টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব : জামাই-শ্বশুরের পাল্টাপাল্টি মামলা

ওসমানীনগর প্রতিনিধি


সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০
১১:১৩ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০
১১:১৩ অপরাহ্ন



টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব : জামাই-শ্বশুরের পাল্টাপাল্টি মামলা

বিদেশ থেকে প্রেরিত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে শ্বশুর ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সিলেটের ওসমানীনগরের এক প্রবাসী। এদিকে মেয়ের জামাই মামলা দায়ের করার পর উল্টো মেয়েকে বাদী করে প্রবাসী জামাইয়ের উপর নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলা দায়ের করিয়েছেন শ্বশুর। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জানা যায়, উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের পশ্চিম রোকনপুর গ্রামের আরব আমিরাত প্রবাসী টিটু মিয়ার পরিবারে কোনো অভিভাবক না থাকায় গত ৩ বছরে প্রবাস থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেশী শ্বশুর সফিক আলীর নামে বিভিন্ন মাধ্যমে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রেরণ করেন তিনি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি দেশে এসে লকডাউনে আটকা পড়ে শ্বশুরের কাছে প্রেরিত টাকা ফেরত চাইলে ঘটে চরম বিপত্তি। শ্বশুর টাকার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এরপর সফিক আলী গত ৫ আগস্ট নাইওর নেওয়ার কথা বলে তার মেয়ে লিলি বেগমকে (টিটুর স্ত্রী) বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখেন।

এদিকে টিটু মিয়া স্থানীয় প্রবীণ নুর উদ্দিনসহ কয়েকজনকে তার স্ত্রীকে বাড়ি নিয়ে আসার জন্য মধ্যস্থতায় পাঠালে কোনো সমাধান হয়নি। গত ২০ আগস্ট টিটু মিয়া তার স্ত্রীকে বাড়িতে আসার জন্য এবং শ্বশুরকে টাকা প্রদানের জন্য পৃথক উকিল নোটিশ প্রদান করেন। ২৩ আগস্ট বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে স্থানীয় তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদে একটি লিখিত দরখাস্ত করেন টিটু। ৩১ আগস্ট বিষয়টি সমাধান করতে না পেরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ইমরান রব্বানী টিটু মিয়াকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। চলতি মাসের শুরুতে পাওনা টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালত, সিলেটে শ্বশুর সফিক আলী ও স্ত্রী লিলি বেগমকে আসামি করে মামলা (নং-১৪২) দায়ের করেন টিটু মিয়া। এরপর লিলি বেগম বাদী হয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর নারী নির্যাতন ও যৌতুকের অভিযোগ এনে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্বামী টিটু মিয়া ও তার বোন সুরিয়া বেগমের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় এ ঘটনার পর থেকে প্রবাসী টিটু মিয়া আতঙ্কে রয়েছেন।

টিটু মিয়া বলেন, ‘২০১৬ সালে বিয়ে করে ১ মাস পর আমার বৃদ্ধ বাবা, বোন ও স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে বিদেশে চলে যাই। আমার স্ত্রী লিলি বেগম তার তালতো ভাই ওমান প্রবাসী শামীমের সঙ্গে নিয়মিত মোবাইলে কথা বলতেন। এ বিষয়টি আমার ভাগ্নি নাহিদা বেগম আমাকে কল করে জানালে আমি প্রবাস থেকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়ে ফোনে স্ত্রীকে শাসন করি। এর কিছুদিন পরে আমার ভাগ্নির ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। এর কয়েকদিনের মধ্যে আমার বাবাও মারা যান। আমার বাড়িতে কেউ না থাকায় বিভিন্ন সময়ে প্রবাস থেকে আমি শ্বশুরের কাছে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাঠাই। চলতি বছরের শুরুতে আমি বাড়িতে এসে লকডাউনে আটকা পড়ে শ্বশুরের কাছে জমা রাখা টাকা ফেরত চাইলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি টাকা ফেরত না দিয়ে আমার স্ত্রীকে দিয়ে মিথা মামলা দায়ের করেছেন।’

আর সফিক আলী বলেন, ‘টিটু মিয়া আমার কাছে কোনো টাকা পাঠায়নি। বরং আমার মেয়েকে যৌতুকের জন্য সে একাধিকবার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে। এ বিষয়ে আদালতে মামলা হয়েছে। আদালতেই বিষয়টি ফয়সালা হবে। আমি এর বেশি কিছু বলতে রাজি নই।’

 

ইউডি/আরআর-০২