রিট খারিজ, মেয়র হিসেবে ইশরাককে শপথ পড়াতে বাধা নেই

সিলেট মিরর ডেস্ক


মে ২২, ২০২৫
০১:৫২ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ২২, ২০২৫
০১:৫২ অপরাহ্ন



রিট খারিজ, মেয়র হিসেবে ইশরাককে শপথ পড়াতে বাধা নেই


বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে যে রিট আবেদন করা হয়েছিল, তা খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। 

আজ বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এর ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। তবে এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করার কথা জানিয়েছেন রিটকারী পক্ষের আইনজীবী।

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জহিরুল ইসলাম মুসা। ইশরাকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আইনজীবী কায়সার কামাল। তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম এহসানুর রহমান।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান ও খান জিয়াউর রহমান।

ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে বসানোর আন্দোলনের মধ্যে গত ১৪ মে হাইকোর্টে এই রিট করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ। রিটে ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণার গেজেট স্থগিত চাওয়ার পাশাপাশি তাকে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও চাওয়া হয় রিটে।

গত ২০ ও ২১ মে রিটে শুনানির পর আদালত আদেশের জন্য রাখেন। সেই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার আদেশ দিলেন সর্বোচ্চ আদালত। 

আদেশর পর ইশরাকের আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্টের মাধ্যমে একটি মহল শপথ বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করেছিল। সেটি ব্যর্থ হয়েছে। এখন যদি শপথ না দেওয়া হয়, সেটি আদালত অবমাননা হবে।

আমরা আশা করছি, সরকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় এবং হাইকোর্টের আদেশের প্রতি আস্থা রেখে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইশরাক হোসেনের শপথের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, ‘জনস্বার্থের নামে যে রিট আবেদনটি করা হয়েছে, মূলত তা ছিল দলীয় এবং ব্যক্তি স্বার্থে রিট আবেদন। মানে একটি রাজনৈতিক স্বার্থের রিট আবেদন। আমরা যদি গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতা দেখি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাইকোর্টে মামলা বিচারাধীন থাকার কারণে শপথ নিতে দিচ্ছেন না। আজকে এটা প্রমাণিত হয়েছে, আইনি প্রক্রিয়ায় ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়াতে আর কোনো বাধা থাকলো না। এখন যদি তারা (মন্ত্রণালয়) শপথ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করেন, তবে তা আদালত অবমাননার সামিল হবে।’

অপরদিকে রিটকারী পক্ষের আইনজীবী জহিরুল ইসলাম মুসা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বুধবার আদালত অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছিলেন যে, সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য রুল এবং সেই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য স্টেটাসকো (স্থিতাবস্থা) দিতে। তখন ইশরাকের আইনজীবীরা এক ধরনের চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছেন। আদেশের আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ডেকে হাইকোর্ট একথা বলেছেন। একটি বাজে এবং ভীতি সঞ্চারের মতো অবস্থা তৈরি করা হয়। ইশরাকের পক্ষের আইনজীবীদের থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, এই মামলায় যদি রুল দেওয়া হয় তাহলে কোর্টে আর বসতে দিব না। আদালত আদেশের আগে এই বিষয়টির অবতারণা করে পরে আদেশ দিয়েছেন।’

কী যুক্তিতে রিটটি খারিজ করা হয়েছে, জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, ‘শুধুমাত্র লোকাস স্ট্যন্ডাই (এখতিয়ার) গ্রাউন্ডে (যুক্তিতে) খারিজ করে দিয়েছেন। আমরা ইতিমধ্যে আমাদের ক্লায়েন্টের (মক্কেলের) সঙ্গে কথা বলেছি। তার নির্দেশনা হচ্ছে, আমরা এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করব। যেহেতু আপিল করা হবে, তাই বিষয়টি আবার বিচারাধীন বিষয় হয়ে যাবে। যে কারণে ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর আইনগত কোনো সুযোগ থাকবে না।’

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচন হয়। বিএনপির ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হন। গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম। 

ট্রাইব্যুনালের রায়ের অনুলিপি পেয়ে গত ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় সাংবিধানিক সংস্থাটি। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন-ইসি। এরপরও ইশরাককে শপথ না পড়ানো এবং পদে বসতে না দেওয়ায় ১৫ মে সকাল থেকে আন্দোলনে নামে ইশরাক সমর্থকরা। সে আন্দোলন এখনো চলছে। ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য।



এএফ/০৩