উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর
নভেম্বর ১৪, ২০২০
১২:১১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ১৪, ২০২০
১২:৪৭ পূর্বাহ্ন
সিলেটের ওসমানীনগরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গজিয়া নামক স্থান থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে একটি সেতুর জন্য স্বাধীনতার পর থেকে ধর্ণা দিচ্ছেন এলাকাবাসী। প্রায় সহস্রাধিক জেলে ও নিম্ন আয়ের মানুষের চলাচলের অন্তরায় বাঁশের সাঁকোর স্থলে সেতু নির্মাণে দায়িত্বশীল কাউকে তেমন উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি কখনও। তবে ভোটের সময় এলে প্রতিবারই ভাগ্যবঞ্চিতরা সেতুর আশ্বাসে ভোট দেন। কিন্তু ভোট চলে গেলে সেই সাঁকোর পুরোনো পালাবদল করেই চলে তাদের নিত্যচলাচল।
জানা যায়, পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে জেলে ও নিম্ন আয়ের শতাধিক পরিবারের বসবাস। গ্রামের একদিকে বুড়ি নদী এবং অন্যদিকে সাদিখাল। সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্যের উদ্যোগে গ্রামবাসীর জন্য একটি সেতু নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘দৌলতপুর অনিল দাশের বাড়ি ও গজিয়া হাজী তাজ উল্ল্যার বাড়ি সংলগ্ন বুড়ি নদীর ওপর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। এ সেতুটি নির্মাণ হলে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে পশ্চিম পৈলনপুর ও সাদিপুর ইউনিয়নবাসীর মধ্যে। কিন্তু কতিপয় প্রভাবশালী ‘ভোটের রাজনীতি’ বেগবান রাখতে দৌলতপুর-গজিয়া সেতু নির্মাণের বিরোধীতা শুরু করেছে। তারা সেতুর স্থান পরিবর্তন করে অন্যত্র নির্মাণের চক্রান্ত শুরু করেছে। এতে আবারও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে দৌলতপুর, মশাখলা ও মশাদিয়া এলাকার লোকজনের মধ্যে। ২০১৭ সালে একই স্থানে বুড়ি নদীর উপর ৬০ ফুট দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে দরপত্র আহ্বান করা করা হলেও পরবর্তীতে প্রভাবশালীদের বিরোধীতায় অর্থ সংকট দেখিয়ে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, হতদরিদ্র গ্রামবাসীর কষ্ট লাঘবে সেতু নির্মাণের স্বার্থে সড়ক বড় করার জন্য নিজের বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে ভূমি দান করেছেন গজিয়া গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি তাজ উল্যা। গ্রামবাসীও নিজ উদ্যোগে সড়কের সংস্কারকাজ করছেন। তাদের বিশ্বাস, এবার এ সড়কে বাঁশের সাঁকোর স্থলে সেতু নির্মাণ হবে।
গ্রামবাসী জানান, বর্ষায় পানি বেড়ে সাঁকো তলিয়ে গেলে প্রায় ৬ মাস বিদ্যালয়ে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরা। গ্রীষ্মে সাঁকো পাড়ি দিয়ে ছোট শিশুরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় পানিতে পড়ার একাধিক ঘটনাও ঘটেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার করুণ দশায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বেশি এখানে।
৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ঝিনুক দাশ বলে, 'বর্ষায় সাঁকো না থাকায় নৌকায় অথবা সাঁতার কেটে নদী পার হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। কিন্তু সবসময় তা সম্ভব হয় না। সেতুটি নির্মাণ হলে আমরা প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতে পারব।'
স্থানীয় বাসিন্দা মতি লাল দত্ত বলেন, '২০১৭ সালে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করার পরও প্রভাবশালী কিছু লোকের কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। এবারও সেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করি গ্রামবাসীর কথা বিবেচনায় নিয়ে তা বাস্তবায়িত হবে।'
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সাদিপুর ইউনিয়নের সদস্য বখতিয়ার হোসেন বলেন, 'দৌলতপুর এলাকার লোকজন পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। যে রাস্তায় সেতু নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে তার একটা অংশ আমার ওয়ার্ডের সঙ্গে সংযুক্ত। দৌলতপুরের অধিকাংশ লোকজন মৎস্যজীবী। একটি সেতুর অভাবে তারা নানা ভোগান্তির শিকার। কিন্তু একটি মহল হাজার হাজার মানুষের কথা না ভেবে ২/৩টি পরিবারের উপকারের জন্য সেতুটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত করছে, যা কষ্টদায়ক।'
পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের সদস্য সাহেন মিয়া বলেন, 'দৌলতপুর, মশাদিয়া ও মশাখলা এলাকার কয়েক হাজার মানুষকে একটি সেতুর অভাবে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ইদানিং সেতু নির্মাণের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও কয়েকজন লোক এর বিরোধীতা করছেন। এলাকার লোকজনের যাতায়াতের স্বার্থে আমরা সবাই চাই সেতুটি নির্ধারিত স্থানেই হোক।'
এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মিলন কান্তি রায় বলেন, 'গজিয়া-দৌলতপুর সড়কে ৫০ ফুট দীর্ঘ সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। ঢাকার একটি বিশেষজ্ঞ দল স্থান পরিদর্শন করার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
ইউডি/আরআর/০৫