আবির হাসান মানিক, তাহিরপুর
নভেম্বর ২৮, ২০২০
১২:১৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ২৮, ২০২০
০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন
পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং, নানারকম ভাতা, ইন্টারনেট সেবা ও উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে সারাদেশের ন্যায় হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জের তাহিরপুরেও পোস্ট ই-সেন্টার সেবা চালু করা হয়। কিন্তু অবকাঠামোর অভাব, জনবল সংকট, প্রচার ও ব্যবস্থাপনার অভাবে এর কাঙ্ক্ষিত সুফল পাচ্ছেন না হাওরবাসী।
তাহিরপুর উপজেলা ডাকঘরে ই-পোস্ট সেন্টার সেবা কার্যক্রম চালু হলেও অন্যান্য ৪টি শাখা অফিসে কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে পোস্ট ই-সেন্টারের কার্যক্রম। ফলে এক ছাদের নিচে ডাকঘরকেন্দ্রিক ডিজিটাল সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ অঞ্চলের লোকজন।
অপরদিকে উপজেলা সদরে চালু হওয়া একমাত্র ই-পোস্ট সেন্টারের কার্যক্রমও চলছে নীরবে। কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকির অভাব আর প্রচার না থাকায় সুফল মিলছে না উপজেলার একমাত্র ই-পোস্ট সেন্টারে। এজন্য একমাত্র ই-পোস্ট সেন্টারে সেবা নেওয়ার মানুষের সংখ্যাও হাতেগোনা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ফর রুরাল কমিউনিটি প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের ডাকঘরগুলোকে পোস্ট ই-সেন্টারে রূপান্তরিত করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। দেশের ডাকঘরগুলোকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে যুগোপযোগী সেবাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে একাধিক উদ্যোগ বা প্রকল্প গ্রহণ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এর অংশ হিসেবে চালু করা হয় পোস্ট ই-সেন্টার। আর এ সকল পোস্ট ই-সেন্টার কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, আউটসোর্সিং, ব্যাংকিং সুবিধা, ই-কমার্স, ভাতা প্রদান, বীমা পলিসি, প্রিমিয়াম, ই-বিজনেস, টেলিমেডিসিন, কৃষি তথ্য সেবা, এজেন্ট ব্যাংকিং, ইন্টারনেটের মাধ্যমে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি সেবা, দেশে-বিদেশে ভিডিও কনফারেন্স সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করে।
আরও জানা গেছে, প্রতিটি পোস্ট ই-সেন্টার এসএসসি পাস ও তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞানসম্পন্ন একজন পুরুষ ও একজন নারী উদ্যোক্তার মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু তাহিরপুরের শাখা পোস্ট অফিসগুলোতে অবকাঠামো, ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের অভাবে পোস্ট ই-সেন্টার কার্যক্রম এখনও চালুই হয়নি।
তাহিরপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী এ প্রসঙ্গে বলে, 'আমি পরস্পর শুনেছি উপজেলা ডাকঘরে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর অন্যান্য সেবা সম্পর্কে ততটা জানি না। আর ডাকঘরে ওইভাবে কোনোদিন যাওয়া হয় না।'
উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী সামায়ুন কবির বলেন, 'উপজেলা ডাকঘরে চিঠিপত্র আসা-যাওয়ার কাজ হয়- এটুকুই জানি। ডাকঘরকে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা চালু করা হয়েছে তা জানা নেই।'
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) তাহিরপুরের সদস্য সোহানুর রহমান সোহাগ বলেন, 'আমি আজ প্রথম আপনার মাধ্যমে এ সম্পর্কে জেনেছি। উপজেলা ডাকঘরে যে এমন ডিজিটাল সেবা চালু করা হয়েছে তা অবশ্যই হাওরবাসীর জানা জরুরি। কিন্তু প্রচারের কারণে ডাকঘরের ডিজিটাল সেবা থেকে এ অঞ্চলের লোকজন বঞ্চিত হচ্ছেন।'
শিক্ষক গোলাম সরোয়ার লিটন বলেন, 'নিরাপদ এবং উন্নত সেবা প্রদানের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে এই পোস্ট ই-সেন্টার। তাই উপজেলার শাখা পোস্ট অফিসগুলোতে কার্যক্রম শুরু করা জরুরি, যেন হাওরবাসী ডাকঘরকেন্দ্রিক ডিজিটালাইজেশনের সুফল পায়।'
পোস্ট ই-সেন্টারের উদ্যোক্তা সজিব রায় জয় বলেন, 'আমার এখান থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন, চাকরি পেয়েছেন। কেউ কেউ বিদেশে গিয়েছেন। তবে হাওরাঞ্চলের ৮০ ভাগ লোকই এ সেবা সম্পর্কে জানেন না। তাই সেবা নিতে আসা লোকের সংখ্যা অনেক কম।'
উপজেলার বাদাঘাট শাখার পোস্ট মাস্টার রফিক আহমেদ বলেন, 'পোস্ট ই-সেন্টার সম্পর্কে জেনেছি। আমাদের বাদাঘাট শাখা পোস্ট অফিসের জন্য নিজস্ব ভূমিতে নতুন ভবন নির্মাণ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর আমি যতটুকু জানি, নতুন ভবন নির্মিত হলেই পোস্ট ই-সেন্টারের কার্যক্রম শুরু করা যাবে।'
এদিকে তাহিরপুর উপজেলার পোস্ট মাস্টারের পদটি দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শূন্য। এখানে অতিরিক্ত দায়িত্বপালন করছেন পোস্টাল অপারেটর জাহিদুল হক। তিনি বলেন, 'উপজেলা পোস্ট অফিসে দীর্ঘদিন ধরেই জনবল সংকট রয়েছে। আর উপজেলা ডাকঘরকে পোস্ট ই-সেন্টারে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এর প্রচারও করা হচ্ছে। কিন্তু এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ সেবা নিতে ততটা আগ্রহী না। সেবা নিতে আসা লোকের সংখ্যা খুবই কম। আর উপজেলার শাখা পোস্ট অফিসগুলোতে এখনও পোস্ট ই-সেন্টার সেবা কার্যক্রম চালু হয়নি।'
সিলেট জেলা ডাকঘরের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, 'হাওরাঞ্চল তাহিরপুরে ৪টি শাখা পোস্ট অফিসে পোস্ট ই-সেন্টার কার্যক্রম কোনো অজ্ঞাত কারণে চালু করা হয়নি। তবে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি। সর্বোপরি সরকারের এ ডিজিটাল সেবা থেকে এ অঞ্চলের পিছিয়েপড়া লোকজন বঞ্চিত হচ্ছেন, যা হাওরবাসীর জন্য সত্যিই দুর্ভাগ্যের। অচিরেই তাহিরপুরে শাখা পোস্ট অফিস পরিদর্শনে যাবো।'
এএইচ/আরআর-০৩