বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ
নভেম্বর ১১, ২০২০
১০:৩২ অপরাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ১২, ২০২০
০১:০৫ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে রক্তি নদীর উপর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এতদিনে শেষ হয়েছে শুধু মূল সেতুর কাজ। এপ্রোচসহ আনুষাঙ্গিক সব কাজ এখনও বাকি রয়ে গেছে। আজ অবধি চলাচলের উপযোগী না হওয়ায় যান ও যাত্রীখরায় ভুগছে নবনির্মিত এপ্রোচবিহীন সেতুটি। খেয়া পারাপারে অতিষ্ট পথচারীরা এর দিকে চেয়ে চেয়ে শুধু দিন গুনছেন- কবে এই সেতুর উপর দিয়ে হাঁটবেন তারা।
তবে আশার কথা হচ্ছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ৮-৯ মাসের মধ্যে সাচনা বাজার ইউনিয়নের দুর্লভপুর অংশে রক্তি নদীর উপর নবনির্মিত সেতুটির অবশিষ্ট কাজ শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সে অনুযায়ী কাজও চলছে। সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে। তবে যথাসময়ে কাজ শেষ হবে কি না সে ব্যাপারে সন্দিহান ফেরি পারাপারে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, উপজেলার সাচনা বাজার ইউনিয়নকে দুই ভাগে ভাগ করেছে সুরমার শাখা নদী রক্তি। যাতায়াতের সুবিধার্থে এ নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে যখন সেখানে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় তখন দুইপাড়ের প্রায় ২০ থেকে ২৫টি গ্রামের অন্তত ২৫ হাজার মানুষ আশায় বুক বাঁধতে থাকেন। বিশেষ করে রক্তির পূর্বপাড়ের ১৩টি গ্রামের মানুষ এতে বেশি আশান্বিত হন। কারণ ওইপাড়ের মানুষেরা দীর্ঘদিন যাবৎ মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছিলেন। যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে উপজেলা সদর ও সাচনা বাজারে আসতে হলে তাদেরকে শুধু দুর্লভপুর খেয়াঘাটেই দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হয়। এছাড়া উপজেলার অন্য ইউনিয়নের মানুষও ওই পথ ধরে চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
আরও জানা গেছে, খেয়া নৌকা সেতুর একপাড় থেকে আরেকপাড় হয়ে সুরমার অপর পাড় ঘাগটিয়া থেকে নির্ধারিত গন্তব্যে ফিরতে সময় লাগে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট। তখন পর্যন্ত ফেরির অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। এই জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে রক্তির উপর ব্রিজ নির্মাণের কাজে হাত দেয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। কিন্তু নির্মাণ কাজ শুরুর প্রায় ৭ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত সেতুটি পুরোদস্তুর চালু না হওয়ায় জনমনে অস্বস্তি কাজ করছে। যদিও এপ্রোচ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে, তারপরও কবে নাগাদ চলাচল উপযোগী হবে এ সেতু তা নিয়ে হতাশার কথাই জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬১ টাকা ব্যয়ে মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালে। ৭২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭.৮ মিটার প্রস্থের এ সেতুর কাজ সমাপ্ত করে কাজী নাছিম উদ্দিন অ্যান্ড হাজী সাদেক আলী সন্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে এপ্রোচ নির্মাণের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় নেত্রকোনার বাছিত প্রকৌশলী নামের আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। তার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে মূল সেতুর কাজ শেষ হয়ে পেরিয়ে গেছে আরও প্রায় ৩ বছর। কিন্তু এপ্রোচ নির্মাণের বিলম্বিত কারণ হিসেবে সাম্প্রতিক বন্যা ও করোনাকালীন দুর্যোগকে দায়ী করেছে উপজেলা এলজিইডি অফিস।
এ ব্যাপারে সাচনা বাজার ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের রেজওয়ান আহমদ আলম বলেন, ‘রক্তি নদীর পূর্বপাড়ের হাজার হাজার মানুষকে উপজেলা সদর এবং সাচনা বাজারে দৈনিক যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু এ নদী পার হতেই প্রায় ঘন্টাখানেক সময় চলে যায়। প্রয়োজনীয় কাজ সারতে বাজারে গিয়ে যদি কোনো কারণবশত বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়, তাহলে ফেরি পাওয়া যায় না। তাই অনেকসময় কাজ ফেলেই বাড়িতে ফিরতে হয়। এ দুর্ভোগ লাঘবে আমরা দ্রুত এ সেতুর কাজ সমাপ্ত দেখতে চাই।’
একই ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মো. আব্দুস সোবহান বলেন, ‘ব্রিজ চালু না হওয়ায় ফেরি পার হইয়া বাজার-হাটে যাইতে হয়। আর ফেরিঘাটে দাঁড়াইয়া থাইক্যাই অখল সময় চইলা যায়। এতদিন ধইরা ব্রিজের কাজ শুরু হইছে, মাঝখানে বন্ধ হইয়া গেছিল, আবার শুরু হইছে। দেখা যাক কোনদিন শেষ হয়। জানি না ফেরি পারাপারের এ দুর্ভোগ কবে দূর হইব।’
সাচনা বাজার ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও রামনগর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘অনেকদিন ধরে এ ব্রিজের কাজ ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। কাজ যদিও শুরু হয়েছে, তবে কাজের গতি দেখে মনে হয় আগামী দুই বছরেও শেষ হবে কি না সন্দেহ। এতে করে আমরা মারাত্মক দুর্ভোগে আছি। ফেরি পারাপারে ২ টাকার জায়গায় ৫ টাকা লাগে আর সময়ক্ষেপণ তো আছেই। সাধারণ মানুষের এ সমস্যা দেখবে কে?’
সাচনা বাজার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হক আফিন্দী বলেন, ‘এ ব্রিজটা সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। এক ব্রিজে দুইবার টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে যেমন সরকারি অর্থের অপচয়, অন্যদিকে সময়ক্ষেপণও হচ্ছে। আর মানুষের ক্ষতি-দুর্ভোগ তো আছেই। ফেরি চলাচলে হেনস্থার শিকার মানুষকে মুক্তি দিতে যত দ্রুত সম্ভব এর কাজ শেষ করা প্রয়োজন।’
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘চারদফা বন্যা আর করোনায় ব্রিজের কাজটা পিছিয়ে পড়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও কাজে হাত দিতে পারিনি। তাই এপ্রোচ নির্মাণের কাজটা শেষ হয়নি। এখন কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে আশা করি কাজ শেষ হয়ে যাবে।’
বিআর/আরআর-০৩