ওসমানীনগর প্রতিনিধি
জুলাই ২৯, ২০২০
০২:০৪ অপরাহ্ন
আপডেট : জুলাই ২৯, ২০২০
০২:০৪ অপরাহ্ন
সিলেটের ওসমানীনগরে একটি মসজিদ নির্মাণকাজে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গত ২৬ জুলাই উক্ত মসজিদ বাস্তবায়ন কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার হোসেন থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। থানার পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২২ মার্চ উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ রাইকদারা মোকাম বাজার (পাঁচপাড়া) এলাকায় জামে মসজিদ নির্মাণের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে একটি মসজিদ বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। এতে এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মামুনূর রশিদ খলকুকে সভাপতি ও আব্দুল কাইয়ুমকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়। সভায় মসজিদ নির্মাণে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রাপ্ত টাকা মসজিদের তাজপুরস্থ এবি ব্যাংকের একাউন্টে রাখা ও সভার রেজ্যুলেশন অনুযায়ী নির্মাণ ব্যয়ের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। কিন্তু দ্বিতল মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হলে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম ও সহ-সভাপতি আত্তর আলীসহ আরও কয়েকজন কমিটির অন্যদের পাশ কাটিয়ে আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। তারা ৩ কিস্তিতে মসজিদের একাউন্টে থাকা ২ লাখ ৮০ হাজার ও প্রবাসী এক দাতা সদস্যের দেওয়া ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া মসজিদ নির্মাণের জন্য রাস্তায় মাইক লাগিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায়কৃত ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করে ব্যাংকে জমা না রেখে তা পকেটস্থ করেন। কমিটির অন্যরা আয়-ব্যয়ের হিসাব জানতে চাইলে উক্ত দু’জন গড়িমসি শুরু করেন।
কমিটির লোকজন এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার বিশিষ্ট লোকদের কাছে বিচারপ্রার্থী হলে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম ও সহ-সভাপতি আত্তর আলী বিভিন্নভাবে মসজিদ নির্মাণে ১৭ লাখ ৫১ হাজার ৮শ ৪৪ টাকা সংগ্রহ হয়েছে জানালেও ব্যয়ের কোনো হিসাব দিতে পারেননি। পরবর্তীতে একটি অডিট কমিটি তৈরি করে সভাপতির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে মসজিদের বাকি কাজ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বরং বর্তমানে মসজিদের অবশিষ্ট কাজ দাতা সদস্যদের আর্থিক সহায়তায় করার কথা হলেও রাস্তায় মাইক লাগিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দান গ্রহণ করে উক্ত দু’জন আত্মসাৎ করছেন, যা সম্পূর্ণ ধর্মীয় পরিপন্থী।
এ প্রসঙ্গে মসজিদ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও ভূমিদাতা মামুনূর রশিদ খলকু বলেন, আমি কমিটির সভাপতি হলেও মসজিদের আর্থিক কোনো বিষয়ে আমায় অবগত করা হচ্ছে না। সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম ও সহ-সভাপতি আত্তর আলী গংরা কমিটিকে পাশ কাটিয়ে তাদের ইচ্ছামতো মসজিদের কাজ করাচ্ছেন। বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও তারা মসজিদের পরিপূর্ণ হিসাব দাখিল করছেন না। তারা মসজিদ নির্মাণের নামে প্রবাসীসহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে তাদের ব্যক্তিগত কাজে লাগাচ্ছেন।
সহ-সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার হোসেন বলেন, মসজিদের জন্য মাইক লাগিয়ে টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্ত সংগ্রহকৃত টাকার হিসাব কেউ জানে না। এ ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার বৈঠক করা হলেও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম ও সহ-সভাপতি আত্তর আলীদের কাছ থেকে কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে মসজিদ বাস্তবায়ন কমিটির অভিযুক্ত সহ-সভাপতি আত্তর আলী বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে মসজিদ নির্মাণে টাকা আত্মসাতের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। মসজিদের জন্য সংগ্রহকৃত টাকার চেয়ে আরও ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। বাড়তি খরচের টাকা কমিটির কাছে আমাদের পাওনা রয়েছে। আমরা নিয়মিত প্রতিটি কাজের হিসাব দিয়ে এসেছি। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার পর থানায় গিয়েও হিসাব দাখিল করেছি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই সেলিম মিয়া বলেন, বাদীর লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। উভয়পক্ষকে মসজিদ নির্মাণকাজের আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী নিয়ে থানায় আসতে বলা হয়েছে। ঈদের পর বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উছমানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঈনুল আজাদ ফারুক বলেন, এ বিষয়ে আমি জ্ঞাত রয়েছি। তবে ঘটনা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের লক্ষ্যে এ মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করছি না।
ইউডি/আরআর-০৫