে পড়েছে। অ্যাপ্রোচ সড়কের মাটি সরে গিয়ে ঢালাই ভেঙে খালে পরিণত হয়েছে।
ধলাই নদে পাহাড়ি ঢলের পানি নেমেছে প্রায় এক সপ্তাহ হলো। ঢল নামার পর পরই সেতুর পূর্বপাশের অ্যাপ্রোচ সড়কের নিচের কিছু ব্লক সরে যেতে দেখা গেছে। পাথরবাহী ট্রাক-ট্রাক্টর সেতু দিয়ে চলাচল করলে সেতুর মধ্যবর্তী অংশ থরথর করে কাঁপে। সেতুর এই ভগ্নদশার কারণে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বাবুল মিয়া জানান, উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের অর্ধলক্ষ মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছে এই ধলাই সেতু। এই সেতু দিয়েই পূর্ব ও উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। পাশাপাশি ধলাই নদের পূর্বপাড়ের ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রেখেছে এই সেতু। তিনি দ্রুত সেতুটি সারিয়ে তোলার দাবি জানান।
উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মো. আলাউদ্দিন জানান, ভারী যানবাহন চলাচল করায় দিন দিন সেতুটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। এই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। বর্তমানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ ও গাড়ি পারাপার হচ্ছে।
ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন জানান, শিগগিরই সেতুর মেরামত কাজ না হলে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এ ব্যাপারে তিনি স্থানীয় সাংসদ ইমরান আহমদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল আলীম জানান, কলাবাড়ী টু চরার বাজার রাস্তা ও ধলাই সেতু দীর্ঘদিন যাবত সংস্কার না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে অর্ধলক্ষ মানুষকে। ধলাই সেতুসহ রাস্তা দীর্ঘদিন যাবত মেরামত না হওয়ায় চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও বিপাকে রয়েছেন এই এলাকার জনসাধারণ। এই পরিস্থিতিতে সেতু রক্ষায় প্রশাসনের কাছে জোর আকুতি জানাচ্ছেন কোম্পানীগঞ্জবাসী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য জানান, এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। নির্বাহী প্রকৌশলী গত বৃহস্পতিবার সেতুটি পরিদর্শন করেছেন।
সওজ'র নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া জানান, ওই সেতু দিয়ে পাথরবাহী ভারী যানবাহন চলাচল করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সেতুর ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে যানচলাচল ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও তারা আপাতত সেখানে স্টিল ডেক বসিয়ে দেবেন।
তিনি আরও জানান, যেকোনো সেতুর মূলত বামপাশে ভাঙে। এ সেতুটিরও বামপাশ ভেঙেছে। সেতুর পিলার ঘেঁষে অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে আজ হুমকির মুখে পড়েছে ধলাই সেতু।
আরসি-০১