জৈন্তাপুর প্রতিনিধি
অক্টোবর ০৯, ২০২০
০১:০৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ০৯, ২০২০
০১:০৩ পূর্বাহ্ন
আল-আমিন ও আলতাফ হোসেন বাদল
সিলেটের জৈন্তাপুরে ৫১ পিস ইয়াবা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার নিকটাত্মীয় মুখলিছুর রহমান ওরফে মীরকে সাজানো হয়রানিমূলক মামলায় ফাঁসিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করার অভিযোগ এনে মামলার পূর্ণ তদন্ত দাবি করে পুলিশ সুপার বরাবরে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী রোকেয়া বেগম।
আবেদনে রোকেয়া বেগম বলেছেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে এবং আমার নিকটাত্মীয় মাথিউরা গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী আলতাফ হোসেন বাদলকে অবৈধ সম্পর্ক তৈরিতে বাধা দেওয়ার কারণে আমাকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া হবে মর্মে হুমকি দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আলতাফ হোসেন বাদলের প্রেমিকা জেসমিনের ছোট ভাই জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের বাউরবাগ দক্ষিণ বনপাড়া গ্রামের বাবুল আহমদের ছেলে আল-আমিন গত ২ অক্টোবর রাত ১০টায় আমার বাড়িতে আসে। তখন আমার স্বামী বাড়ীতে ছিলেন না। আমার স্বামীর অবস্থান নিশ্চিত হয়ে আত্মীয়তার দরুন বাড়িতে অবস্থান করে আল-আমিন। পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক মাদকদ্রব্য (ইয়াবা) শয়নকক্ষের বিছানার বালিশের নিচে রাখে সে। আমার স্বামী ঘরে আসার পর সে কোনো প্রকার আলাপ-আলোচনা না করে বের হয়ে যায় এবং এর ১০/১৫ মিনেটের মধ্যে জৈন্তাপুর মডেল থানার এসআই প্রদীপ ও এএসআই হরিধনের নেতৃত্বে পুলিশ আমাদের বাড়িটি ঘিরে ফেলে এবং ঘরে প্রবেশ করে। বসতঘরের অন্য কোনো স্থান তল্লাশি না করে শুধুমাত্র আমাদের শয়নকক্ষের বালিশ উত্তোলন করে বিছানার নিচ থেকে ওষুধের মতো কিছু ট্যাবলেট বের করে পুলিশ বলে, মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে স্থানীয় মুরুব্বীসহ এলাকাবাসী ও ইউপি সদস্য বিভিন্নভাবে অনুরোধ করার পরও তাদের কথায় কর্ণপাত না করে পুলিশ আমার স্বামী মখলিছুর রহমান ওরফে মীরকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনের ২০১৮ সালের ৩৬ (১) এর ১০ (ক) ধারায় মামলা রুজু করে (মামলা নং-০২/২০৮, তারিখ- ০২/১০/২০২০)। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
আবেদনে আরও বলা হয়, মুখলিছুর রহমান ওরফে মীর পুলিশের হাতে আটক হওয়ার সংবাদ পেয়ে চারিকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলম চৌধুরী তোফায়েল, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নূরুল আমীন, এলাকার গণ্যমান্যরা ব্যক্তিবর্গসহ মামলার সাক্ষীগণ থানায় উপস্থিত হয়ে ওসি মহসিন আলীকে জানান সাজানো মামলায় তাকে হাজতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৫ ইউপি সদস্য লিখিতভাবে প্রত্যয়ন করেন যে মুখলিছুর রহমান ওরফে মীর একজন দিনমজুর। অন্যের কাজকর্ম করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তিনি কোনো সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ড, মাদক, অসামাজিকতা কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত নন। তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি পূর্বপরিকল্পিত মামলায় জাড়ানো হয়েছে। তারা তার দ্রুত মুক্তির দাবি জানান এবং প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করার আহ্বান জানান।
রোকেয়া বেগমের দাবি, পূর্বশত্রুতার জের ধরে এবং অবৈধ সম্পর্কে বাধা দেওয়ার কারণে আলতাফ হোসেন বাদলের শলাপরামর্শে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক আল-আমিন মাদকদ্রব্য (ইয়াবা) রেখে পুলিশ দিয়ে আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করিয়েছে। বর্তমানে সে বিভিন্নভাবে এলাকাবাসীসহ আমাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। সে বলেছে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে আরও ইয়াবা রেখে পুরো পরিবারকে জেল খাটিয়ে ছাড়বে, এমনকি আমার মেয়েকে অপহরন করে ভারতে পাচার করবে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, তদন্তপূর্বক আল-আমিনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার প্রকৃত রহস্য বের হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান শাহ-আলম চৌধুরী তোফায়েল বলেন, 'ঘটনাটি সম্পূর্ণ সাজানো নাটক। এ বিষয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) সরেজমিনে তদন্তে আসেন জৈন্তাপুর-কানাইঘাটের সার্কেল এসপি আব্দুল করিম। আমার উপস্থিতিতে এলাকার আপামর জনতা বলেছেন, পুলিশকে প্রভাবিত করে ইয়াবা রেখে নাটক সাজিয়ে নিরীহ শ্রমিক মুখলিছুর রহমান ওরফে মীর ফাঁসানো হয়েছে। অবিলম্বে প্রকৃত অপরাধীকে আটক এবং মীরকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
আরকে/আরআর-১৩