দিরাই পৌর নির্বাচনে ভোটারের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি

সুনামগঞ্জ ও দিরাই প্রতিনিধি


ডিসেম্বর ২৮, ২০২০
০২:২৯ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ২৮, ২০২০
০৪:৪৬ অপরাহ্ন



দিরাই পৌর নির্বাচনে ভোটারের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি
আগে ব্যারাছ্যাড়া আছিল, এখন ভালা: ইভিএমে ভোট দিয়ে ভোটারের প্রতিক্রিয়া

‘আগে আছিল ব্যারাছেড়া। এখন ভালা। সহজে ভোট দিতাম পারছি।’ ইভিএমে প্রথমবারের মতো ভোট দিয়ে এভাবেই সকাল সাড়ে ৯টায় প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন দিরাই পৌর শহরের দাউপুরের ষাটোর্ধ্ব নারী সুবেদা বেগম।

তিনি জানালেন তার ছেলে-মেয়েরা তাকে আগে শিখিয়ে দিয়েছে কিভাবে ভোট দিতে হবে।

দিরাই সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের দাউদপুর বুথে এসময় তার মতো লাইনে অন্তত শতাধিক নারী ভোটারকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। প্রতিটি বুথেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের এজেন্টের উপস্থিতি ছিল।

সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসভা নির্বাচনে প্রথম বারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। ভোট দিতে ভোটারদের কোন সমস্যা না হলেও ভোট নেওয়ার দায়িত্বে থাকা পোলিং অফিসাররা জানালেন সমস্যা হচ্ছে বয়ষ্ক ভোটারদের ক্ষেত্রে।

কারণ তাদের আঙ্গুলে কড়া পড়ে যাওয়ায় মেশিন ভোট নিতে চায়না। তাই কয়েকবার আঙ্গুল পরিষ্কার করতে হচ্ছে। এতে সময় ব্যয় হচ্ছে।

দিরাই পৌর নির্বাচনে ২১ হাজার ৩৭৯জন ভোটার রয়েছেন। ১২টি কেন্দ্রে ৬২টি ভোট কক্ষে প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে সকাল ৯টা থেকেই ভোটগ্রহণ হচ্ছে।

মেয়র পদে ৮জন, কাউন্সিলর পদে ৩৯জন এবং নারী কাউন্সিলর পদে ১৩জন প্রার্থী লড়ছেন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায়, বিএনপি প্রার্থী ইকবাল হোসেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোশারফ মিয়া, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল কাইয়ুমসহ ৮জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে নেমেছেন।

দিরাই সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৩৪৬টি ভোট রয়েছে। ৭টি বুথে সকাল ১০টা পর্যন্ত ১৯০টি ভোট পড়েছে। ৭টি বুথের মধ্যে দাউদপুর বুথেই অন্তত শতাধিক ভোটারের উপস্থিতি দেখা যায়। এই বুথ কেন্দ্রের প্রতিটি বুথেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি প্রার্থীসহ দুই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের এজেন্ট রয়েছে।

এই ভোট কেন্দ্রে হারানপুরের ভোটার পুষ্পনন্দী ৬০ বলেন, ‘আমার নাতিরা আমারে শিখাইয়া দিছে। কুনু সমস্যা অইছেনা। ’

অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী তৃষা রায় প্রথম বারের মতো ভোটার হয়েছেন। তিনি ভোট দিয়ে বের হন খুশি মনে। তৃষা রায় বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তি যুগের প্রজন্ম। আমাদের কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সহজেই ভোট দিতে পারছি।’

এই কেন্দ্র থেকে ১০.১০ মিনিটে বেরুনোর সময় দেখা গেল আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায় ভোট দেওয়ার জন্য প্রবেশ করেছেন। তিনি জানালেন, বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

একই গ্রামের ভোটার পলাশ মিয়া (৬০) বলেন, ‘আমার আঙ্গুলের ছাপ মিলেনা। তিনবারের সময় মিলছে। আঙ্গুল পরিষ্কার করাইয়া আওয়ার পর ভোট দিছি মিশিনে। আর কুনু সমস্যা অইছেনা।’

ওই ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন,‘ ভোটারের উপস্থিতি সন্তোষজজনক। কাস্টিংও ভালো। বিশেষ করে নারী ভোটারদের লাইন সকাল থেকেই দেখা যাচ্ছে। তবে বয়ষ্ক ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপে সমস্যা হচ্ছে। কয়েকবার পরিষ্কার করতে হচ্ছে।’

সকাল ১০টা ২০। ১৬২৬ ভোটারের দিরাই উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ৫টি বুথেই ভোটারের উপস্থিতি বেশি। তবে নারী ভোটারের উপস্থিতিই বেশি দেখা গেছে। ওই সময়ে ওই ভোট কেন্দ্রে ২৪৮জন ভোটার ভোট প্রয়োগ করেছেন। ৫ টি বুথেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ-বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থীদের এজেন্টরা ছিলেন। ওই ভোট কেন্দ্রের বিএনপি এজেন্ট সবুজ মিয়া বলেন, ‘ভোট দিতে কোন সমস্যা হচ্ছেনা। কেউ কোন প্রভাবও বিস্তার করেনি। তবে মুরুব্বিদের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে সমস্যা হচ্ছে।’ 

ওই কেন্দ্রের নৌকার এজেন্ট আব্দুল বারিক বলেন, ‘সব প্রার্থীর এজেন্ট আছে। আমরা মিলে মিশে আমাদের দায়িত্ব পালন করছি।’ 

এ সময় এ কেন্দ্রে র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের টহল দলকে ডুকে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। 

ওই ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শাহীন আলম বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে ভোটারদের কোন অভিযোগ নেই। কোন প্রার্থী ও তাদের এজেন্টরাও কোন অভিযোগ করেননি। নারী ভোটাররা দলে আসছেন।’

পৌর শহর ঘুরে দেখা গেল চারদিকেই ভোটাররা ছড়িয়ে আছেন। পোস্টারে ছেয়ে গেছে শহর। বুকে পছন্দের প্রার্থীদের ব্যাজ ধারণ করে ভোট কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষা করছেন সমর্থকরা।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুরাদ উদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইভিএম নিয়ে কোন সমস্যা নেই।’

 এস এস/এ এইচ/ বি এন-০১