জিয়াউল হক জিয়া, কুলাউড়া
অক্টোবর ২৫, ২০২০
০৯:৫৭ অপরাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ২৫, ২০২০
১০:৩৩ অপরাহ্ন
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার দু'টি বাঁশমহালের প্রায় ৩০ একর জায়গার বাঁশ কেটে ধ্বংস করেছে ভূমিখেকো একটি মহল। সামাজিক বনায়নের নামে বনবিভাগের সহযোগিতায় মহালের এসব বাঁশ কেটে ধ্বংস করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে বনবিভাগ এসব ঘটনার জন্য খাসিয়াদের দায়ী করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়ার বেগুনছড়া ও লবণছড়া বাঁশমহালের প্রায় ৩০ একর জায়গায় গত ৩-৪ মাসে মুলি ও মাকাল প্রজাতির বাঁশ কেটে ফেলেছে একটি মহল। এর আনুমানিক বাজারমূল্য ৮ লক্ষাধিক টাকা।
স্থানীয় লোকজনের দাবি, মূলত এসব বাঁশ কেটে পরিষ্কার করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর খাসিয়া সম্প্রদায় পান জুম করার পাঁয়তারা করছে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাসিয়ারা জানান, স্থানীয় বিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদার বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সামাজিক বনায়নের নামে স্থানীয় বাসিন্দাদের দিয়েই এসব বাঁশ কর্তন করাচ্ছেন। আর কর্মধা ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য হচ্ছেন এর মূলহোতা।
খাসিয়াদের অভিযোগ, বাঁশ কর্তনের বিষয়টি বিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদারকে জানালেও তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় খাসিয়াদের উপর দোষ চাপান ও অযথা তাদের দায়ী করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেগুণছড়া বাঁশমহালের পূর্ব-দক্ষিণ পাশের কয়েক একর জায়গায় মুলি ও মাকাল বাঁশ কেটে একেবারে সাবাড় করা হয়েছে। কাটা বাঁশ শুকিয়ে গেলে তা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এভাবে একসময় মহালের বাঁশ উজাড় হয়ে যায়। ফলে একদিকে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে সরকার বড় ধরণের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নলডরি বিট কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) অর্জুন কান্তি দস্তিদারের সহযোগিতায় এর আগেও ছোটকালাইগিরি, বড়কালাইগিরির মহাল থেকে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বাঁশ ও গাছ সাবাড় করা হয়েছে।
খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন আরও অভিযোগ করেন, ওই বন কর্মকর্তার যোগসাজশে এবং সহায়তায় বন একেবারে উজাড় হয়ে যাচ্ছে। হুমকির মুখে রয়েছে বেগুনছড়া, লবণছড়ার বাঁশ মহাল ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মূল্যবান গাছ। অর্জুন কান্তি দস্তিদার খাসিয়াদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাদের অযথা হয়রানি করেন।
এ ব্যাপারে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সংগঠন কোবরাজ আন্তঃপুঞ্জির খাসিয়া সম্প্রদায়ের নেত্রী ফ্লোরা বাবলী তালাং জানান, খাসিয়ারা বাঁশ কাটার সঙ্গে জড়িত নয়। মূলত বনবিভাগ স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে এসব বাঁশমহাল উজাড় করছে। তাদের এসব অপকর্ম আড়াল করতে খাসিয়াদের উপর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে।
অভিযোগ সম্পর্কে নলডরি বিট কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অর্জুন কান্তি দস্তিদার তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, বাঁশমহালের কয়েক একর জায়গা খাসিয়ারা জবরদখল করে রেখেছেন। তিনি সরকারি জায়গা উদ্ধার করতে সেখানে সামাজিক বনায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, জবরদখলকারী খাসিয়াদের বিরুদ্ধে গত ২০ অক্টোবর কুলাউড়া থানায় এবং ১৭ অক্টোবর মৌলভীবাজার আদালতে পৃথক মামলা দায়ের করেছেন।
সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, 'বনাঞ্চলসহ মহালের বাঁশ রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। বেগুনছড়া বাঁশমহালের বাঁশ সাবাড় হওয়ার বিষয়টি আমি জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
জেএইচ/আরআর-০১