বিশ্বনাথে নববধূ নিখোঁজ : সরকারি কর্মচারীসহ গ্রেপ্তার ২

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি


জুলাই ২১, ২০২০
১২:৫৯ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২১, ২০২০
১২:৫৯ অপরাহ্ন



বিশ্বনাথে নববধূ নিখোঁজ : সরকারি কর্মচারীসহ গ্রেপ্তার ২

নিখোঁজ কোহিনুর আক্তার আশা (বাঁয়ে), গ্রেপ্তার আলমগীর ও রুজিনা আক্তার (ডানে)।

সিলেটের বিশ্বনাথে পিতার বাসা থেকে কোহিনুর আক্তার আশা (২১) নামের এক নববধূ ১৩ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। গত ৯ জুলাই সকালে তিনি নিখোঁজ হন। আজ মঙ্গলবার (২১ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় সরকারি কর্মচারীসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিখোঁজ কোহিনুর আক্তার আশা বিশ্বনাথ উপজেলা সমাজসেবা অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী রমজান মিয়ার মেয়ে। তাকে উদ্ধার করতে নিখোঁজের পরিবারের কাছে উপজেলা সমবায় অফিসের সাবেক কর্মচারী (এমএলএস) রুজিনা আক্তার কর্তৃক টাকা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর থেকে রুজিনা আক্তারের ভূমিকা রহস্যজনক বলে মনে করছে নিখোঁজ কোহিনুরের পরিবার। বর্তমানে রুজিনা আক্তার সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলা সমবায় অফিসে কর্মরত রয়েছেন। কোহিনুর নিখোঁজের ঘটনার পরদিন ১০ জুলাই বিশ্বনাথ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন রমজান আলী।

এদিকে, গতকাল সোমবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যায় বিশ্বনাথ থানার পুলিশ সরকারি কর্মচারী রুজিনা আক্তার ও তার ভাই আলমগীরকে গ্রেপ্তার করেছে। সোমবার রাতে নিখোঁজ কোহিনুর আক্তার আশার পিতা বাদী হয়ে রুজিনা আক্তার ও তার ভাই আলমগীরকে আসামি করে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার পানিশ্বর গ্রামের বাসিন্দা রমজান মিয়া দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বনাথ উপজেলা সমাজসেবা অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত আছেন। সে সুবাদে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তিনি উপজেলা সদরের জানাইয়া রোডস্থ তেরাবুন ভিলায় ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করছেন। প্রায় ৫ বছর পূর্বে আত্মীয় ওমান প্রবাসী আলমগীর হোসেনের সঙ্গে তার বড় মেয়ে কোহিনুর আক্তার আশার বিয়ে (এনগেজমেন্ট) ঠিক করা হয়। গত ৫ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নিজ বাড়িতে কোহিনুর আক্তার আশা ও আলমগীর হোসেনের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর স্বামী আলমগীরকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো গত ১৯ জুন বিশ্বনাথে পিতার বাসায় আসেন কোহিনুর। এরপর গত ৯ জুলাই সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ করে বাসা থেকে নিখোঁজ হন তিনি। তখন বাসার আশপাশ ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে মেয়ে কোহিনুরের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় পরদিন ১০ জুলাই বিশ্বনাথ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন রমজান আলী।

কোহিনুর আক্তার আশার পিতা রমজান আলী ও মা সুচনা আক্তার রুবীর অভিযোগ, তাদের এলাকার মেয়ে রুজিনা আক্তার বিশ্বনাথ উপজেলা সমবায় অফিসে এমএলএসএস পদে কর্মরত থাকার সুবাদে তার সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। রুজিনা বর্তমানে ছাতক উপজেলায় কর্মরত থাকলেও তিনি বিশ্বনাথে বসবাস করেন। কোহিনুর নিখোঁজের একদিন পর ১১ জুলাই সকালে তাদের বাসায় আসেন রুজিনা। এ সময় কোহিনুর বিশ্বনাথেই রয়েছে বলে জানান রুজিনা। তাই কোহিনুরকে উদ্ধারের জন্য রুজিনা সিলেটে তার পরিচিত জয় নামের একজনের সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দেন এবং তার এই পরামর্শেই কোহিনুরের পিতা ও মামা রোজিনার সঙ্গে সিলেট শহরে গিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে জয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তখন কোহিনুরকে উদ্ধার করতে খরচপাতির কথা বলে কোহিনুরের পরিবারের কাছ থেকে ১৩ হাজার টাকা নেন রুজিনা। কথা ছিল তিনদিনের মধ্যে কোহিনুরকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার। কিন্তু তিনদিন পর কোহিনুরের পরিবারকে রুজিনা জানান, জয় একমাসের জন্য কোথাও চলে গেছে। তাই তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। তাই কোহিনুরকে উদ্ধার করতে হলে র‌্যাবের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ৫ লাখ টাকা। একপর্যায়ে কোহিনুরের পরিবারকে আড়াই লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেন রুজিনা। কিন্তু এতে অপারগতা প্রকাশ করে কোহিনুরের পরিবার। তাদের ধারণা, কোহিনুর নিখোঁজ হওয়ার পেছনে রুজিনার হাত রয়েছে।

কোহিনুরের পিতা রমজান আলী আরও অভিযোগ করেন, গত ৪ জুন কোহিনুরের গায়ে হলুদের দিন একটি অজ্ঞাতনামা মোবাইল নম্বর থেকে একাধিকবার কল আসে রমজান আলীর মোবাইলে। তখন অজ্ঞাতনামা একজন কোহিনুরকে বিয়ে না দেওয়ার কথা বলে হুমকি দেয়। কোহিনুর নিখোঁজের পর থেকেও একাধিক নম্বর থেকে অজ্ঞাতনামা লোক ফোন ও ম্যাসেজ দিয়ে আসছে। মেয়েকে উদ্ধারের জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম মুসা বলেন, উদ্ধারের নামে টাকা চাওয়ার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় রোজিনা আক্তার ও তার ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিখোঁজ মেয়েটির সন্ধানে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

 

এমএ/আরআর-০৭