সমালোচিত ওসি'র বদলিতে ওসমানীনগরে স্বস্তি

উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর


জুলাই ১৩, ২০২০
১১:১৪ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১৩, ২০২০
১১:১৫ অপরাহ্ন



সমালোচিত ওসি'র বদলিতে ওসমানীনগরে স্বস্তি

মোহাম্মদ রাশেদ মোবারক

অবশেষে বদলি হলেন সিলেটের ওসমানীনগর থানার আলোচিত-সমালোচিত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাশেদ মোবারক। আজ সোমবার (১৩ জুলাই) তাকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে বদলি করা হয়েছে।

এদিকে ওসির বদলির খবরে ওসমানীনগরের অনেকে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে তাদের পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

নানা কাজে সমালোচিত ছিলেন ওসমানীনগর থানার ওসি মোহাম্মদ রাশেদ মোবারক। গতবছরের ২৮ অক্টোবর ওসমানীনগর থানায় যোগদানের পর পরই এলাকার আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে তার গৃহিত কয়েকটি উদ্যোগ সর্বত্র গ্রহণযোগ্যতা পেলেও পরবর্তীতে তিনি জড়িয়ে পড়েন নানা বিতর্কে।   

জানা গেছে, করোনাকালীন লকডাউন চলাকালে তার হয়রানির শিকার হন উপজেলার একাধিক মানুষ। সিলেটের প্রবেশদ্বার শেরপুর টোলপ্লাজায় চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় ও চালকদের মারধরের বিষয়টি সর্বাধিক আলোচিত হয়। ওইসময় এক চালকের হাত বেঁধে অতিরিক্ত মারধর করলে টোলপ্লাজায় চাকরিরত দুই শ্রমিক চালকের হয়ে ওসির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এতে ওসি ক্ষিপ্ত হয়ে টোলপ্লাজায় কর্মরত উক্ত দুই শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করবেন বলে শাসিয়ে যান। পরবর্তীতে ওই দুই শ্রমিক লকডাউন চলাকালে চাকরি হারিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সাদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রব ওই সময় বলেছিলেন, 'আমি উক্ত দুই শ্রমিকের জন্য ওসির সঙ্গে বলেছি। কিন্তু তিনি আমায় সামান্য মূল্যায়নও করেননি। উল্টো ওসি বলেছিলেন, ওই শ্রমিকদের পুনরায় চাকরিতে বহাল করতে হলে আগে তাকে (ওসিকে) বদলি করাতে হবে। আমরা স্থানীয়ভাবে উক্ত শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তা প্রদান করছি।'

এদিকে গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির ছেলে লকডাউনে পুলিশি হয়ারানির দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করায় তাকে গুজব রটনাকারী সাজিয়ে কোর্টে চালান করা হয়েছিল। উপজেলার হাট-বাজারে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হলেও ওসি সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে লকডাউন চলাকালে অনেককে গোপনে এলাকায় আসতে সহায়তা করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলার সিকন্দরপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, মধ্য এপ্রিলে লকডাউন চলাকালীন সময়ে ওসির সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জ থেকে এক নারী গোপনে সিকন্দরপুর গ্রামে এলে গ্রামবাসী এর প্রতিবাদ করেন। বিষয়টি জানাজানির পর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন ইউএনও'র হস্তক্ষেপে ওই নারীকে রাতের আঁধারে অন্যত্র সরিয়ে নিলেও বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রতিবাদী লোকজনকে থানায় নিয়ে যাওয়ায় হুমকি প্রদান করেন ওসি রাশেদ মোবারক।

গত ১৮ জুন উপজেলার উমরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদ পরিবারের সদস্য দবির মিয়া, উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল আহমদ এবং উমরপুর ইউনিয়নের সালিশ ব্যক্তিত্ব সাবেক ইউপি সদস্য তখলিছ আলী, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি সদস্য চেরাগ আলীর মুঠোফোনে হুশিয়ারি বার্তা দেন ওসি মোহাম্মদ রাশেদ মোবারক।

ওইসময় থানার অফিসিয়াল মুঠোফোন থেকে ওসি বলেন, 'নারায়ণগঞ্জের এমপি শামিম ওসমানেরও টাইম ছিল না আমার হাতে। বানিয়াচং থাকাকালীন আব্দুল মজিদ খাঁনকে তো পাত্তাই দেইনি। আর এখানকার কোনো নেতা তো আমার চোখেই পড়ে না। এগো টাইম নাই আমার কাছে। কথা না শুনলে রশি দিয়ে বেঁধে একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে টেনে নিয়ে আসব।'

এ বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওসির বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করে প্রকাশ্যে আন্দোলনে নামার হুমকি প্রদান করেন। গত ২০ জুন দুপুরে ভুক্তভোগীরাসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতারা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (ওসমানীনগর সার্কেল) সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম তাদের এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট প্রতিবেদন প্রেরণের আশ্বাস প্রদান করেন।

এছাড়া গত ২৪ জুন উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক (ভার্চুয়াল) সভায় ওসির কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়  নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করার আহ্বান জানান কমিটির একাধিক সদস্য।

 

ইউডি/আরআর-১৮