বিজয়া দশমী আজ, মণ্ডপে মণ্ডপে বিদায়ের সুর

নিজস্ব প্রতিবেদক


অক্টোবর ২৬, ২০২০
০৫:৩৯ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ২৬, ২০২০
০৭:৩৫ অপরাহ্ন



বিজয়া দশমী আজ, মণ্ডপে মণ্ডপে বিদায়ের সুর

আজ মর্ত্যলোক থেকে স্বামীর ঘর কৈলাসে ফিরে যাবেন দেবী দুর্গা। বিজয়া দশমীতে আজ সোমবার বেলা ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সুরমা নদীর চাঁদনীঘাট এলাকায় দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে সমাপ্তি পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজার। 

দুর্গাপূজাকে ঘিরে প্রতিবছর উৎসব হয়। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে উৎসব হয়নি; হয়েছে শুধু সাত্ত্বিক পূজা। ভক্তরা বলছেন- করোনাভাইরাস এবার উৎসব উদ্যাপন করতে দেয়নি। শিগগির দুর্যোগ কেটে যাবে। আসছে বছর আড়ম্বরেই দুর্গোৎসব উদ্যাপন করা যাবে।

দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা সাধারণত নবমী পূজার মধ্য দিয়েই শেষ যায়। তাই গতকাল রবিবার নবমীর রাতেই সিলেটের মণ্ডপগুলোতে বেজে ওঠে বিদায়ের সুর। গতকাল রবিবার সকাল থেকেই শুরু হয় নবমী পূজার আনুষ্ঠানিকতা। মণ্ডপগুলোতে কল্পারম্ভ আর বিহিত পূজা করা হয়। পরে দেবীকে অঞ্জলি প্রদান করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্তি ও আসুরিক শক্তির বিনাশের প্রার্থনা জানান ভক্তরা। প্রতিবছর সন্ধ্যার পর মণ্ডপে মণ্ডপে আরতি প্রতিযোগিতা হলেও এবার পূজা থেকে এই পর্ব বাদ দেওয়া হয়। ছিল না প্রসাদ বিতরণের আনুষ্ঠাকিতাও। 

সনাতন ধর্মমতে, নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদ লাভ হয়। মহানবমীতে ভক্তরা মায়ের কাছে দেশ, জাতি ও বিশ্বের সকল জীবের মঙ্গল কামনায় আশীর্বাদ চেয়ে থাকেন। শাপলা, শালুক ও বলিদানের মাধ্যমে মহানবমী পূজা হয়। নবমী সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা। মহিষাসুর নিধনের সময় দেবী দুর্গা প্রচণ্ড ক্রোধে কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেছিলেন। তাই পূজার এই আচারের সময় দেবীকে চামুন্ডা রূপে পূজা করা হয়। পূজার এই মুহূর্তটি আরও একটি কারণে স্মরণীয়। দেবী দুর্গার আশীর্বাদ নিয়ে শ্রীরামচন্দ্র এই মুহূর্তেই রাবণকে বধ করেছিলেন।

এবার সিলেট জেলায় ৫৮৪টি এবং সিলেট নগরে ৬৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রায় সব ভক্তই মাস্ক পরে পূজামণ্ডপে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী মণ্ডপগুলোতেও নেওয়া হয়েছে যথাযথ ব্যবস্থা। নবমীর দিনে সিলেট নগরের সব মণ্ডপেই ভক্তদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। মিরাবাজারের শ্রীশ্রী বলরাম জিউর আখড়ায় গিয়ে দেখা যায়, মণ্ডপের প্রবেশপথে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে ভক্তদের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে। যারা মাস্ক পরে আসেননি তাদেরকে মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। স্যানিটাইজার দিয়ে হাতও জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। 

সার্বজনীন পূজা কমিটি মীরাবাজারের সহ সাধারণ সম্পাদক বিজয় ভূষণ ধর সিলেট মিররকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রীশ্রী বলরাম জিউর আখড়ায় পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। থার্মাল স্ক্যানার, স্যানিটাইজার, মাস্কসহ সব ধরণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নারী ও পুরুষদের প্রবেশের জন্য পৃথক প্রবেশ পথের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’  

ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণ আর অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুর্গাপূজা। সপ্তমী তিথিতে নবপত্রিকা সন্ধান শেষে চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে প্রাণসঞ্চার করা হয় দেবীর মৃন্ময়ীতে। গত শনিবার ছিল মহা অষ্টমী পূজা। আজ প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজা। 

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা সিলেট মিররকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদ্যাপন করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে আমরা এবার উৎসব বর্জন করে সাত্তি¡ক পূজা উদ্যাপন করেছি। প্যান্ডেমিক থেকে জাতির মুক্তির জন্য প্রতিদিন মায়ের কাছে প্রার্থনা জানিয়েছি।’ 

এবার প্রতিমা শোভাযাত্রা হবে না জানিয়ে মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা বলেন, ‘সরস্বতী পূজা ছাড়া অন্য কোনো পূজায় সিলেটে শোভাযাত্রা হয় না। তাই এবারও হবে না। এছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে আরও কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা বেলা ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সুরমা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন করব। প্রতিবছর দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে প্রতিমা নিয়ে আসেন সুরমায় বিসর্জনের জন্য। আমরা এবার তাদেরকে এখানে আসতে মানা করেছি। সিলেট নগরের মণ্ডপের প্রতিমাই শুধুই এখানে বিসর্জন করা হবে। মণ্ডপ সংশ্লিষ্ট ছাড়া অন্য কেউ এখানে ভিড় করতে পারবেন না। নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা তো কোনোভাবেই আসতে পারবেন না। প্রতিমা বিসর্জনে মাইকও বাজানো যাবে না।’

এনপি/বিএ-১০