সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
নভেম্বর ২৩, ২০২০
০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ২৩, ২০২০
০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন
‘শেখ হাসিনার অবদান, কমিউনিটি ক্লিনিক বাঁচায় প্রাণ’- এমন স্লোগানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূল সাধারণ মানুষের সেবার লক্ষ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো প্রতিষ্ঠা করেছেন। এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে গরিব ও অসহায় মানুষজন নিজেদের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পাওয়ার কথা। কিন্তু সুনামগঞ্জের হাওরের দুর্গম এলাকার ক্লিনিকগুলোতে নিয়মিত সেবা পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। সম্প্রতি দুর্গম শাল্লা উপজেলার হাওরে সরেজমিনে গিয়ে এ চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
শাল্লা উপজেলার মনুয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় ক্লিনিকটি চারদিকে পানিবন্দি। তালাবদ্ধ ক্লিনিকটি বহুদিন ধরে খোলা হচ্ছে না। এ সময় দেখা গেল গ্রামে কমল চৌধুরী নামের এক তরুণ নৌকায় করে ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। কিন্তু কাউকে না পেয়ে কিছুক্ষণ বকাবকি করে চলে যান তিনি।
যাওয়ার আগে কমল চৌধুরী বলেন, 'শিমের কান্দা, কৃষ্ণপুর, ধামপুর, চব্বিশা, সহদেবপাশা, মনুয়াসহ কয়েকটি দুর্গম গ্রামের মানুষের কথা চিন্তা করে সরকার গ্রামে ক্লিনিকটি চালু করেছে। কিন্তু অনেকদিন ধরে ক্লিনিকটি বন্ধ। কেউ খোলে না। এ কারণে আমরা চিকিৎসা নিতে পারি না। সরকারের এত ওষুধ কোথায় যায় আমরা জানি না।'
একই গ্রামের শাহ আলম মিয়া বলেন, 'কয়েকমাস ধরে ক্লিনিকে কেউ আসছে না। এ কারণে আমরা কোনো সেবা পাচ্ছি না। অথচ চিকিৎসার জন্য আমরা উপজেলা সদরেও যেতে পারছি না। যদি স্বাস্থ্যকর্মী নিয়মিত আসতেন, তাহলে আমরা ৬-৭টি গ্রামের লোকজন এখানে এসে সহজে চিকিৎসা নিতে পারতাম।'
একই উপজেলার সুখলাইন কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় দুপুরবেলা ক্লিনিকটির দরজা-জানালা বন্ধ। চারদিকে জলবন্দি ক্লিনিকটি বহুদিন ধরে খোলা হয় না। এলাকাবাসী জানালেন, বছরের প্রায় ৮ মাস নৌকা ছাড়া ক্লিনিকে আসা যায় না। দুর্গম হাওরাঞ্চলের সবগুলো ক্লিনিকেরই একই অবস্থা বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
আঙ্গাউড়া গ্রামের সমাজসেবী দুরন্ত দাস বলেন, 'সুখলাইন ক্লিনিকটি বছরের ৮ মাসই জলবন্দি থাকে। এতে চিকিৎসা নিতে ও দিতে সমস্যা হয়। বর্ষায় ক্লিনিকে যাতায়াতের জন্য সরকারি নৌকা দেওয়া উচিত।'
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৫৫৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ৫৫৩টি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে ২-৩টি করে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। এই ক্লিনিকগুলোতে সরকার ২৯ ধরণের মূল্যবান ওষুধ দিয়ে থাকে। প্রসুতিসেবাসহ মাইনর অপারেশনেরও ব্যবস্থা রেখেছে ক্লিনিকগুলো। ক্লিনিকগুলোতে সরকারি ছুটির দিন বাদে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গ্রামীণ রোগীদের নিয়মিত সেবা দেওয়ার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে।
তবে যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নত আছে এমন এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সেবা দিলেও অনুন্নত যোগাযোগ ও হাওরাঞ্চলের দুর্গম এলাকার ক্লিনিকগুলোতে নিয়মিত যান না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। যার ফলে দুর্গম এলাকার নারী, শিশু, বৃদ্ধ, গর্ভবতীরা নিয়মিত চিকিৎসা নিতে পারছেন না। অথচ ক্লিনিকগুলোতে নারী ও শিশুসহ গর্ভবতীদের নিয়মিত চেকআপে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। গর্ভকালীন ও গর্ভোত্তর সেবাসহ ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে ক্লিনিকগুলোতে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত ক্লিনিক না খোলায় সেবা থেকে বঞ্চিত থাকছেন সাধারণ মানুষজন।
শাল্লা উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌস আক্তার বলেন, 'শাল্লা উপজেলা দেশের পিছিয়েপড়া উপজেলা হিসেবে স্বীকৃত। এ উপজেলায় ১৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে সবগুলোতেই সিএইচসিপি রয়েছেন। তবে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন কয়েকজন। কেউ যদি নিয়মিত দায়িত্বপালনে অবহেলা করেন, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
সুনামগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. শামসুদ্দিন বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গিকার ও অগ্রাধিকার প্রকল্পে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হচ্ছে জনগণকে। হাওরের ক্লিনিকগুলোতে সরাসরি যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। এ কারণে সেবাদাতা ও সেবাগ্রহিতাদের নানামুখী সমস্যা হচ্ছে। তবে কোথাও স্বাস্থ্যকর্মীরা অনিয়মিত সেবা দিলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এসএস/আরআর-১৫