কমলগঞ্জ প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ০৪, ২০২০
০১:৫৮ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ০৪, ২০২০
০১:৫৮ পূর্বাহ্ন
গত ৪ মাস আগেও যার জীবন স্বাভাবিক ছিল, তার জীবনে আজ নেমে এসেছে ঘোর অনিশ্চিয়তা। সে জানে না আদৌ নিজের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে কি না। বলছিলাম মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরের শিংরাউলী গ্রামের কিশোরী মুন্নী বেগমের (১৬) কথা। গত ৪ মাস আগে ভাড়াটে ভবনের ছাদে কাপড় শুকাতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে গুরুতর আহত হয় ওই কিশোরী। হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসার পর তার ডান হাতের কব্জি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে। বর্তমানে পঙ্গুত্ব বরণ করে অনিশ্চিত জীবনে পা রেখেছে ওই কিশোরী। পল্লী বিদ্যুতের উন্মুক্ত তারে জড়িয়ে ঘটা মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনার দায় কার, তা আজও বুঝে উঠতে পারেনি হাত হারানো কিশোরী ও তার পরিবার।
পঙ্গুত্ব বরণকারী কিশোরী মুন্নী কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের বিলেরপাড় গ্রামের প্রবাসী মোবারক আলীর মেয়ে। সন্তানদের লেখাপড়ার সুবিধার জন্য মোবারক আলী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরের শিংরাউলী গ্রামে বাসা ভাড়া নেন। কিশোরী মুন্নী বেগম পার্শ্ববর্তী উসমানগড় মাদরাসার ৯ম শ্রেণির ছাত্রী। চলতি বছরের ৪ জুলাই দুপুরে আব্দুল করিমের ভবনের ছাদে কাপড় শুকাতে গিয়ে উন্মুক্ত বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়ে ওই ভবনে ভাড়াটে থাকা পরিবারের কিশোরী মুন্নী বেগম গুরুতর আহত হয়। তার দুই হাত ও বুকে বড় ধরণের ক্ষত সৃষ্টি হয়। পরে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে দীর্ঘদিন চিকিৎসা প্রদান করা হয় তাকে। সেখানে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়া মুন্নীকে প্রায় ৪ মাস চিকিৎসা প্রদান করা হয়। বিদ্যুতায়িত মুন্নীর ডান হাতের অবস্থা ভালো না থাকায় চিকিৎসক হাতের কব্জি পর্যন্ত কেটে ফেলেন। এছাড়াও ভবনের ছাদে থাকা লোহার রডে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তার বুকে মারাত্মক জখম হয়। বর্তমানে ডান হাত হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে অনিশ্চিত জীবনে পা দিয়েছে মুন্নী।
মুন্নী বেগম জানায়, ভবনের ছাদে কাপড় শুকাতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। ভবনের সঙ্গে বৈদ্যুতিক তার রয়েছে। এজন্য দায়ী কারা বা কাদের ভুলের জন্য তাকে পঙ্গু হতে হলো, তা আজও তার কাছে স্পষ্ট নয়।
কিশোরী মুন্নীর বাবা প্রবাসে থাকেন। তার মামা মো. ইকবাল আহমদ বলেন, 'মেয়েটির চিকিৎসায় কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে মেয়েটির জীবন নষ্ট হয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভবনের সঙ্গে বিদ্যুতের লাইন থাকলে এর দায় কার? আমরা ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। এজন্য আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।'
সরেজমিনে দেখা যায়, আব্দুল করিমের ভবনের ছাদ ঘেঁষে শিংরাউলী এলাকায় মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন প্রবাহিত। বিদ্যুতের লাইন ঘেঁষেই নির্মিত হয়েছে ওই ভবন। ভবন নির্মাণের পর বাসা ভাড়া প্রদান করা হয়। তবে ভবনের সঙ্গে উন্মুক্ত বিদ্যুতের লাইন থাকলেও তা ভবন মালিক কিংবা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কেউ গুরুত্বপূর্ণ মনে করেনি। ঘটনার পরদিন ভবনের মালিক আব্দুল করিম বিদ্যুতের লাইনের জন্য মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে দায়ী করে কমলগঞ্জের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারকে লিখিত অভিযোগ দেন।
ভবনের মালিক আব্দুল করিম বলেন, 'পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও ঠিকাদার পার্শ্ববর্তী একটি বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের সময় কাভার লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা দেননি। ফলে তাদের ভুলের জন্যই এ ঘটনা ঘটেছে।'
এ ব্যাপারে তদন্তকারী মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শ্রীমঙ্গলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) খালেদুল ইসলাম বলেন, 'বিদ্যুতের এই লাইন দীর্ঘদিনের। বিদ্যুতের লাইন থাকার পরে ভবন নির্মিত হয়েছে। সর্বশেষ পার্শ্ববর্তী বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে নতুন খুঁটি বসানোর কারণে কিছুটা ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে। হয়তো কিশোরী অসাবধানতাবশত কাপড় ছুড়ে মারায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।'
এসডি/আরআর-১১