সিলেটে ‘উন্নয়ন বঞ্চনার’ প্রতিবাদে ৬ ঘণ্টা সড়কে অবস্থান কর্মসূচিতে প্রতিবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক


নভেম্বর ০২, ২০২৫
০৮:৩৫ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ০২, ২০২৫
০৮:৩৭ অপরাহ্ন



সিলেটে ‘উন্নয়ন বঞ্চনার’ প্রতিবাদে ৬ ঘণ্টা সড়কে অবস্থান কর্মসূচিতে প্রতিবাদ


সিলেটের প্রতি উন্নয়ন বঞ্চনার প্রতিবাদে সিসিকের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে নগরের ব্যস্ততম সিটি পয়েন্ট থেকে সুরমা মার্কেট পয়েন্ট পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। 

৬ ঘন্টা সড়ক অবরোধের পর সিলেটবাসীর দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দেন। এসময় তিনি জানান, আগামী এক মাসের মধ্যে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের অধিগ্রহণ কাজ সম্পন্ন হবে, বিমানের ভাড়া ইচ্ছামতো উঠানামার বিষয়ে আইন করা হচ্ছে, পাশাপাশি রেলপথের উন্নয়নেও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তার আশ্বাসে বিকাল সাড়ে ৫ টায় অবরোধ প্রত্যাহার করেন আন্দোলনকারীরা।  

আজ রবিবার (২ নভেম্বর) সকাল ১১টায় নগরের সিটি পয়েন্ট এলাকায় এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। ‘সিলেট আন্দোলনে’র ব্যানারে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তারা দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন।


দুপুরের মধ্যে পুরো এলাকা জনারণ্যে পরিণত হয়। এ সময় আরিফুল হক চৌধুরী ঘোষণা করেন, ‘সুষ্পষ্ট আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।’

অবস্থান কর্মসূচিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজও শুরু হয়েছিল।

কিন্তু দুঃখের বিষয় মাঝামাঝি অবস্থায় এসে অজ্ঞাত কারণে প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে। এর ফলে সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা চার লেন বিশিষ্ট মহাসড়কের স্বপ্নও অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে যায়। আজ সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন সুদূর পরাহত।’

সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর বেহাল দশা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দর-আম্বরখানা সড়ক, বিমানবন্দর- বাদাঘাট বাইপাস সড়ক, সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের কাজ গত দেড় যুগেও বাস্তবায়ন হয়নি। শুধু মহাসড়ক নয় সিলেটের অভ্যন্তরের সড়কগুলোরও বেহাল দশা। এ ধরণের আচরণ সিলেটবাসীকে হতাশায় নিমজ্জিত করেছে।’

রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে পর্যটক হারাচ্ছে সিলেট দাবি করে তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসে লাখের অধিক পর্যটকদের আনাগোনা থাকে সিলেটে। কিন্তু শুধুমাত্র রাস্তার ভোগান্তির কারণে কারণে পর্যটক উপস্থিতি ৪০ শতাংশ কমে গেছে। বিশেষ করে বিমানবন্দর-আম্বরখানা সড়কের বেহাল অবস্থা সিলেট সম্পর্কে বহিরাগতদের ধারণাকে অম্লান করে দেয়।’

তিনি দ্রুত সড়ক মেরামতের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘সিলেটবাসী এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সড়ক, পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কাছে টেকসই মহাসড়ক, নেটওয়ার্ক, নিরাপদ সড়ক এবং পরিবহন ব্যবস্থার আওতায় আমাদের সিলেট-ঢাকা, সিলেট-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, বিমানবন্দর-আম্বরখানা সড়ক, বিমানবন্দর-বাইপাস-বাদাঘাট সড়ক, সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন এবং তার রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানাচ্ছি।’

