জৈন্তাপুরে মাদরাসা পরিচালনায় অনিয়মের অভিযোগ

জৈন্তাপুর প্রতিনিধি


নভেম্বর ২১, ২০২০
০৯:২৫ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ২১, ২০২০
০৯:২৫ অপরাহ্ন



জৈন্তাপুরে মাদরাসা পরিচালনায় অনিয়মের অভিযোগ

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের জৈন্তাপুর মহিলা মাদরাসার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ফুঁসে উঠেছেন এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, মাদরাসাটির সাবেক পরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতায় এটি এখন ধ্বংসের পথে পা বাড়িয়েছে। মাদরাসায় সার্বিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তাই একাত্ম হয়েছেন নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষ।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা সদরে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জৈন্তিয়া জামিয়া ইসলামিয়া মহিলা মাদরাসা। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের সম্পৃক্ততা থাকলেও হঠাৎ করে নিজের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে কথিত পরিচালক এডভোকেট আব্দুল আহাদ মাদরাসার নাম ভাঙিয়ে ব্যবসার ফন্দি শুরু করেন। শিক্ষানুরাগী ও প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যক্তিদের সরিয়ে নিজের আত্মীয়-স্বজনদের কমিটির সদস্য করে শুরু হয় মাদরাসার নামে দেশে-বিদেশে বাণিজ্য। কমিটিতে স্থান নেই দাতা কিংবা প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের। স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের মাদরাসার নামে দেওয়া জমি ও একজন প্রবাসীর টাকায় গড়ে ওঠা ভবনে মাদরাসার পাঠদানে চলে আব্দুল আহাদের একক কর্তৃত্ব। তার অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন মাদরাসা সুপার রদবদল করেছেন তিনি। 

তাই ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধংসের হাত থেকে রক্ষা করতে ফুঁসে উঠেছেন নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নের অভিভাবক, শিক্ষানুরাগীসহ সাধারণ মানুষজন। তারা মহিলা মাদরাসা নিয়ে এডভোকেট আব্দুল আহাদের লাগামহীন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট গত ৩ সেপ্টেম্বর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সোলাইমান হোসেন সরেজমিনে তদন্ত করেন এবং গত ৫ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মূলত মাদরাসার হিসাব সুপার ও সভাপতির যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও তা কখনও মানা হয়নি। উক্ত হিসাবে আগত সংগৃহিত তহবিলের আয়-ব্যয় ও আগত নগদ টাকার হিসাব বিধি মোতাবেক পরিচালিত হয়নি বা কোনো রেকর্ড লিপিবদ্ধ করা হয়নি। সংগঠনের একক কর্তাব্যক্তি হিসেবে আব্দুল আহাদ আত্মীয়করণের মাধ্যমে সংগঠনের নাম ব্যবহার করে মাদরাসা পরিচালনা করে আসছেন।

তিনি প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করেন, যেহেতু মাদরাসাটি এর নিজ নামীয় ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত, সেহেতু সংগঠনের মাধ্যমে পরিচালিত বা সংগঠনের মাদরাসা বলে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে দান-অনুদান ও নগদ টাকা গ্রহণ করে এলাকাবাসীর সম্পৃক্ততা ছাড়াই নিবন্ধনহীন সংগঠনের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় এলাকাবাসীসহ সর্বসাধারণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

সর্বশেষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে এলাকাবাসী বৈঠক করলে তিনি মাদরাসার পাঠদানের কথা বিবেচনা করে বর্তমান সুপারকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করেন এবং সহকারী সুপার হিসেবে একজন শিক্ষককে দায়িত্বপালনের নির্দেশ দেন। এছাড়া সম্প্রতি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে গঠিত কমিটিকে মাদরাসা পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানান।

এদিকে আজ শনিবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১১টায় মাদরাসা সংলগ্ন মাঠে নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নের সর্বস্তরের এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে মাদরাসা পরিচালনার জন্য মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আখলাকুল আম্বিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সদস্য হানিফ আহমদের পরিচালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন, সিরাজুল ইসলাম, আব্দুস শুকুর, হায়দার আলী, দেলোয়ার আহমদ, কবির আহমদ, জহির উদ্দিন, আব্দুর রহমান, জৈন্তাপুর ইউনিয়নের সদস্য ইসমাইল আলী, আব্দুস শুকুর হরুহুনা, আলা উদ্দিন আলাই, পারভেজ আহমদ, জহিরুল ইসলাম, জাকির হোসেন, মুহিব আলী, আব্দুল মালিক পাখি, আলতাফুর রহমান, হোসেন আহমদ, আবুল হোসেন, সাব্বির আহমদ, আব্দুল করিম, ফিরুজ আলী, বতাই মিয়া, আব্দুল হান্নান, মাসুক আহমদ, মাসুদ আহমদ, আবুল হাসিম, তালহা আব্দুল্লাহ বাবু, তাফসিরুল ইসলাম পলাশ, মোস্তাক আহমদ, মনজুর আহমদ, আজিজুর রহমান, আব্দুল হান্নান প্রমুখ।

 

আরকে/আরআর-১০