ফারহান মাসউদ আফছর, গোলাপগঞ্জ
নভেম্বর ১৫, ২০২০
১২:২০ পূর্বাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ১৫, ২০২০
১২:২০ পূর্বাহ্ন
সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনের তফসিল এখনও প্রকাশিত হয়নি। শুরু হয়নি পৌর নির্বাচনের প্রাথমিক ধাপও। নির্বাচন কমিশন থেকে কখন পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে তাও জানা নেই কারও। তবে ইতোমধ্যে পৌরসভা এলাকায় নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়ে গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের কাছে। উঠান বৈঠক আর কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে চলছে নির্বাচনী প্রচারের কার্যক্রম।
এদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে যেকোনো দিন তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। তফসিল ঘোষণা না হলেও পৌরসভার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা মাঠে নামতে শুরু করে দিয়েছেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইচ্ছুক সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রায় প্রতিদিনই নিজে অথবা দলবল নিয়ে শোডাউনের চেষ্টার পাশাপাশি পৌর এলাকায় কর্মী সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় শুরু করছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ অনলাইন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা করছেন তারা।
জানা গেছে, মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি তোড়জোড় শুরু করেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাড়াও পৌরবাসীদের মধ্যেও নানা আলোচনা-সমালোচনা ও প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
গত ২০১৬ সালে গোলাপগঞ্জের মেয়র নির্বাচিত হন সিরাজুল জব্বার চৌধুরী। ২০১৮ সালে তিনি মারা গেলে উপনির্বাচনের মাধ্যমে মেয়র নির্বাচিত হন আমিনুল ইসলাম রাবেল। এর পর থেকে দলীয় সহানুভূতি আদায় করে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহীরা দলীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থানকে সংহত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করতে যারা মাঠে নেমে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাবেল, সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ পাপলু এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক, রনকেলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী রিংকু। এছাড়া পৌর আওয়ামী লীগ নেতা মাজেদ শরীফ চৌধুরীর নামও শোনা যাচ্ছে। তিনিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুযোগ চেয়েছেন এবং মনোনয়ন দিলে এলাকাবাসীর সুখে-দুঃখে পাশে থাকার অঙ্গিকার করে প্রচার চালাচ্ছেন।
অন্যদিকে বিএনপির ব্যানারে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে আছেন- উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য মহিউসুন্নাহ চৌধুরী নার্জিস ও সদস্য গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহিন।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং রনকেলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী রিংকু বলেন, 'আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করেছি আর বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। পৌর এলাকার সন্তান বলে সবসময় এই অঞ্চলের মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। তাই আমার সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে যদি দল আমাকে নৌকা প্রতীক দেয় তাহলে নির্বাচন করব। আশা করি দল আমাকে মনোনীত করবে। এমন চিন্তা থেকেই আমি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।'
আগামী পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু বলেন, 'গত নির্বাচনে দল আমাকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছিল। আমি আশা করি দল আমাকে এবারও মনোনয়ন দেবে। আমি পৌরসভার প্রথম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর পৌর এলাকার রাস্তাঘাটের পাকাকরণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, গরিব মানুষদের নলকূপ দেওয়াসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছি। সামনের নির্বাচনে জনগণ আমাকে পবিত্র ভোট দিয়ে যদি নির্বাচিত করেন, তাহলে পৌরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পৌরসভাকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে গড়ে তুলব।'
এদিকে আগাম প্রচারে এগিয়ে রয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান পৌর মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল। ইতোমধ্যে তিনি কর্মী সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় শুরু করেছেন। মেয়র রাবেল বলেন, 'আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে শুরু করে বর্তমানে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছি। আমি পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর গত দুই বছরে পৌর এলাকায় একের পর এক দৃশ্যমান সুষম উন্নয়ন করেছি। আমি শতভাগ আশাবাদী দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করব।'
তিনি বলেন, 'পৌরসভার উন্নয়নের কাজ আপনারা সাংবাদিকরা তো চোখে দেখছেন। পৌরসভার রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন, রাস্তায় লাইটিং, গণশৌচাগার, মসজিদ, মন্দির, রনকেলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে গার্লস ফেসিলিটিজ রুমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। আমি পুনরায় মেয়র হলে ভবিষ্যতেও জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে প্রাণপন চেষ্টা করব।'
অন্যদিকে বিএনপির ব্যানারে মনোয়নপ্রত্যাশী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহিন বলে, 'জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যদি আমাকে মনোনীত করে তাহলে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। আমি আশাবাদী দল আমাকে মনোনীত করবে। আমি যদি মেয়র নির্বাচিত হই, তাহলে পৌর এলাকার রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সব কাজ বাস্তবায়নের সর্বাত্মক চেষ্টা করব।'
বিএনপির থেকে মনোয়নপ্রত্যাশী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য মহিউসুন্নাহ চৌধুরী নার্জিস বলেন, 'পৌর নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ যদি অনুকূলে থাকে, তাহলে আমি দল থেকে মনোয়ন চাইব। আর যদি দল মনোনীত করে তাহলে আমি নির্বাচন করব।'
গোলাপগঞ্জ উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন থেকে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন সম্পর্কে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। আশা করছি শিগগির কিছু জানানো হতে পারে।'
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী সিলেট মিররকে বলেন, 'আশা করি তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে আগামী পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করবে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তাই দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে জনগণ নৌকা প্রতীককে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে।'
এমএম/আরআর-০৩