নটরডেম কলেজে পড়ায় খ্রিস্টান আখ্যা দিয়ে সমাজচ্যুত

সিলেট মিরর ডেস্ক


সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০
০৪:৩৬ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০
০৪:৩৬ অপরাহ্ন



নটরডেম কলেজে পড়ায় খ্রিস্টান আখ্যা দিয়ে সমাজচ্যুত

ঢাকার নটরডেম কলেজে লেখাপড়া করায় খ্রিস্টান অপবাদ দিয়ে জুয়েল খান নামের এক মেধাবী ছাত্রের পরিবারকে গেলো চার মাস ধরে সামাজচ্যুত করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ওই পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা এমনকি কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছে এলাকার লোকজন। কেউ মেলামেশার চেষ্টা করলে তাদের বাড়ি-ঘরও ভেঙে এলাকা ছাড়া করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও গেল ঈদুল আজহায় ওই পরিবারটিকে সামাজিকভাবে পশু কুরবানিতেও অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।

এমন একটি অমানবিক ঘটনা ঘটে চলছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার তরফপুর পাথালিয়াপাড়া গ্রামে। জুয়েল খান উপজেলার তরফপুর পাথালিয়াপাড়া গ্রামের মফিজুল ইসলামের ছেলে। সে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর ৪০তম বিসিএস-এ লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এ ঘটনায় উভয়পক্ষই থানায় ও কোর্টে মামলা করেছেন বলে জানা গেছে।

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, উপজেলার তরফপুর পাথালিয়া গ্রামে বাড়ির সীমানা নিয়ে জুয়েল খানের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী আবদুর রশিদ খানের ছেলে শরিফুল ইসলামের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের জের ধরে গেল পহেলা মে শরিফুল ইসলামের লোকজন জুয়েলদের বাড়িতে এসে তার পরিবারের সদস্যদের মারপিট করে। এ সময় ওই গ্রামের শামসুল হকের ছেলে মাসুদ জুয়েলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তুই খ্রীস্টান কলেজে (ঢাকার নটরডেম কলেজ) লেখাপড়া করেছিস। এছাড়া তুই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় লেখাপড়া করেছিস। নটরডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বাংলায় লেখাপড়া করে তারা নাস্তিক। তুইও নাস্তিক। নাস্তিকের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুমকি দেন। এছাড়া জুয়েলের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেন তারা।

জুয়েল ও তার ভাই মারুফ খান এসব কথার প্রতিবাদ করলে রফিকুল ইসলাম ও তার লোকজন জুয়েল ও তার বৃদ্ধ বাবা মফিজুল ইসলাম, মা আমেনা বেগম, নানী ইয়ারন বেগম, ভাই মারুফ খানকে এলোপাথাড়ি মারপিট করে আহত করে। এ সময় তাদের লাঠির আঘাতে জুয়েলের বৃদ্ধা নানী ইয়ারন বেগমের ডান হাতের হাড় ভেঙে যায়। তাদের আত্মচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে মির্জাপুর উপজেলাস্থ জামুর্কী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এই ঘটনার পর থেকে ওই পরিবারটিকে সমাজচ্যুত করে রাখা হয়েছে। 

গেল ঈদুল আজহায় পরিবারটিকে সামাজিকভাবে পশু কুরবানিতেও অংশ নিতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ওই পরিবারের কেউ সমাজের অন্য কোনও লোকের সঙ্গে মেলামেশা করার চেষ্টা করলে তাদের বাড়ি-ঘরও ভেঙে এলাকা ছাড়া করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ অমানবিক ঘটনার পরও জুয়েলের পরিবারের বিরুদ্ধে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে জুয়েলের মা আমেনা বেগম জানিয়েছেন।

তরফপুর গ্রামের বাসিন্দা স্বাস্থ্যকর্মী মাহমুদুল হাসান বলেন, জুয়েলের পরিবার সমাজের কাউকে মানে না। তাছাড়া জুয়েলের বাবা মসজিদ সম্পর্কে কটাক্ষ করে কথা বলে এবং মসজিদে তাদের নির্ধারিত হারে ধরা চাঁদা বা অনুদানের টাকাও তারা দেয় না। যে কারণে সমাজের মুরুব্বিরা তাদের সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

গ্রামের মাতাব্বর তরফপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আবদুল বাসেদ মিয়া বলেন, দুই পরিবারের বিরোধ মীমাংসা করতে গিয়ে আমরা মামলার আসামি হয়েছি। এখন আমি কি বলবো।

এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সায়েদুর রহমান বলেন, গ্রামের কয়েকজন মাতব্বর মিলে জুয়েলের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেয়। বিষয়টি খুবই অমানবিক। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল মালেক বলেন, পারিবারিক কলহের জেরকে কেন্দ্র করে ধর্মকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। উভয়পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে। এলাকায় যাতে কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

বিএ-১৬