কবি বাসিত মোহাম্মদের মৃত্যু, দায় কার?

নিজস্ব প্রতিবেদক


ডিসেম্বর ১১, ২০২০
০৬:০৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ১১, ২০২০
০৬:০৩ পূর্বাহ্ন



কবি বাসিত মোহাম্মদের মৃত্যু, দায় কার?

সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্মাণাধীন একটি অরক্ষিত ড্রেনে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর কুলে ঢলে পড়লেন বিশিষ্ট কবি, ছড়াকার ও প্রাক্তন শিক্ষক নেতা আব্দুল বাসিত মোহাম্মদ। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছয়টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার এই মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে মানতে নারাজ সিলেটবাসী। তারা বলছেন সিটি করপোরেশনের গাফিলতির কারণেই মর্মান্তিক এই মৃত্যু।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরের আম্বরখানার হুরায়রা ম্যানশনে তার এক বন্ধুর দোকানে যাওয়ার সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্মাণাধীন ড্রেনে পড়ে যান আব্দুল বাসিত মোহাম্মদ। এ সময় উপস্থিত জনসাধারণ তাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার আলট্রাসোনোগ্রাম করে পরবর্তী চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রাত আড়াইটার দিকে ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া হয়। 

ওসমানী হাসপাতাল সূত্র জানায়, রড ঢুকে তার পেটের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। গত বুধবার ৬ ঘণ্টা ধরে হাসপাতালে তার অপারেশন সম্পন্ন হয়। আর বৃহস্পতিবার সকালে তার মৃত্যু হয়।

সিলেটের সাহিত্যাঙ্গণের প্রিয়মুখ সদা হাস্যোজ্জ্বল, বন্ধুবৎসল ও সবার প্রিয় কবি-ছড়াকার বাসিত মোহাম্মদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে লেখক ও শিক্ষকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আব্দুল বাসিতের মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে মানতে নারাজ সিলেটবাসী। এই মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে সমালোচনার ঝড়। শোকাহত অনেকেই সিসিকের সমালোচনা করে লিখছেন, ‘এই মৃত্যুর দায় কার?’ কেউ লিখছেন ‘সিসিকের অপরিকল্পিত উন্নয়ন একজন মানুষের জীবণ কেড়ে নিল।’ কেউ বলছেন, ‘অবহেলাজনিত এই মৃত্যুই যেন শেষ কোনো মৃত্যু হয়।’

আব্দুল বাসিতের ছোটভাই মো. ইয়াহিয়া বলেন, ‘রড সংরক্ষিত থাকলে বা নির্মাণাধীন ড্রেন সংরক্ষিত থাকলে আমার ভাইয়ের এ অবস্থা হতো না।’ তিনি ভাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়াও চেয়েছেন।

এই মৃত্যুর দায় সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম। তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘বাসিত ভাইয়ের মৃত্যুতে সবার মতো আমিও খুব মর্মাহত। উন্নয়ন কাজ চলবে, তবে তার শর্ত তো মানতে হবে। সড়কে ম্যানহোল খোলা থাকবে, রড, ড্রেন অরক্ষিত থাকবে, যন্ত্রপাতি যেখানে সেখানে ফেলা থাকবে তা তো হবে না। আমরা যারা হেটে চলাচল করি তাদের জন্য এখন সড়ক মরণফাঁদের মতো।’

তিনি বলেন, ‘কাজের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকতে হবে। বছরের পর বছর একটি কাজ চলতে পারে না। অরক্ষিত এসব কাজের জন্য নগরে প্রতিদিন অনেক পথচারী এভাবে দুর্ঘটনায় পড়ছেন। সিসিককে এই মৃত্যুর দায় নিতে হবে এবং ব্যাখা দিতে হবে।’ একইসঙ্গে নগরের যে সকল স্থানে এমন উন্মুক্ত বিপদজ্জনক ড্রেন এবং ম্যানহোল আছে সেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনির দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমার দীর্ঘ ২৭ বছরের চাকরি জীবনে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। আমরা সবাই মর্মাহত।’ তিনি জানান, এ ঘটনায় সিসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর ও প্রশাসনিক কর্মকতা হানিফুর রহমান। তাদেরকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে নূর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন।

এনএইচ/বিএ-০২