জাদুকাটায় ভেসে আসা কয়লায় ভাগ্য খুলেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের

আবির হাসান-মানিক, তাহিরপুর


নভেম্বর ২২, ২০২০
০৮:৪৭ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ২২, ২০২০
১১:২১ অপরাহ্ন



জাদুকাটায় ভেসে আসা কয়লায় ভাগ্য খুলেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের

কোনা জাল হাওর-বাওড়ের নতুন পানিতে ভেসে আসা মাছ ধরার কাজেই ব্যবহার করেন হাওরাঞ্চলের মানুষ। বৈশাখের শেষ আর জৈষ্ঠ্যের শুরুতে কোনা জাল দিয়ে মাছ ধরার উৎসবে মেতে ওঠেন নানা বয়সী লোকজন। তবে এবার মাছ ধরার উৎসব নয়,  করোনা আর বন্যায় বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত মানুষের মুখে আহার জোটানোর কাজ করছে কোনা জাল।

দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় জাদুকাটায় বন্ধ রয়েছে বালু-পাথর উত্তোলন। পরিবেশকে বিপর্যয় থেকে রক্ষার্থে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আর এ নিষেধাজ্ঞায় উপার্জনের অন্যতম ভরসাস্থল হারিয়ে অসহায়-মানবেতর জীবনযাপন করছিল সহস্রাধিক পরিবারের সদস্যরা। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত নদী জাদুকাটায় ভারতের ওপার থেকে ভেসে আসা পানিতে মিশে থাকা কয়লা হয়ে উঠেছে রুজি-রোজগারের অন্যতম আশ্রয়স্থল।

ভেসে আসা ভারতীয় কয়লা কোনা জাল ও বেলচা দিয়ে কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহের উৎস খুঁজে পেয়েছেন নিম্নআয়ের হাজারো শ্রমজীবী লোকজন। এসব কয়লা কুড়িয়ে দিনশেষে বিক্রি করছেন শ্রমিকরা। এতে মিলছে সামান্য টাকা, জ্বলছে ঘরের চুলা, নিবৃত হচ্ছে আহারের কষ্ট।

তবে হাওরাঞ্চল তাহিরপুরে শুধু প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভর না করে বিকল্প কর্মসংস্থানের উপর জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, শুধু এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভর না করে শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে এ অঞ্চলে কাঁচবালি শিল্প, মিনারেল ওয়াটার প্ল্যান্ট বা পর্যটন শিল্পের রয়েছে অপার সম্ভাবনা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের লোকজন দিনের শুরু করে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাদুকাটার বারেক টিলা অংশ থেকে শুরু করে ঢালারপাড় পর্যন্ত নদীর প্রায় ৩ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে কোনা জাল ও বেলচা দিয়ে ভেসে আসা ভারতীয় কয়লা উত্তোলনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব শ্রমিকদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। পাশাপাশি স্কুলপড়ুয়া শিশুদেরও দেখা মিলছে। এ সকল শিশু পরিবারের বড়দের সঙ্গে কয়লা কুড়ানোর কাজে সহায়তা করছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। দিনশেষে একেকটি বারকি নৌকা লোড করে নদীর পাড়েই মৌসুমী মহাজনদের নিকট বিক্রি করা হচ্ছে। আর তাতেই মিলছে স্বস্তি, মিলছে খাবারের সন্ধান।

নদীর পাড় থেকে কুড়ানো কয়লা কেনাবেচার মাধ্যমে দিনাতিপাত করে এমন একজন স্থানীয় বাসিন্দা সাবিনুর মিয়া বলেন, ‘নদীতে কাজ-কাম বন্ধ থাকায় আমরা ছোট ছোট ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়েছি। বর্তমানে নদী থেকে কুড়ানো ভারতীয় কয়লা শ্রমিকদের কাছ থেকে কেনাবেচা করে কোনোরকমে ব্যবসায় টিকে আছি।’

মানিগাঁও গ্রামের নারী শ্রমিক দিলনাহার বেগমের কাছে জাদুকাটা নদীতে ভেসে আসা কয়লা কুড়িয়ে সংসার চলে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ছেলেমেয়ে নিয়া কষ্টে দিন কাটে আমরার, নদীতে কাজ না থাকলে কষ্টের সীমা ছাড়িয়ে যায়। এখন নদী থেকে কয়লা কুড়িয়েই জীবিকা নির্বাহ করছি। এ কাজ বন্ধ হয়ে পড়লে আর কোনো উপায় নেই দু’মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার।'

ঘাগটিয়া স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রেজাউল মিয়া বলে, ‘স্কুল বন্ধ থাকায় এখন নদীতে কয়লা কুড়াতে আসি। সারাদিন কয়লা কুড়িয়ে ৩০০-৩৫০ টাকা পাই। আমার মতো বয়সী আরও অনেক ছেলেরা নদীতে এখন কয়লা কুড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।’

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ‘জাদুকাটা নদীতে ভেসে আসা বালির সঙ্গে মিশে থাকা কয়লা কোনা জাল, বেলচা ও হাত দিয়ে কুড়িয়ে এ অঞ্চলের হাজারো শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করছে। এক্ষেত্রে তাদেরকে আইনগতভাবে সকল প্রকার সহায়তা করা হচ্ছে।’

 

এএইচ/বিএন-০২/আরআর-০২