জামালগঞ্জে উপনির্বাচন : নেই ভোটের উত্তাপ, জনমনে সংশয়

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


অক্টোবর ১৫, ২০২০
০৬:২৪ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ১৫, ২০২০
০৬:২৪ অপরাহ্ন



জামালগঞ্জে উপনির্বাচন : নেই ভোটের উত্তাপ, জনমনে সংশয়

নির্বাচন মানে উৎসবমুখর বিরামহীন প্রচার-প্রচারণা। প্রার্থীর নাম ও প্রতীক ধরে উচ্চস্বরে মাইক বাজানো। সাধারণ মানুষের বাক-বিতণ্ডায় সরগরম থাকা হাট-বাজার ও রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকান। পক্ষে-বিপক্ষে জোর কথোপকথন কিংবা পথে পথে প্রার্থীদের প্রতীক সম্বলিত পোস্টারে ছেয়ে যাওয়া উজ্জীবিত পরিবেশ।

কিন্তু সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে আগামী ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনকে সামনে রেখে এর কোনো কিছুই তেমন চোখে পড়ছে না। নির্বাচন ঘিরে যেমনটা হওয়ার কথা ছিল তার কোনোটাই নেই। উপজেলাজুড়ে এক উত্তাপহীন গুমোট বাঁধা নীরব পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রার্থী ও সমর্থকরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ব্যস্ত সময় পার করলেও সাধারণ মানুষের মাঝে বাড়তি কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে না।

তবে মনোনয়নবঞ্চিত সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলে নির্বাচনের গতি-প্রকৃতি ভিন্নরকম হতে পারত বলে মনে করছেন এলাকার মানুষ। অবশ্য এমনিতেই ভোটারদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।

জানা গেছে, জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আল আজাদের মৃত্যুতে চেয়ারম্যানের শূন্য পদে আগামী ২০ অক্টোবর উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী প্রয়াত ইউসুফ আল আজাদের পুত্র ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ইকবাল আল আজাদ, বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. নূরুল হক আফিন্দী, আনারস প্রতীকে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম তালুকদার ঝুনুর পুত্র ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক মাসুম মাহমুদ তালুকদার এবং তার চাচা ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফয়জুল আলম মোহন। মোহন প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল মনসুর লাল মিয়ার ছেলে।

আগামী ২০ অক্টোবরের উপনির্বাচনে উপজেলার ৪৬টি কেন্দ্রে ১ লাখ ১৭ হাজার ৪০০ ভোটার তাদের ভোট প্রয়োগ করবেন বলে জানা গেছে।

নির্বাচনের ব্যাপারে এলাকার বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা সংশয় প্রকাশ করে জানিয়েছেন, নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে যে উৎফুল্লতা দেখা দেওয়ার কথা ছিল তা নেই। নির্বাচনে এখন বিশ্বাসহীনতা চলে এসেছে। সাধারণ মানুষ যা চাইছে, হচ্ছে তার উল্টোটা। মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটছে না বিধায় নির্বাচন থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কাউকে ভোটের কথা জিজ্ঞেস করলে প্রতিউত্তরে মনের যন্ত্রণা মেটানোর চেষ্টা করেন তারা। যেখানে অধিকার খর্ব করা হয়, সেখানে মানুষের উৎসাহ কতটুকু থাকবে প্রশ্ন রেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকার সচেতন মানুষজন।

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, নির্বাচনে যা হওয়ার তাই হবে। এ নিয়ে কথা বলে কোনো লাভ নেই। ভোট দেওয়ার আগেই যদি ভোট দেওয়া হয়ে যায়, তাহলে এটা নিয়ে আর কোনো কথা আছে? ভোটের বিষয়টিতে সাধারণ মানুষকে পুতুল বানানো হয়েছে। যেখানে ভোট দিয়ে মানুষের ইচ্ছা পূরণের কোনো মূল্য নেই, সেখানে কিসের নির্বাচন, কিসের ভোট বলে ক্ষোভ ঝারেন অনেকে।

বর্তমান উপনির্বাচন নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষাবিদ বলেন, ‘বাসায় বসে বসে আমি আমার ছেলেকে বলি, এই যে একটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, এ সময় তো হৈ-হুল্লোর-উৎসব শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এ নির্বাচনে এসব কিছুই নেই। কারণ নির্বাচন নামক বিষয়টির উপর মানুষ আস্থা, আগ্রহ, বিশ্বাস সবকিছু হারিয়ে ফেলেছে।’

বিএনপি থেকে বহিস্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুম মাহমুদ তালুকদার বলেন, ‘আমি জনগণের মনোনীত প্রার্থী। আমার নির্বাচনে আসার একমাত্র কারণ হচ্ছে জনগণ। নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত অনুকূলে। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে আমি বিজয়ের প্রত্যাশা রাখি।’

বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করা উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূরুল হক আফিন্দী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি প্রশাসন সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। দলের প্রতীক বড় কথা নয়, ব্যক্তিকে কেন্দ্র করেই নির্বাচন হবে জামালগঞ্জে।’

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইকবাল আল আজাদ বলেন, ‘ভোট চাইতে প্রতিদিন গ্রামাঞ্চলে যাচ্ছি এবং প্রচুর সাড়াও পাচ্ছি। বিজয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। বর্ষার সময় হওয়ায় সাধারণ মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনাটা টের পাওয়া যাচ্ছে না। আশা করি জনগণ জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করবেন।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, ‘সবকিছু শান্তিপূর্ণই আছে। কারও কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। আশা করছি ভালো নির্বাচন হবে।’

 

বিআর/আরআর-০৩