কমলগঞ্জে নৃত্য-গীতে সাঙ্গ হলো মহারাসলীলা

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি


ডিসেম্বর ০১, ২০২০
০৮:২৫ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ০১, ২০২০
০৮:২৬ অপরাহ্ন



কমলগঞ্জে নৃত্য-গীতে সাঙ্গ হলো মহারাসলীলা

মণিপুরি সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা উপলক্ষে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গতকাল সোমবার (৩০ নভেম্বর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে রাখাল নৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। রাত ১২টার পর থেকে আজ মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) ভোর পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি পোশাকে সজ্জিত মণিপুরি তরুণীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় মণিপুরি মহারাসলীলা উৎসব। মঙ্গলবার ঊষালগ্নে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।

রাসোৎসবে আসা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভীড়ে মুখরিত হয়েছিল কমলগঞ্জের মণিপুরি অঞ্চলগুলো। ভীড় সামলাতে পুলিশ সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুর ইউনিয়নের ৩টি পৃথক স্থানে এ মহারাসলীলা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাকে উপেক্ষা করে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার লোকসমাগম ঘটে এ রাসোৎসবে।

মাধবপুর শিববাজার এলাকায় মণিপুরি ললিতকলা একাডেমি সংলগ্ন জোড়ামন্ডপে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সম্প্রদায়ের মহারাসলীলা অনুষ্ঠিত হয়। রাতভর রাধাকৃষ্ণের প্রণয়োপখ্যানের সে রাসলীলা উপভোগ করেন আগত ভক্তবৃন্দসহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আগত দর্শকরা। 

অন্যদিকে একইভাবে আদমপুরে মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সসহ দু'টি পৃথক মন্ডপে মৈতৈ মণিপুরি সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে গতকাল সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্রীকৃষ্ণের ছোটবেলার রাখাল নৃত্য পরিবেশন করা হয়। মণিপুরি কালচারাল সেন্টার প্রাঙ্গণে রাত ৮টায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও গবেষক এ কে শেরাম।

সন্ধ্যায় মাধবপুর শিববাজার জোড়ামন্ডপ এলাকায় মণিপুরি রাসলীলা উৎসব পরিদর্শনে আসেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ বিপিএম, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক ও কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমানসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন।

বৃহত্তর সিলেটের ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্যতম বিশ্বনন্দিত সংস্কৃতির ধারক মণিপুরি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব রাসলীলা পূর্ণিমা তিথিতে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর জোড়া মন্ডপ ও আদমপুর ইউনিয়নের তেতইগাঁওস্থ পাশাপাশি দু'টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হয়। রাতভর রাধাকৃষ্ণের প্রণয়োপখ্যানের সে রাসলীলা উপভোগ করতে সারাদেশ থেকে ছুটে আসেন হাজারও নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি, সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষজন। বর্ণাঢ্য এ আয়োজনে মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে লাখো মানুষের মিলনতীর্থে পরিণত হয় মাধবপুর ও আদমপুরে রাসোৎসবের জন্য তৈরি সাদাকাগজের নকশায় সজ্জিত মন্ডপগুলো। মণিপুরি শিশু নৃত্যশিল্পীদের সুনিপুণ নৃত্যাভিনয় রাতভর মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে আগত দর্শনার্থীদের।

 

এসডি/আরআর-১১