নিজের পূজায় নিজেই প্রতিমা কারিগর টিপু

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


অক্টোবর ২১, ২০২০
০৭:৫২ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ২১, ২০২০
০৭:৫৩ অপরাহ্ন



নিজের পূজায় নিজেই প্রতিমা কারিগর টিপু

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) থেকে ঢাকের কাঠিতে বেজে উঠবে উৎসবের আনন্দধ্বনি। শঙ্খ ও কাঁসরে ধ্বনিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসবের পবিত্র সুর। কাশের তালে নেচে উঠবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হৃদয়। ধুনুচীর ধোঁয়ায় উড়ে যাবে সকল অশুভ শক্তি। শিউলীর সুগন্ধে মাতোয়ারা পৃথিবীর আনন্দলোকে আজ প্রতিমার গায়ে রঙের শেষ আঁচড় বুলিয়েছেন মৃৎশিল্পীরা। তাদের একজন টিপু তালুকদার। তিনি অন্য প্রতিমা কারিগর থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।

টিপু নিজের পূজামন্ডপে নিজেই কারিগর। গত ১৫-২০ দিন ধরে কায়মনোবাক্যে দেবী দুর্গার পূর্ণ অবয়ব ফুটিয়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন। তিনি জামালগঞ্জের সাচনা বাজারের প্রয়াত যোগেশ তালুকদারের ছেলে। সাচনা বাজার দুর্যোধন তালুকদারের বাড়ির পূজামন্ডপ হিসেবে পরিচিত এই মন্ডপে টিপু ৪-৫ বছর ধরে প্রতিমা তৈরি করে আসছেন। পূজা এলেই তার মনে প্রতিমা তৈরির নেশা ভর করে। প্রায় সব পূজামন্ডপেই বাইরের মৃৎশিল্পীরা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে প্রতিমা তৈরি করলেও এক্ষেত্রে বিরল টিপু তালুকদার। কারণ নিজের বাড়ির পূজায় নিজেই প্রতিমা বানিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন তিনি।

সাচনা বাজারস্থ দুর্যোধন তালুকদারের পূজামন্ডপে গিয়ে দেখা যায়, নিজ মন্ডপে রঙ-তুলি নিয়ে ব্যস্ত টিপু তালুকদার। বাঁশ, খড় ও মাটির মিশ্রণে আপন হাতে তৈরি প্রতিমার গায়ে নিপুণ হাতের রঙিন ছোঁয়া দিচ্ছেন তিনি। একাগ্রচিত্তে দেবীর ধূসর অবয়বে রঙের যুৎসই ব্যবহার নিশ্চিত করে জগজ্জননী দেবী দুর্গার পরিপূর্ণ রূপ উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন এই শিল্পী। প্রবল ইচ্ছা ও শখের জায়গা থেকে প্রতিমা তৈরিতে হাত দেওয়া বলে জানান তিনি।

প্রায় ৩০ বছর বয়সী যুবক টিপুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বাড়ির এ দুর্গাপূজা খুব পুরোনো। বংশ পরম্পরায় প্রায় শত বছর ধরে এই দুর্গাপূজা চলে আসছে। মাঝে-মধ্যে নানা কারণে পূজানুষ্ঠান বাদ পড়লেও এখন পর্যন্ত এ ধারা ধরে রেখেছেন তারা। তাদের ভীমখালী ইউনিয়নের ঘাগটিয়া গ্রামের পুরোনো বাড়ি থেকে সাচনা বাজারের বর্তমান বাড়ি পর্যন্ত এ পূজা অব্যাহত আছে। মহিষ বলিদানের প্রথাও ছিল তাদের পূজায়। বলিকৃত মহিষের একটি মাথা এখনও তাদের বাড়িতে রক্ষিত আছে বলে জানান তিনি।

টিপু আরও জানান, নিজ হাতে প্রতিমা বানিয়ে পূজা করার শখ তার ছোটবেলা থেকেই। সেই শখ ও ইচ্ছার জায়গা থেকে তিনি প্রতিমা বানানো আয়ত্ত করতে স্কুল ফাঁকি দিয়ে এলাকার মৃৎ কারিগরদের কাছে গিয়ে দিনের পর দিন বসে থাকতেন। শুধু দুর্গাপূজার প্রতিমাই নয়, তাদের বাড়ির মনসা ও লক্ষ্মীপূজার প্রতিমাও তিনি তৈরি করে থাকেন। প্রতিমা তৈরির কাজে মজে থাকা তার একটা নেশা।

ছোটভাইয়ের প্রতিমা তৈরিতে আগ্রহ বিষয়ে বড়ভাই গোপাল তালুকদার বলেন, ‘নিজের প্রতিমা নিজে তৈরি করার মাঝে আলাদা একটা তৃপ্তি আছে। এই তৃপ্তিবোধটা টিপু আমাদের দিয়ে যাচ্ছে। তার প্রতিমা তৈরির এ মহৎ কাজটি বাড়ির সকলকে মুগ্ধ করে, আনন্দ দেয়। দেবী যেন তার মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন।’

 

বিআর/আরআর-০৫