সিলেট মিরর ডেস্ক
অক্টোবর ১৫, ২০২০
০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ১৫, ২০২০
০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন
দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানির চেয়ারম্যান শওকত হোসেন শামীম বলেছেন, ‘সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে মিথ্যা ও মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানির পরিচালক আব্দুল মুক্তাদির। কোম্পানির চেয়ারম্যান পরিচয়ে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি চেয়ারম্যান নন; শুধুই পরিচালক।’
গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেট নগরের মেন্দিবাগের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে শওকত হোসেন শামীম এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমদ মিছবাহসহ কোম্পানির অন্যান্য পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে শামীম বলেন, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০০৩ সালে দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানি বিভিন্ন প্রকল্পের ফ্ল্যাট বিক্রি ও ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে দোকান হস্তান্তর শুরু করে। ২০১৭ সালে কোম্পানির গার্ডেন ইন হোটেল, গার্ডেন হেলথ ক্লাবসহ টাওয়ার-৫, খাদিম গার্ডেন হাউজিং প্রকল্পের বোর্ড সভায় বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় বিক্রির বিজ্ঞাপনও প্রকাশ করা হয়। ২০১৮ সাল থেকে মাত্র ৩/৪ জন পরিচালক তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে বিরোধিতা ও অসহযোগিতা করছিলেন। ৫ নম্বর টাওয়ারের ৫টি ফ্লোর নিয়ে অধ্যক্ষ মো. এনামুল হক সর্দার এসএম ফাউন্ডেশনের নামে শাহজালাল সিটি কলেজ স্থাপন করেছিলেন। পরে গার্ডেন হেলথ ক্লাবসহ সম্পূর্ণ টাওয়ার ভাড়াগ্রহিতা হিসেবে নিজের দখলে রাখেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০০৯ সালের ৬ এপ্রিল ৪ নম্বর টাওয়ারের হোটেল গার্ডেন ইন পরিচালক মরহুম মামুনুর রশীদের নামে ভাড়া নেন আব্দুল মুক্তাদির ও মো. এনামুল হক সর্দার। আরও পরে আব্দুল মুক্তাদিরের ছেলে নওশাদ আল মুক্তাদির ও মো. আহছানুজ্জামান মাছুম ম্যানেজমেন্ট পার্টনার হিসেবে হোটেলটি পরিচালনা করেন। দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানির খাদিম প্রকল্পের ভূমির উপর মিক্সার প্লান্টসহ পাথর স্টক, এলোপাতাড়ি ড্রাম ট্রাক ও ভারী গাড়ি রাখছেন ও বিটুমিন কারখানা স্থাপন করে ভূমি দখল করে রেখেছেন আব্দুস সামাদ। আব্দুল মুক্তদির, এনামুল হক সর্দার ও আব্দুস সামাদের দখলে থাকায় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েও কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায়, ঐ বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত শাহজালাল সিটি কলেজ ও গার্ডেন হেলথ ক্লাবের কাছে কোম্পানির ৪৫ লাখ ৯৩ হাজার ২৬১ টাকা বকেয়া পাওনা হওয়ায় কোম্পানি আর চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে ঐ বোর্ড সভায় পরের ২ বছরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের অঙ্গীকার করলে শর্তসাপেক্ষে চুক্তি নবায়ন করা হয়। আব্দুল মুক্তাদিরও গার্ডেন ইন হোটেলের বকেয়া টাকা পরিশোধের অঙ্গীকার করেন। ২০১৮ সালের ২৬ জুনের সভায় কৌশলে এনামুল হক সর্দার চেয়ারম্যানের পদ থেকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে অব্যাহতি নিয়েছিলেন। বোর্ড সভায় এজেন্ডা ছাড়াই চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রস্তাব করানো হলে আব্দুল মুক্তাদিরকে সাময়িকভাবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজ সাহেবের ৩ হাজার ৬৫০ শেয়ারের বিপরীতে তার পরিবারের সদস্যদের ন্যায্য লভ্যাংশ নিয়মিত প্রদান করা হচ্ছে। তবে হাফিজ সাহেবের মেয়ের জামাই আব্দুস সামাদ ও ছেলে সিরাজুল ইসলাম কোনো সভায় তার স্ত্রী বা ছেলে মেয়ের নামে শেয়ার হস্তান্তরের প্রস্তাব করেননি। হঠাৎ করে এই বছরের ১৫ মার্চ তারা পরিচালকদের বিরুদ্ধে শেয়ার হোল্ডার হিসেবে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন। এরপর থেকে আব্দুল মুক্তাদির ও আব্দুস সামাদ ব্যাংক হিসাবের সিগনেটরি হিসাবে টাকা তুলতে চেকে স্বাক্ষর করছেন না। এ ব্যাপারে ২১ মার্চ সভা আহŸান করা হলে সেই সভায় মুক্তাদির ও আজাদ উদ্দিন উপস্থিত হয়েও স্বাক্ষর বইতে স্বাক্ষর না করে সভা বয়কট করেন। পরে ২৭ আগস্টের সভায় শওকত হোসেন শামীমকে কোম্পানির চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। মুক্তাদির ও আব্দুস সামাদরা ব্যাংক হিসাব জব্দ, পরিচালকের অনিয়ম ও আর্থিক অসচ্ছলতার অভিযোগ এনে সিলেট জজকোর্টে মামলা করেন। সেই মামলা এখনও চলছে। তারা জয়েন্ট স্টক কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ রাখতে আবেদন করেছেন। ২০ সেপ্টেম্বর সামাদ ও সিরাজুল কোম্পানির বিরুদ্ধে হাইকোর্টেও দুটি মামলা দায়ের করেছেন। সেগুলো এখনও চলছে। এই অবস্থায় মুক্তাদির নিজেকে কোম্পানির চেয়ারম্যান দাবি করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমদ মিছবাহর বিরুদ্ধে আক্রোশে মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে কোম্পানির সুনাম ক্ষুন্ন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ফারুক আহমদ মিছবাহ বলেন, মুক্তাদির সংবাদ সম্মেলনে আমার নামে যেসব অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন তার কোনো বাস্তব ভিত্তি বা ডকুমেন্ট নেই। কোনো প্রমাণও দিতে পারবেন না তিনি। কোম্পানি সরকারের কোম্পানি আইন অনুযায়ী চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নিজে আজ স্বাক্ষর দিয়ে কোম্পানির কোনো টাকা উত্তোলন করিনি বা ফ্ল্যাট মালিকদের টাকাও আমার কাছে নেই। এসব অভিযোগ উত্তোলন করে সমাজে আমাকে হেয় করা হচ্ছে। বকেয়া টাকা আদায় না করতেই এসব মিথ্যা বক্তব্য তিনি রেখেছেন। মিছবাহ, এনামুল হক সর্দারসহ মুক্তাদিরের উদ্দেশ্যে বলেন, বকেয়া টাকা একসঙ্গে না পারেন, কীভাবে কত কিস্তিতে দিতে পারবেন, এরকম একটা উদ্যোগ নিলেই বিষয়টি মিটে যায়।
বিএ-০৪