জৈন্তাপুরে খেলার মাঠে 'অবৈধ' পশুর হাট

মো. রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর


জুলাই ২৪, ২০২০
০৬:৪১ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২৪, ২০২০
০৬:৪১ অপরাহ্ন



জৈন্তাপুরে খেলার মাঠে 'অবৈধ' পশুর হাট

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা সদরের একমাত্র ঐতিহাসিক রাজবাড়ির খেলার মাঠ থেকে অবৈধ পশুর হাট অপসারণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাসহ এলাকার সচেতন মহল। তাদের অভিযোগ, গত তিন মাস ধরে অবৈধভাবে খেলার মাঠ দখল করে অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করে ইজারাদার আবু বক্কর সিদ্দিক ও তার দলবল অবৈধ পশুর হাট চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারুক আহমদকে একাধিক বার অবগত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ নিয়ে স্থানীয় জনতা ও ক্রীড়ামোদী সচেতন মহলের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, রাজবাড়ি খেলার মাঠ সংলগ্ন এলাকাটি জনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা। অন্তত শতাধিক পরিবার তাদের এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। এখানে সরকারি দাখিল মাদরাসা, মসজিদ, বেসরকারি প্রাইমারি স্কুল এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার রয়েছে। সারাদেশের মতো করোনাভাইরাসজনিত রোগের কারণে জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন বিগত এপ্রিল মাসে উপজেলা সদরের সাপ্তাহিক হাট-বাজার সাময়িকভাবে রাজবড়ি খেলার মাঠে স্থানান্তরিত করে শুধুমাত্র শাক-সবজি ও মাছ ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য। অন্তত দেড় মাস এখানে সাপ্তাহিক হাট-বাজার চলে। পরবর্তীতে হাট-বাজার নিয়মিত সরকারি জায়গায় ফের স্থানান্তর করা হয়।

এই সুযোগে হাট-বাজারের ইজারাদার আবু বক্কর সিদ্দিক তার দলবল নিয়ে গত মে মাস থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত প্রায় তিন মাস যাবৎ জৈন্তাপুর রাজবাড়ির খেলার মাঠে নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক পশুর-হাট বসিয়ে তা ব্যবহার করে আসছেন। মাঠের একপাশে অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করে পশুর হাট পরিচালনা করছেন তিনি। প্রতি রবিবার ও বুধবার হাট-বাজারের দিনে রাজবাড়ি আবাসিক এলাকার ছোট রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন রকমের যানবাহন চলাচল করার ফলে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে অনেকটা ভাঙন ও গর্ত দেখা দিয়েছে। মাঠের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণকে যাতায়াতে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাগণ এবং ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগনের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, গত বুধবার দুপুর ১২টায় স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আলা উদ্দিন হঠাৎ করে নিজ বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় পরিবারের লোকজন জরুরি ভিত্তিতে এম্বুলেন্স নিয়ে এলে মাঠের রাস্তা দখল করে পশুর হাট পরিচালনা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করায় গাড়ি প্রবেশ করতে পারেনি। বাড়িতে পুরুষ মানুষ না থাকায় অন্তত দেড় ঘন্টা সময় অপেক্ষার পর এলাকার কয়েকজন যুবক কাঁধে করে অসুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলা উদ্দিনকে এম্বুলেন্সে তোলেন। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাগণ এবং এলাকার সচেতন মহলের মধ্যে নানা ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। খেলার মাঠে পশুর হাট বসাকে কেন্দ্র করে ইজারাদার এবং স্থানীয় যুব সমাজের মাঝে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই মাঠটি উপজেলা সদরের একমাত্র খেলার মাঠ হওয়ায় স্থানীয় যুব সমাজ, ছাত্র সমাজ এবং এলাকার ছোট-বড় ছেলে-মেয়েরা প্রতিদিন বিকেল বেলা এখানে ফুটবলসহ নানারকম খেলাধুলা করে থাকে। জৈন্তাপুর রাজবাড়ি খেলার মাঠে নিয়মিত পশুর হাট পরিচালিত হওয়ায় বৃষ্টিপাতের মাঝে মাঠে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় ও কাদাযুক্ত হয়ে পড়ে। গরু চলাচল করায় মাঠের পশ্চিম পাশের রাস্তায় ভাঙন দেখা দেয়। এ অবস্থায় জৈন্তাপুর রাজবাড়ি খেলার মাঠের এই পশুর হাট বন্ধ করতে এলাকার সচেতন মহল দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সমাজসেবী ফরিদ উদ্দিন আহমদ ও হাসিনুল হক হুসনু জানান, স্থানীয়দের চলাচলের কথা বিবেচনা করে জরুরি ভিত্তিতে জৈন্তাপুর রাজবাড়ি খেলার মাঠ থেকে অবৈধ পশুর হাট বন্ধ করা প্রয়োজন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে জৈন্তাপুর রাজবাড়ি খেলার মাঠে পশুর হাট বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারুক আহমদ জানান, মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী রাজবাড়ি খেলার মাঠে পশুর হাট বসানো হয়েছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ (প্রশাসন-১ শাখা)'র গত ১২ এপ্রিল ২০২০ তারিখের ৩৯৭ নম্বর স্মারকের পরিপত্রে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় গ্রামীণ হাটবাজার স্থানান্তর সংক্রান্ত পত্রে শুধুমাত্র কাঁচাবাজারগুলো খেলার মাঠে অথবা খোলা জায়গায় স্থানান্তর করার নির্দেশনা রয়েছে। অন্যদিকে গত ৮ এপ্রিল সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত জেলা প্রশাসক সিলেটের কার্যালয়ের স্মারক নং-২০, ১৩ (কোভিড-১৯ সেল) হতে জারি করা বিজ্ঞপ্তির নিচে আন্ডারলাইন করে বলা হয়েছে- সাপ্তাহিক হাট, গরুর হাটসহ অন্যান্য হাট-বাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নয় এমন দোকানপাট ও বাজার বন্ধ থাকবে। জনস্বার্থে জারিকৃত আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ প্রেক্ষিতে জৈন্তাপুর প্রশাসন ঐতিহাসিক রাজবাড়ি খেলার মাঠে কার স্বার্থে বিগত ৩ মাস ধরে অবৈধ পশুর হাট পরিচালনা করার অনুমতি দিয়েছেন- এ প্রশ্ন তোলেছেন উপজেলার সচেতন জনগণ।

এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ বলেন, 'আমি অতীতেও রাজবাড়ি খেলার মাঠে পশুর হাট বসানোর পক্ষে ছিলাম না। এটি উপজেলা সদরের একমাত্র খেলাধুলা ও বিনোদনের মাঠ। এখানে অবৈধ পশুর হাট পরিচালনার পক্ষে আমি নই।'

জৈন্তাপুর বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও নিজপাট ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. ইয়াহিয়া জানান, গত সমন্বয় সভায় কোরবানি ঈদ উপলক্ষে একদিন মাঠে পশুর হাট স্থাপন করা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তিন মাস ধরে খেলার মাঠে অবৈধভাবে পশুর হাট পরিচালনা করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'বিষয়টি আমার জানা নেই।'

 

আরকে/আরআর-০১