জামালগঞ্জে উপনির্বাচন : আজ শেষ হচ্ছে প্রচার, মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


অক্টোবর ১৮, ২০২০
০৫:২৯ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ১৮, ২০২০
০৬:৩৭ অপরাহ্ন



জামালগঞ্জে উপনির্বাচন : আজ শেষ হচ্ছে প্রচার, মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ

 

আজ রবিবার (১৮ অক্টোবর) রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে আগামী মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপনির্বাচনে উপজেলার ৪৬টি কেন্দ্রে ১ লাখ ১৭ হাজার ৪০০ ভোটার তাদের ভোট প্রয়োগ করবেন বলে জানা গেছে।

নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার শেষ সময়সীমা পর্যন্ত উভয়পক্ষে ঘাম ঝরিয়েছেন প্রার্থী, সমর্থক, জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। নৌকা ও ধানের শীষের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী ইকবাল আল আজাদ ও নূরুল হক আফিন্দী ছাড়াও মাঠে ছিলেন আনারস প্রতীকে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুম মাহমুদ তালুকদার ও ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়জুল আলম তালুকদার মোহন। তবে তাদের মধ্যে নৌকার প্রার্থী ইকবাল ও ধানের শীষের প্রার্থী আফিন্দী ভোটের মাঠে অনেকটাই এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ইকবাল আল আজাদ প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আল আজাদের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তিনি ভোটের মাঠে পিতার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানোর চেষ্টায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থণা করেছেন।

এদিকে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী নূরুল হক আফিন্দী উপজেলা বিএনপির সভাপতি। তিনি সাচনা বাজার ইউনিয়ন পরিষদের একাধিকবারের চেয়ারম্যান। একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে উপজেলায় তাঁর আলাদা পরিচিতি আছে। সে হিসেবে তিনি ভোটের মাঠে অনেকটা এগিয়ে আছেন।

বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুম মাহমুদ তালুকদার প্রয়াত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম তালুকদার ঝুনুর পুত্র। তিনি সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-স্থানীয় সরকারি বিষয়ক সম্পাদক। অপর প্রার্থী তাঁর চাচা জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফয়জুল আলম মোহন। তিনি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল মনসুর লাল মিয়ার ছেলে।

নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থী ও প্রার্থীদের সমর্থকের মাঝে দেখা গেছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার ছাপ। কিন্তু ভোটারদের মধ্যে নির্বাচনকে ঘিরে তেমন উৎসাহ নেই। সুষ্ঠু ভোটের ব্যাপারেও ভোটাররা সন্দিহান। তবে প্রার্থী ও সংশ্লিষ্টরা সুষ্ঠু, সুন্দর ভোটের ব্যাপারে আশাবাদী। 

নির্বাচনী মাঠ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, গত ৪ অক্টোবর প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে নির্বাচনী প্রচারে ভাটার ভাব পরিলক্ষিত হয়। গতবছরের ১৮ জুন উপজেলা নির্বাচনে যে প্রচার-প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল, এবারের উপনির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে তেমনটা চোখে পড়েনি। তবে শেষ পর্যায়ে এসে জমে ওঠে নৌকা ও ধানের শীষের জোর প্রচার। স্থানে স্থানে উভয়পক্ষের জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভা-সমাবেশ নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়েছে।

গত ১৫ অক্টোবর খোঁজারগাঁও-লালবাজারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল নৌকার প্রার্থী ইকবাল আল আজাদের পক্ষে ভোট চেয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। ওইসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, সুনামগঞ্জের পৌর মেয়র নাদের বখত্, সাবেক ছাত্রনেতা শাহরিয়ার কবীর বিপ্লবসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী। এছাড়া ১৭ অক্টোবর সাচনা বাজারে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেছেন। পাশাপাশি তাহিরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপলও ছিলেন প্রচারের কাতারে।

অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী নূরুল হক আফিন্দীর পক্ষে মাঠ চষে বেড়িয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, সাবেক সাংসদ নজির হোসেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নূরুল, লন্ডন আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক আফিন্দী লিটন ও জেলা যুবদলের সভাপতি আবুল মনসুর শওকতসহ অনেকে। তাঁরা ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিতে ভোটারদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়জুল আলম মোহন বলেন, 'জনগণের সাড়া আছে। মানুষ আমাকে পছন্দ করে। আমি তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। আশা করি জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। আর আমার ভাতিজা মাসুমও নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে। তাকে কেউ সমর্থন করেনি। প্রায় ১৪টি গ্রাম ঐক্যজোট হয়ে আমাকে সমর্থন করেছে। তাদের পক্ষে কোনো মানুষ নেই।'

বিএনপির প্রার্থী নূরুল হক আফিন্দী বলেন, 'সাধারণ মানুষের মাঝে ভোট নিয়ে একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাজ করছে। আমরা কথাবার্তা শুনছি, নৌকায় ভোট দিলেও পাস না দিলেও পাস। প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ থাকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি সজাগ থাকে, তাহলে তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে। আমি বিশ্বাস করি প্রশাসন এ ব্যাপারে সজাগ থাকবে। তারপরও অঘটন ঘটলে আমরা ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করব।'

স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুম মাহমুদ তালুকদার বলেন, 'আমি জনগণের মনোনীত প্রার্থী। আমার নির্বাচনে আসার একমাত্র কারণ জনগণ। নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত অনুকূলে আছে। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে আমি বিজয় লাভ করব।'

আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকবাল আল আজাদ বলেন, 'আমার বাবা দীর্ঘদিন জনগণের পাশে ছিলেন। নিঃস্বার্থভাবে তিনি মানুষের সেবা করে গেছেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী বাবার যোগ্য উত্তরসুরী মনে করে মানুষ আমাকে ভোট দেবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীক নৌকার বিজয় নিশ্চিতে আমি ভোটারদের সহযোগিতা চাই।'

নির্বাচন প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, 'সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে- এমন কোনো খবর এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। আশা করি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।'

 

বিআর/আরআর-০১