ধর্মপাশা ও মধ্যনগরে হাওরে বোরো ধান কর্তন উৎসবের উদ্বোধন

ধর্মপাশা প্রতিনিধি


এপ্রিল ১৫, ২০২৫
০৬:৩৬ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১৬, ২০২৫
০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন



ধর্মপাশা ও মধ্যনগরে হাওরে বোরো ধান কর্তন উৎসবের উদ্বোধন


সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার বিভিন্ন হাওরে গত কয়েকদিন ধরে বোরো ধান কাটা শুরু হলেও এবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো বোরো ধান কর্তন উৎসবের। 

আজ মঙ্গলবার (১৫এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ধর্মপাশা ও মধ্যনগর এই দুই  উপজেলার সীমানায় থাকা টগার হাওরে আনিছ মিয়া ( ৪০) নামের  এক কৃষকের  আবাদ করা ব্রি ৯২জাতের ধান কর্তনের মধ্যে দিয়ে এই দুই উপজেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে বোরো ধান কর্তন উৎসবের শুভ উদ্বোধন করা হয়।

ধর্মপাশা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার দুইজন ইউএনও  যৌথভাবে এই কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন।অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ তুষার। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ধর্মপাশার ইউএনও জনি রায়, মধ্যনগরের ইউএনও উজ্জ্বল রায়,ধর্মপাশা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম রহমত প্রমুখ। এ সময় অন্যদের মধ্যে সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো.মাহমুদুর রহমান, উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা উৎপল সরকার, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহ আলম, ধর্মপাশা থানার  ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এনামুল হক, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হক,জুলফিকার আলী ভূট্রো,, সাংবাদিক সালেহ আহমদ, ইসহাক মিয়া,সেলিম আহম্মেদ,এনামুল হক,শাহীন মিয়া, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম,উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা চঞ্চল মিয়া,প্রশান্ত বিশ্ব শর্মা,শাওন পোদ্দার,সাখাওয়াত হোসেন,আকমল প্রধান, হৃদয় মিয়া, সহকারী শিক্ষক মো. অলি, মেহেদী হাসান ডালি প্রমুখ। 

ধর্মপাশা ও মধ্যনগর প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে এই দুটি উপজেলার  ৮০টি হাওরে ও হাওরের বাইরে থাকা উঁচু জমিতে (কান্দায়) ৩১হাজার ৯১০হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার সীমানায় থাকা টগার হাওরে এবার ১৯৫০হেক্টর বোরো জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। প্রতি কিয়ার (১কিয়ার=৩২ শতক) জমিতে ধান উৎপাদন হচ্ছে ২২থেকে ২৫মণ।এ পর্যন্ত  ছয় হাজার ৬৩হেক্টর জমির বোরো ধান কাটা হয়েছে।  ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় ২০০ টি কম্বাইন হারভেস্টারের পাশাপাশি নিয়মিত ও বহিরাগত প্রায় চার হাজার কৃষি শ্রমিক বোরো ধান কাটার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।

ঠগার হাওর পাড়ের ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের সুনই গ্রামের কৃষক মো.আনিছ মিয়া (৪০) বলেন, আমি ১৬কিয়ার জমিত ব্রি ধান ৮৮ও ১৬কিয়ার জমিত ব্রি ধান ৯২চাষ করছি।  ১৬ কিয়ার  জমির ধান কাইটা  ৪০০মণ ধান পাইছি। গত বছর হত্তি কিয়ার  ২২মণ করে ধান পাইছিলাম।এইবার ওপর ওযালার রহমতে সময় মতন বৃষ্টি ও রইদ অওয়ায় আওরও ধান নয় যেন সোনার ফলছে। আমরা  বেহেই খুব খুশি।

মধ্যনগর উপজেলার  বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণ উড়া গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলার  বাইন চাপড়া হাওরের কৃষক  রমা কান্ত রায় (৫৮)  বলেন, আমি এই হাওরে দুই কিয়ার জমি থেকে ৪৪মণ ধান পেয়েছি। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ মেনে বোরো ধানের আবাদ করায় এবার ধান গাছে রোগ বালাই খুবই কম হয়েছে। প্রতি কিয়ার জমিতে গড়ে  ২২মণ কইরা ধান পাইতাছি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।

ধর্মপাশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ  আল মাসুদ তুষার বলেন, আমাকে মধ্যনগর উপজেলার কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে।রোগবালাই কম হওয়ায় ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায়  ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় বোরো ধানের এবার বাম্পার ফলন হয়েছে।চলতি এপ্রিল মাসের মধ্যেই  এই দুই উপজেলায় হাওর ও হাওরের বাইরে  উঁচু জমিতে আবাদ করা পুরো ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করছি।

ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও)  জনি রায় ও মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল রায় বলেন, এই দুটি উপজেলা হাওরবেষ্ঠিত। হাওরের পাকা বোরো ধান দেখে মন ভরে গেছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক দেখে আমরাও আনন্দিত। কৃষকদের বোরো ধান নির্বিঘ্নে ঘরে তুলতে  যে কোনো প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃষকদেরকে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে। 


এএফ/০২