কর্মস্থলে থাকেন না ওসমানীনগরের সরকারি কর্মকর্তারা

উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর


সেপ্টেম্বর ১১, ২০২০
০১:৪০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১১, ২০২০
০১:৪০ পূর্বাহ্ন



কর্মস্থলে থাকেন না ওসমানীনগরের সরকারি কর্মকর্তারা
উপেক্ষিত নির্দেশ, ভোগান্তিতে উপজেলাবাসী

সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ থাকলেও সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা প্রশাসনের বেশিরভাগ কর্মকর্তা বসবাস করছেন সিলেট জেলা শহরে। কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় নবপ্রতিষ্ঠিত এ উপজেলার অফিসগুলোর দাপ্তরিক কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। উপজেলায় উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ আধুনিক জীবনযাপনের সুবিধা থাকার পরও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা রোধ করা যাচ্ছে না।    

জানা যায়, পজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. তাহমিনা আক্তার, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফসানা তাসলিম, সমাজসেবা কর্মকর্তা জয়তি দত্ত, মৎস্য কর্মকর্তা মাশরুফা তাসনিম, শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দিলীপময় চৌধুরী, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ছানাউল হক সানী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিলন কান্তি রায়, এলজিইডি কর্মকর্তা নাজমুল করিম, ইউএনও অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রঞ্জিত চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা সিলেট শহরে অবস্থান করে ওসমানীনগরে অফিস করছেন। এতে বেশিরভাগ দিনই তারা সঠিক সময়ে অফিসে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। দেরিতে অফিসে আসা ও অফিস শেষ হওয়ার পূর্বেই বাসায় ফেরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রুটিনে পরিণত হয়েছে। অনেকসময় তারা জেলা শহরে প্রশাসনিক কাজের অজুহাতে অফিস ফাঁকি দিয়ে বাসায় অবস্থান করেন। ফলে উপজেলায় সেবা নিতে আসা লোকজনকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

সরকারি কোয়ার্টার না থাকায় কমর্কতাদের অনেকেই কর্মস্থলে থাকতে পারছেন না দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে প্রবাসী অধুষিত এ উপজেলায় বিলাসবহুল বাসভবন থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের লোকজনের জন্য ভাড়া বাসার অভাব নেই। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে ওসমানীনগর উপজেলার কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমান ইউএনও যোগদানের পূর্বে তিনজন ইউএনও এ উপজেলায় বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করেছেন। সে সময় অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যেও কর্মস্থলে থাকার প্রবণতা ছিল। কিন্তু বর্তমান ইউএনও যোগদানের পর থেকেই উপজেলায় কর্মরতদের মধ্যে শহরমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

গতবছরের ২০ সেপ্টেম্বর ওসমানীনগর উপজেলায় যোগদান করার পর ইউএনও মোছা. তাহমিনা আক্তার সিলেট শহর থেকে যাওয়া-আসা করছেন। ইউএনও কর্মস্থলে না থাকার সুযোগে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী অনিয়মে জড়াচ্ছেন। তাদের বেশিরভাগও কর্মস্থলে অবস্থান না করে শহরমুখী হয়েছেন। 

গতবছরের ডিসেম্বরের শেষদিকে ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী চান্দাইরপাড়া ও রাউতখাই গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধ বাঁধলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়। তাৎক্ষণিক বালাগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের (বালাগঞ্জ) অংশে ১৪৪ ধারা জারি করেন। কিন্তু ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সিলেট শহরে থাকায় ওসমানীনগর অংশের রাউতখাইয়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয় একদিন পর। বালাগঞ্জের ইউএনও কর্তৃক দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে বড় ধরণের সংঘর্ষের হাত থেকে রক্ষা পান এলাকাবাসী। এছাড়া বর্তমান করোনা সংকটকালীন সময়ে ইউএনওসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা এলাকায় না থাকায় প্রতিক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন ও সরকারি নির্দেশ উপেক্ষিত হচ্ছে।

এদিকে প্রায় দেড় মাস আগে উপজেলায় যোগদান করা এলইজিডি প্রকৌশলী নাজমুল করিম নানা অজুহাতে দিনের পর দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকছেন। এমনকি তার ব্যবহৃত সরকারি মুঠোফোনটিও প্রায়ই বন্ধ পাওয়া যায়। 

কর্মস্থলে বসবাস না করার বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ছানাউল হক সানী বলেন, ‘আমার স্ত্রী সিলেট শহরে চাকরি করেন। সে সুবাদে আমাকেও সিলেট শহরে অবস্থান করতে হয়।’

একই প্রসঙ্গে সমাজসেবা কর্মকর্তা জয়তি দত্ত বলেন, ‘আমি সিলেট শহর থেকেই কর্মস্থলে যাওয়া-আসা করি। বর্তমানে ১৫ দিনের ছুটিতে রয়েছি।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফসানা তাসলিম বলেন, ‘উপজেলার সরকারি কোয়ার্টার না থাকায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আমি সিলেট শহরে বসবাস করছি।’ 

আর ইউএনও মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘ওসমানীনগরে থাকার জন্য সরকারিভাবে বাসস্থান না থাকায় আমাকে সিলেট শহরে থেকে অফিস করতে হচ্ছে। তবে অন্যরা কেন কর্মস্থলে থাকছেন না এ ব্যাপারে আমি অবগত নই।’

 

ইউডি/আরআর-১০