নেই সাব-রেজিস্ট্রার, ভোগান্তিতে কমলগঞ্জবাসী

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি


নভেম্বর ১৬, ২০২০
০৬:১০ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ১৬, ২০২০
০৭:৩৩ অপরাহ্ন



নেই সাব-রেজিস্ট্রার, ভোগান্তিতে কমলগঞ্জবাসী

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে প্রায় ১ মাস ধরে বন্ধ ছিল জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন শত শত ভূমি ক্রেতা ও বিক্রেতারা। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সার্বক্ষণিক সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় ভূমি ক্রেতা ও বিক্রেতাদের লাগামহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভোগান্তির পাশাপাশি সরকারও হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। এছাড়া এ অফিসের সঙ্গে জড়িত প্রায় অর্ধশতাধিক দলিল লেখক বেকার সময় পার করছেন।

জানা গেছে, কমলগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুল কাদির চলতি বছরের অক্টোবর মাসে এখান থেকে বদলি হওয়ার পর আর কোনো সাব-রেজিস্ট্রার এখানে পদায়ন করা হয়নি। রেজিস্ট্রি না হওয়ায় এ উপজেলার শত শত জমি ক্রেতা-বিক্রেতা ও জরুরি কাজে দলিল উত্তোলনকারীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।

এদিকে, গত ৫ নভেম্বর পার্শ্ববর্তী জুড়ি উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার মঞ্জুরুল আমিনকে কমলগঞ্জের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কমলগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের পদ শূন্য থাকায় পার্শ্ববর্তী জুড়ি উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার মঞ্জুরুল আমিন সপ্তাহে দুইদিন অফিস করেন। ১ম কর্মদিবস বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) প্রায় দেড় শতাধিক ভূমি রেজিস্ট্রেশন করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবারের পর থেকে আবারও বন্ধ থাকে ভূমি রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম। প্রায় ১০ দিন পর গত রবিবার (১৫ নভেম্বর) তিনি অফিস করেছেন।  

রবিবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে কমলগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে দেখা যায়, ভূমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য শত শত মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। সকাল ১০টা থেকে ভুক্তভোগী মানুষ অপেক্ষা করছেন সাব-রেজিস্ট্রারের জন্য। কিন্তু মঞ্জুরুল আমিনের মৌলভীবাজারে একটি জরুরি মিটিং থাকায় তিনি বেলা সাড়ে ৩টায় এসে অফিস শুরু করেন। সকাল থেকে রাত অবধি মানুষ অপেক্ষা করেছেন দলিল পাওয়ার আশায়।

এ সময় করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারের নেওয়া ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতির বাস্তব কার্যক্রম দেখা যায়নি কমলগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। অধিকাংশ ভূমি ক্রেতা ও বিক্রেতা মাস্ক ছাড়াই জমি রেজিস্ট্রেশন করেছেন। শুধু ক্রেতা-বিক্রেতাই নন, নকলনবীশ লেখক ও দলিল লেখকরাও মাস্ক ছাড়াই ঘোরাফেরা করেছেন।

ভুক্তভোগী জালালিয়া গ্রামের মো. আহমদ আলী, কেচুলিটি গ্রামের আব্দুর রব, কাজিরগাঁও গ্রামের মালিক মিয়া, গোপীনগর গ্রামের মহরজান বিবি, ধর্মপুর গ্রামের মদন কর, গোপীনগর গ্রামের ময়ূর বেগম, শ্রীপুর গ্রামের সরলা বেগম ও ঠাকুর বাজার গ্রামের এখলাছুর রহমানের সঙ্গে আলাপকালে তারা সিলেট মিররকে জানান, তারা সকাল থেকে জমি রেজিস্ট্রির জন্য অপেক্ষা করছেন। কখন জমি রেজিস্ট্রি করে বাড়ি ফিরবেন তা নিয়ে তারা বেশ চিন্তায় পড়ে গেছেন। আদৌ ওইদিন জমি রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তারা। একটি মিটিং শেষ করে সাব-রেজিস্ট্রার আসতে দেরি হওয়ায় তাদের দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষা করেও যদি তারা জমি রেজিস্ট্রি করে দলিল হাতে পান তাতেই তারা খুশি। এছাড়া এখানে একজন সাব-রেজিস্ট্রার পদায়নের দাবি জানান তারা।

কুলাউড়া থেকে এই অফিসে জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা মিহির দেব বলেন, 'দুর্ঘটনার কবলে আমার পা ভেঙে গেছে। ভাঙা পা নিয়ে সকাল থেকে এ অফিসে এসে অপেক্ষা করছি ভূমি রেজিস্ট্রির জন্য।'

এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইজ্জাদুর রহমানের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, এ সমিতির ৪৭ জন দলিল লেখক কয়েকশ দলিল রেজিস্ট্রির অপেক্ষায় ছিল। আমাদের এখানে সার্বক্ষণিক সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় ভুক্তভোগী ক্রেতা-বিক্রেতারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এখানে একজন সাব রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়া আবশ্যক হয়ে পড়েছে।'

বর্তমানে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সাব-রেজিস্ট্রার মঞ্জুরুল আমিনকে কমলগঞ্জের সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি। 

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আব্দুল মছব্বিরের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি জানান, কমলগঞ্জে ভূমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভোগান্তির মাত্রা দূর্বিষহ হয়ে পড়েছে। কমলগঞ্জে সার্বক্ষণিক সাব-রেজিস্ট্রার না দিলে এ ভোগান্তি দীর্ঘদিনের হয়ে দাঁড়াবে।

তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান বর্তমানে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সাব-রেজিস্ট্রার মঞ্জুরুল আমিনকে কমলগঞ্জের সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য।

এ ব্যাপারে মঞ্জুরুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, 'কমলগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় আমাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহে দুইদিন রবিবার ও সোমবার কমলগঞ্জে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দায়িত্বপালন করব।' 

তিনি আরও বলেন, 'আমরা চেষ্টা করছি সকলকে স্বাস্থ্য সচেতন করতে। যারা এখানে ভূমি রেজিস্ট্রি করতে আসবেন তাদেরকে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করে আসতে হবে। আগামীতে মাস্ক ছাড়া কারও ভূমি রেজিস্ট্রি করা হবে না।'

 

এসডি/বিএন-০৩/আরআর-০২