দেশের মধ্যে মাস্কের ব্যবহার সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে

নিজস্ব প্রতিবেদক


নভেম্বর ১৫, ২০২০
০৬:০২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ১৫, ২০২০
০৬:১০ পূর্বাহ্ন



দেশের মধ্যে মাস্কের ব্যবহার সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে

দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। সিলেটেও গত এক সপ্তাহ ধরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। করোনা সংক্রমণরোধে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। কিন্তু সিলেটের মানুষের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারের কোনো আগ্রহই যেন নেই। সরকারি এক পরিসংখ্যানেও এই চিত্র উঠে এসেছে। সারা দেশের মধ্যে সিলেট বিভাগে মাস্কের ব্যবহার সবচেয়ে কম। মাত্র ১৭ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেন। বাকি ৮৩ শতাংশই মাস্ক ব্যবহার করেন না। 

দেশে যে সংখ্যক মানুষ মাস্ক ব্যবহার করেন তার মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। সারা দেশে ৩১ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করেন। পুরুষদের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারকারীর হার ২৭ শতাংশ আর নারীদের ক্ষেত্রে এ হার ৪০ শতাংশ। সিলেট বিভাগের ক্ষেত্রেও একই চিত্র পাওয়া গেছে। তবে মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। ওই বিভাগের ৫২ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করেন। 

দেশে মাস্ক ব্যবহার নিয়ে সম্প্রতি চালানো এক পর্যবেক্ষণ জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। সিলেট জেলা পুষ্টি সমন্বয় কমিটির এক সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। রিস্ক কমিউনিকেশন এন্ড কমিউনিটি এনগেজমেন্ট (আরসিসিই) পরিচালিত এক জরিপে প্রাপ্ত তথ্য সভায় তুলে ধরেন সিলেট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ সিরাজুম মুনীর রাহিল। গত বৃহস্পতিবার সিলেটের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক ও জেলা পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভাপতি এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম। জেলা সিভিল সার্জন ও পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. প্রেমানন্দ মন্ডলের পরিচালনায় সভায় সিলেটের সার্বিক পুষ্টি পরিস্থিতি ও পুষ্টি সমন্বয় কমিটির কর্মপরিধি উপস্থাপন করেন সিলেট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ সিরাজুম মুনীর রাহিল। 

সভায় আরসিসিই পরিচালিত জরিপের তথ্য তুলে জানানো হয়, দেশের ৭ হাজার ৩০৮টি স্পটে এই জরিপ চালানো হয়। বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল, হাসপাতাল-ক্লিনিক, চায়ের দোকান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হোটেল-রোস্তোরা, ট্রাফিক পয়েন্ট, মার্কেট, সরকারি অফিসসহ জনসমাগম হয় এমন স্থানে পর্যবেক্ষণ জরিপ চালানো হয়। এতে ২ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৭ জনকে পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়। জরিপে প্রাপ্ত চিত্র তুলে ধরে সভায় জানানো হয়, সারাদেশের মধ্যে সিলেট বিভাগে মাস্ক ব্যবহারের সংখ্যা সবচেয়ে কম। প্রতি ১০০ জনে মাত্র ১৭ জন মাস্ক ব্যবহার করে থাকেন। একই চিত্র ময়মনসিংহ বিভাগের। সিলেটে বিভাগে মাস্ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। বিভাগে মাত্র ১৫ শতাংশ পুরুষ মাস্ক ব্যবহার করেন। আর এক্ষেত্রে নারী ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৫ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগেও মাত্র ১৭ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করেন। পুরুষদের মধ্যে ১৩ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ মাস্ক ব্যবহার করেন। 

জরিপের তথ্য মতে, সারা দেশে মাত্র ৩১ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে পুরুষদের সংখ্যা ২৭ শতাংশ এবং ৪০ শতাংশ নারী। দেশের অন্যান্য বিভাগগুলোতেও প্রায় একই চিত্র পাওয়া গেছে। তবে মাস্ক ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগ। এই অঞ্চলের শতকরা ৫২ জন মাস্ক ব্যবহার করেন। তাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ নারীর বিপরীতে ৫০ শতাংশ পুরুষ মাস্ক ব্যবহার করেন। বরিশাল বিভাগে ২৭ শতাংশ পুরুষ ও ৩৭ শতাংশ নারী মিলিয়ে মাত্র ২৯ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করেন। 

রাজধানী ঢাকাতে বসবাসকারীর অর্ধেক মানুষও মাস্ক ব্যবহার করেন না। মাত্র ৩৩ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করেন। বিভাগে পুরুষদের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ মাস্ক ব্যবহার করেন। খুলনায় ২৯ শতাংশ নারী ও ১৮ শতাংশ পুরুষ মিলিয়ে বিভাগে মাস্ক ব্যবহার করেন ২১ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ৪০ জন ও পুরুষ ২৭ জন মাস্ক ব্যবহার করেন। গড়ে বিভাগে মাস্কের ব্যবাহার ৩০ শতাংশ। রংপুর বিভাগে মাস্ক ১৯ শতাংশ পুরুষ ও ৩৪ শতাংশ নারী মাস্ক ব্যবহার করেন। এ বিভাগে মাত্র ২২ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করেন। 

পর্যবেক্ষণ জরিপে দেখা যায়, দেশের সিটি করপোরেশন এলাকায় ৫০ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করেন। এখানেও ৫৫ শতাংশ নারীর বিপরীতে ৪৮ শতাংশ পুরুষ মাস্ক ব্যবহার করছেন। সিটি করপোরেশন ছাড়া দেশের অন্যান্য আরবান (শহর) অঞ্চলে মাস্ক ব্যবহার তুলনামূলক কম (৩২ শতাংশ)। সেখানে ৪০ শতাংশ নারীর বিপরীতে ২৯ শতাংশ পুরুষ মাস্ক ব্যবহার করেন। এছাড়া রুরাল (গ্রামীণ) অঞ্চলে মাস্ক ব্যবহার করেন মাত্র ২৩ শতাংশ মানুষ। এখানেও ৩২ শতাংশ নারী ও ২০ শতাংশ পুরুষ মাস্ক ব্যবহার করেন। 

সভায় জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম সিলেটে করোনার বিস্তার ঠেকাতে সবাইকে সচেতন হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করার তাগিদ দেন। পাশাপাশি পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানো এবং চা শ্রমিক, পাথর শ্রমিক, অতি দরিদ্র, বঞ্চিত ও সীমান্তবর্তী মানুষের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন জেলা প্রশাসক। 

সভায় উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা সমাজসেবা অফিসার নিবাস রঞ্জন দাশ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. বায়জীদ খান, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা কাজী আশরাফুল ইসলাম, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. মির্জা লুৎফুল বারী, ডা. স্বপ্নীল সৌরভ রায়, ইউনিসেফ সিলেটের পুষ্টি কর্মকর্তা নিম্মি হোসেন, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ রেনু, গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মনিজার চৌধুরী, জকিগঞ্জ উপজেলা মেডিকেল অফিসার ডা. এস এম আব্দুল আহাদ, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আজাদুর রহমান, জেলা সহকারী তথ্য অফিসার উজ্জ্বল পাল, জেলা শিক্ষা অফিসের পরিদর্শক, মহসিনুর রহমান, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির প্রশিক্ষক (কৃষি) মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, সেভ দ্য চিলড্রেনের ডা. মোহাম্মদ রাইসুল হক ও ছামিউল ইসলাম।

আরসি/বিএ-০১