২শ বছরের প্রথা : 'ওলাবিবি'র সন্তুষ্টি কামনায় 'রুট শিরনি'

উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর


ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
০৫:৪০ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
০৫:৪০ অপরাহ্ন



২শ বছরের প্রথা : 'ওলাবিবি'র সন্তুষ্টি কামনায় 'রুট শিরনি'

‘ওলাবিবি’কে সন্তুষ্ট করে মহামারি থেকে রক্ষা পেতে সিলেটের ওসমানীনগরের কয়েকটি গ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় ‘রুট শিরনি’। প্রতিবছরের মতো এবারও পৌষের প্রথম সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবে ৫টি গ্রামে ‘রুট শিরনি’র আয়োজন করা হয়। এলাকার লোকজন মেতে ওঠেন পিঠা-পুলির উৎসবে।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২শ বছর (১৮১৭-১৮২৫) পূর্বে এ এলাকায় কলেরার প্রকোপে প্রচুর প্রাণহানি ঘটে। স্থানীয় কবুলপুর গ্রামে অসংখ্য লোকের মৃত্যু হলে এ গ্রামটিকে অনেকে ‘খালিগ্রাম’ বলে ডাকতে শুরু করেন। এমন সময়ে গ্রামে এক দরবেশের আগমন ঘটে (যদিও এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি)। তিনি মহামারি কলেরার হাত থেকে বাঁচতে এলাকাবাসীকে ‘ওলাবিবি’র নামে শিরনি করার পরামর্শ দেন। সেই থেকে দরবেশের পরামর্শ মেনে উছমানপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর, লামাপাড়া, কবুলপুর, আলীপুর ও আব্দুল্লাহপুর এই ৫টি গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার প্রতিবছর পালা করে শিরনির প্রচলন করেন। গত ১৭ ডিসেম্বর লামাপাড়া ও মির্জাপুর, ২০ ডিসেম্বর আব্দুল্লাহপুর ও ২২ ডিসেম্বর আলীপুরে রুট শিরনির আয়োজন করেন গ্রামবাসী। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কবুলপুর গ্রামবাসী রুট শিরনির আয়োজন করেন।

শিরনির আগের রাতে প্রতিটি বাড়িতে আতপ চাল একটি বড় পাত্রে ভিজিয়ে রাখা হয়। পরদিন সকালে চাল কুটে গুড়ি তৈরি করেন বাড়ির বউ-ঝিরা। এরপর গুড়ির সঙ্গে আদা, হলুদ, লবণ, পেঁয়াজ বাটা মিশিয়ে পানি দিয়ে মÐ বানানো হয়। মÐকে খোলা পিঠার মতো ছোট ছোট আকারে তৈরি করে কলাপাতায় মুড়িয়ে খড়ের আগুনে সেঁকে তৈরি হয় ‘রুট শিরনি’। 

রুট শিরনি ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। একভাগ দেওয়া হয় স্থানীয় আশ্রব শাহের মাজারে, একভাগ দেওয়া হয় মসজিদে আর একভাগ রাখা হয় নিজেদের ঘরে। প্রথমদিকে শিরনির একটা অংশ হযরত শাহজালালের (র) মাজারে দেওয়া হলেও বর্তমানে এর মূল্য ধরে টাকা দেওয়া হয়। 

এই সময়ে প্রতিটি বাড়িতে শুরু হয় নবান্নের পিঠা তৈরির ধুম। ঘরে ঘরে বাহারি পিঠা দিয়ে অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নারীরা। একে অন্যকে নিজের বাড়িতে দাওয়াত জানিয়ে সবাইকে আপ্যায়ন করা হয় ভাঁপা, চিতই, সন্দেশ, পাঠিসাপ্টা, নারিকেলের পিঠা দিয়ে। নতুন চালের পিঠা পাঠানো হয় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও। দূর থেকে বেড়াতে আসেন অনেকে। শিশু-কিশোর-যুবারা মেতে ওঠেন নবান্নের আয়োজনে।

আব্দুল্লাহপুর গ্রামের রায়হান আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন, কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি রোগ থেকে রক্ষা পেতে এবং আল্লাহর নৈকট্য কামনায় এক দরবেশের আদেশ মেনে আমাদের এলাকায় রুট শিরনি করা হয়। বংশ পরম্পরায় কয়েকশ বছর ধরে এলাকার পাঁচ গ্রামের মানুষ আলাদা আলাদা দিনে এ আয়োজন করে থাকেন। 

স্থানীয় আবেছরি বেগম (৯০) বলেন, আমি শ্বশুরবাড়ি আসার পর থেকে এমন রীতি দেখে আসছি। এলাকার লোকজনকে রোগ-বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে পৌষের প্রথমদিকে ‘রুট শিরনি’র প্রথা চলে আসছে। পাশাপাশি ওইদিন প্রতিটি ঘরে নানা পদের পিঠা তৈরি করা হয়।

 

ইউডি/আরআর-০১