পরিবহন ব্যবস্থায় রেলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবহন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা সিলেটের ক্ষেত্রে পুরাপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। সিলেট-ঢাকা, সিলেট-চট্টগ্রামসহ অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে চলাচলে সিলেটবাসী তীব্র সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ঘন ঘন দুর্ঘটনা, টাকার বিনিময়ে স্থানে স্থানে রেল থামানো, অবৈধ পণ্য পাচার সময়মত ট্রেন না ছাড়া, অনলাইনে টিকেট না পাওয়া ইত্যাদি সিলেটবাসীদের জন্য নিত্যনৈমিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিলেট-ঢাকা রুটে একটি পর্যটক ট্রেন চালু থাকলেও তা বাতিল করে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় যা সিলেটবাসীর মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।’

বিমানের ভাড়া ইচ্ছে মতো ভাড়ানোর অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ রয়েছে বাংলাদেশ বিমানের পরিবহন ব্যবস্থার প্রতি। বহিবিশ্বে বসবাসরত আমাদের প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধাদের দ্বারা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ভূমিকা রাখলেও দেশের মাটিতে পা রাখার পরপরই তারা নানাভাবে হেনস্তার শিকার হন। বিমানের ভাড়া উঠানামাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বৈষম্য রয়েছে।’

আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটের প্রতি উন্নয়ন বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘দেশের অন্য জেলার প্রকল্প পাশ হতে সময় লাগে না অথচ সিলেটের কোন প্রকল্প আলোর মুখ দেখে না সহজে। ঢাকা মহানগরে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার, খুলনায় ২ হাজার ৪০০ কোটি, চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য ৩ হাজার ১০০ কোটি, বরিশালের জন্য ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা যেখানে বরাদ্দ হয়ে যায়। সেখানে একই সময়ে সিলেট মহানগরের জন্য বরাদ্দের মাত্র ১৯ কোটি টাকাও ফিরিয়ে নেওয়া হয় কাটছাট করে টাকা কমানোর জন্য। সিলেটের প্রতি এমন বিদ্বেষ কেন তা সিলেটবাসী জানতে চায়।’ 

বিগত ১৭ বছর সিলেট বৈষম্যের শিকার দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর আমরা বৈষম্যের শিকার, এখন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও সিলেটবাসী বৈষম্যের শিকার হতে পারে না।’

সিলেটে একটি ওয়াসা প্রকল্প করার কথা ছিল কিন্তু বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে খাবার পানি বন্ধ করে রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওয়াটার প্লান্ট বাস্তবায়ন করতে হবে।’ এসময় তিনি বলেন, ‘বাদাঘাটে ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট স্থাপনেরও তেমন অগ্রগতি নেই। এ অবস্থায় আগামী রমজানে সিলেটে পানির জন্য হাহাকার তৈরি হতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।’ 

বেলা পাঁচটার দিকে কর্মসূচিস্থলে আসেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। এ সময় আরিফুল হক দাবি-দাওয়া তুলে ধরে বক্তৃতা করেন। এরপর কর্মসূচির লিখিত দাবিদাওয়ার কবি জেলা প্রশাসকের হাতে তুলে দেন। 

এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জমি দ্রুত অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এক মাসের মধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হবে। দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য তদারকি চলছে। যত প্রকল্প আছে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’ পানি সমস্যার সমাধানে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

বিমানের টিকেটের দাম ইচ্ছে মতো বাড়ানো কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এয়ার টিকেটের দাম আপডাউন করা নিয়ে সরকার একটি আইন করতে যাচ্ছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন হলে তা নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে।’ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সিলেটে আরো একটি ফ্লাইট চালু হবে বলেও তিনি জানান।

রেল প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘রেল লাইন সংস্কারে এমন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে যাতে আগামী শত বছরের জন্য যাতে সিলেটের মানুষ আন্দোলন না করতে হই।’

রাস্তাঘাট সংস্কার বিষয়ে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘রাস্তা সংস্কার, উন্নয়নে অনেকগুলো দরপত্র করা হয়েছে। অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করে টেকসই উন্নয়ন করা হচ্ছে। সিলেটের পর্যটন শিল্প নিয়ে সরকারের মহা-পরিকল্পনা রয়েছে। দ্রুত তা বাস্তবায়ন হলে সিলেটবাসী উপকৃত হবে।’



এএফ/০৬