সংস্কারের অভাবে বেহাল সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়ক

শিপার আহমেদ, বিয়ানীবাজার


জুলাই ২৫, ২০২০
০৪:৫৪ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২৫, ২০২০
০৫:০৮ অপরাহ্ন



সংস্কারের অভাবে বেহাল সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়ক

প্রতিবছর ঈদের আগে সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। তবে এবার ঈদ সামনে রেখে সড়ক মেরামতের কাজে হাত দেয়নি দপ্তরগুলো। এমন পরিস্থিতিতে এবারও ঈদে শঙ্কা নিয়ে সড়কপথে নাড়ির টানে ঘরমুখো হবেন সাধারণ মানুষ। সেই শঙ্কার অন্যতম কারণ সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়কের করুণ অবস্থা। খানাখন্দে ভরা সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়কের উভয়দিকে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি'র (বিআরটিএ) কর্মকর্তাদের মতে, ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড় থাকে তুলনামুলক বেশি। এ কারণে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। কর্মকর্তাদের মতে, সড়ক দুর্ঘটনা কোনো লৌকিক কারণে হয় না, সেটা হতে পারে চালকের ত্রুটি, যানবাহন, পথচারী বা রাস্তার ত্রুটির কারণে। দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে খানাখন্দে পড়ে ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এসব নিয়ন্ত্রণ করা গেলে দুর্ঘটনাও আনুপাতিক হারে কমে আসবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়কের ৫১ কিলোমিটার জায়গার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক খানাখন্দ রয়েছে। এগুলো বছরের পর বছর পড়ে থাকলেও মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে থাকা এই সড়কের সংস্কার কাজ নিয়ে মানুষের অসন্তোষ অনেক পুরোনো।

তবে সওজ'র বিয়ানীবাজারের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা এসও আতাউর রহমান দাবি করেন, 'সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়কের কোথাও খানাখন্দ ও ভাঙাচোরা নেই। বর্তমান বৃষ্টি মৌসুমের কারণে হয়তো দুয়েকটি গর্ত হতে পারে। এগুলো বৃষ্টি কমলে সংস্কার করা হবে।'

সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়কের চারখাই, গাছতলা, হিলালপুর, মেওয়া, দুবাগ এলাকার কথা এসও আতাউর রহমানকে জানালে তিনি বলেন, 'ওইসব এলাকা সংস্কারের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মাটি পরীক্ষাসহ অন্যান্য কাজও প্রায় শেষ হওয়ার পথে। এখন অর্থ বরাদ্দ হলে কাজ সম্পন্ন করা হবে।'

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া বলেন, 'সড়ক সংস্কারের কাজ সবসময়ই চলমান থাকে। ঈদ সামনে রেখে আলাদাভাবে করা হয় না।' অবশ্য চলমান প্রতিটি কাজে বিশেষ নজরদারি রেখেছেন বলে জানান তিনি।

বিয়ানীবাজার মাইক্রোচালক উপ-কমিটির সভাপতি বিলাল উদ্দিন বলেন, 'সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর থাকলেও অনিয়মের কারণে সড়কের এমন দুর্দশা হচ্ছে।' তাই সড়কের উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি যথাযথ তদারকি প্রয়োজন মনে করেন নেতারা।'

নিরাপদ সড়ক চাই, বিয়ানীবাজার শাখার আহ্বায়ক সুফিয়ান আহমদ বলেন, 'সড়কে ১২ মাস উন্নয়ন প্রকল্প চললেও অনিয়মের কারণে রাস্তার কাজ টেকসই হয় না। তাই সড়ক ভালো করতে হলে আগে অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।'

সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট-বিয়ানীবাজার-বারইগ্রাম, সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা যেন কাটছেই না। খানাখন্দে বেহাল সড়কে মানুষের দুর্ভোগ চরমে। কাদামাটিতে ক্ষেতের জমিতে রূপ নেওয়া বেহাল দশার প্রতিবাদে সোচ্চার স্থানীয়রা। প্রতিদিন ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও। বিকল হচ্ছে যানবাহন। এসব সড়কে সংস্কারকাজ শুরু হলেও বৃষ্টির কারণে এগোনো যাচ্ছে না। গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর সড়কে মেরামত কাজ অব্যাহত রয়েছে। অথচ শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে নুরুল ইসলাম নাহিদ ভাদেশ্বর সড়কসহ গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে সংস্কারকাজ দ্রুত শেষ করতে প্রকৌশলীদের ডেকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সাবেক এ মন্ত্রীর নির্দেশনার পরও ঢাকা দক্ষিণ-ভাদেশ্বর ১৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার এখনও শেষ হয়নি।

এদিকে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর সড়কে দুর্ভোগ-ভোগান্তি শেষ হচ্ছে না। বিভাগীয় ও জেলা শহর সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগের বিকল্প এ সড়কের সংস্কারকাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দুই উপজেলার লাখো মানুষকে। করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে এ রাস্তার নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। পরে উপজেলার অন্যান্য উন্নয়ন কাজ শুরু করা হলেও এ রাস্তার নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই পথে যাতায়াতকারীদের। করোনার অজুহাত ছাড়াও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালিতে অল্প শ্রমিক ও সংস্কারকাজে ধীরগতির অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনে গিয়ে আরও দেখা যায়, গত ৫ মাসে সড়কের মাথিউরা বাজার থেকে খলাগ্রাম অংশের ১ কিলোমিটার রাস্তা শুধুমাত্র মেকাডম করে ফেলে রাখা হয়েছে। কাজ বন্ধ থাকায় সড়কের ওই অংশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও রাস্তার পাশে ইট ফেলে রাখায় শুধু অর্ধেক রাস্তা দিয়ে যান চলাচল করছে। বিভিন্ন জায়গায় বড় গর্তে এবং রাস্তার পাশে কেটে রাখা নালায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তখন গর্তগুলো দেখলে মনে হয় একেকটি বড় পুকুর। সড়কজুড়ে রয়েছে অসংখ্য গর্ত আর খানাখন্দ।

স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ওয়ার্ক শিডিউলে নির্মাণসামগ্রীর দর বাজার দরের চেয়ে কম রাখা, সড়কের নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থা, শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধি এবং পরিবহন খরচের ব্যয় হিসাবসহ বিভিন্ন কারণে বার বার টেন্ডার আহ্বান করার পরও বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর সড়কের সোয়া ৪ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারকাজে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসেনি। শুরু থেকে এ প্রতিষ্ঠানে লোকবল সংকট থাকায় বার বার কাজ বন্ধ ছিল। চলাচলের অনুপযোগী হলেও বিকল্প সড়ক না থাকায় গত ৪ বছর ধরে বাধ্য হয়েই চলাচল করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। ফলে দীর্ঘ ভোগান্তি ও দুর্ভোগে পড়া চালক ও যাত্রীরা দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, সংস্কার ব্যয় বাড়িয়ে তৃতীয় দফায় টেন্ডার আহ্বান করলে সোয়া ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারকাজ পায় মেসার্স রাশিদুজ্জামান পিটার নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে গতবছরের অক্টোবর মাসে রাস্তাটির সংস্কারকাজ শুরু করে তারা। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সড়কের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির।

বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, 'কাজ শুরু করার আগে আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর সড়ক সংস্কারকাজ শেষ করতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপর করোনা দুর্যোগের কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখনও করোনার কারণে লোকবলের সংকট থাকায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে অচিরেই রাস্তাটির সংস্কারকাজ পুনরায় শুরু করা হবে।'

 

এসএ/আরআর-১৭