ধর্মপাশায় ফসলরক্ষা বাঁধ কেটে চলছে মাছ শিকার

শামীম আহমেদ, ধর্মপাশা


নভেম্বর ২৫, ২০২০
০৮:১২ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ২৫, ২০২০
০৮:১৫ অপরাহ্ন



ধর্মপাশায় ফসলরক্ষা বাঁধ কেটে চলছে মাছ শিকার

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চন্দ্র সোনার থাল হাওরের আওতায় থাকা হুলাসখালী ফসলরক্ষা বাঁধটির প্রায় ১৫-২০ ফুট জায়গা মাছ শিকারের উদ্দেশে গত তিন সপ্তাহ আগে রাতের আঁধারে কেটে দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। গত দুই সপ্তাহ ধরে বাঁধের ওই কাটা অংশে ভিম জাল পেতে স্থানীয় জেলেরা মাছ শিকার করে আসছেন। বাঁধটি কেটে ফেলায় সরকারি লাখ লাখ টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকার কৃষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন , এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে. উপজেলার চন্দ্র সোনার হাওরের আওতায় থাকা হুলাসখালী ফসলরক্ষা বাঁধটি সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে রয়েছে। এই বাঁধটি উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের হুলাসখালী গ্রামের সামনে অবস্থিত। এই বাঁধটির ৯৬৪ মিটার স্থানে মাটি ভরাটসহ অন্যান্য কাজের জন্য গত বোরো মৌসুমে বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় ২৪ লাখ টাকা। মাছ শিকারের উদ্দেশে পানি প্রবাহের জন্য তিন সপ্তাহ আগে ওই বাঁধটির প্রায় ১৫/২০ ফুট জায়গা রাতের আঁধারে কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। ধীরে ধীরে এই বাঁধটি ভেঙে এখন ৩০-৩৫ ফুট প্রশস্থ হয়ে গেছে। দুই সপ্তাহ ধরে স্থানীয় জেলেরা সেখানে ভিম জাল পেতে মাছ শিকার করছেন। নিষিদ্ধ ওই জাল দিয়ে মাছ শিকার করায় একটি পোনা মাছও রেহাই পাচ্ছে না।

গত সোমবার দুপুরে সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ওই বাঁধের কাটা অংশে একটি ভিম জাল পাতা রয়েছে। তবে কোনো জেলেকে সেখানে পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবছরই এই মৌসুমে মাছ শিকারের জন্য বাঁধের কিছু অংশ কেটে দেওয়া হয়। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এতে জড়িত রয়েছেন। বাঁধের এই কাটা স্থান থেকে জাল পেতে প্রতিবছর প্রায় ২০-৩০ লাখ টাকার মাছ শিকার করা হয়। এই টাকার ভাগ-বাটোয়ারার অংশ অনেকেরই পকেটে যায়। টাকার লোভে পড়ে বাঁধ কেটে আমাদের কৃষকদের চরম সর্বনাশ করা হচ্ছে। এতে বোরো মৌসুমে জমিতে সেচকার্য ব্যাহত হবে। স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এই ফসলরক্ষা বাঁধটির বিষয়ে অবগত আছেন। তিনি সরকারি সম্পদ বিনষ্ট করে মাছ শিকারের ঘোরবিরোধী। তাই এই বাঁধ কাটার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সাংসদ রতন ইউএনও'র সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু এখনও এ ব্যাপারে কোনোরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর কবীর বলেন, 'আমাদের ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের কেউ এতে জড়িত নয়। যারা ফসলরক্ষা বাঁধ কাটার সঙ্গে জড়িত, তারা রাষ্ট্রবিরোধী। তাদের সঙ্গে আমাদের সংগঠনের কোনো নেতা-কর্মীর কোনোরকম সম্পর্ক নেই। বাঁধ কাটার কাজে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।'

সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমানুর রাজা চৌধুরী বলেন, 'ফসলরক্ষা বাঁধ কেটে মাছ শিকার করার বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে মুঠোফোনে জানিয়েছি। কারা এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে তা খুঁজে বের করা হচ্ছে।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান বলেন, 'ফসলরক্ষা বাঁধ কেটে মাছ শিকারের বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান সম্প্রতি আমাকে মুঠোফোনে জানিয়েছেন। আমি গত রবিবার সন্ধ্যায় সেখানে অভিযানে গিয়ে কোনো জাল বা কোনো জেলেকে সেখানে পাইনি। সরকারি সম্পদ বিনষ্টকারীদের খুঁজে বের করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'

 

এসএ/আরআর-০৮