রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গ ছাড়ল ৯ দেশ

সিলেট মিরর ডেস্ক


জানুয়ারি ০২, ২০২১
০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ০২, ২০২১
০৫:৫৯ অপরাহ্ন



রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গ ছাড়ল ৯ দেশ
জাতিসংঘে প্রস্তাব গৃহীত

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও সংখ্যালঘু ইস্যুতে অবস্থান পাল্টেছে ক্যামেরুন, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, নামিবিয়া, কেনিয়া, লেসেথো, মোজাম্বিক, তানজানিয়া, পালাউ ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জ। এই ৯টি দেশ ২০১৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু বিষয়ক প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো অবস্থান না দিয়ে ‘অ্যাবস্টেনশন’ বা ‘অ্যাবস্টেইন’ ভোট দিয়েছিল।

গত বৃহস্পতিবার রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্লেনারি অধিবেশনে প্রায় একই ধরনের প্রস্তাবে ওই দেশগুলো ‘অ্যাবস্টেইন’ অবস্থান থেকে সরে এসে পক্ষে ভোট দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে ১৩০-৯ ভোটে। বাংলাদেশসহ ১৩০টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। মিয়ানমার, চীন, রাশিয়া, বেলারুশ, কম্বোডিয়া, লাওস, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও জিম্বাবুয়ে—এই ৯টি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, জাপানসহ মোট ২৫টি দেশ ‘অ্যাবস্টেইন’ ভোট দিয়েছে।

সাবেক আনান কমিশনের সদস্য ও ডাচ কূটনীতিক লেটেশিয়া ভ্যান্ডেন অ্যাসাম এবারের ভোট বিশ্লেষণ করে টুইট বার্তায় লিখেছেন, ২০১৯ সালের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে ৯টি দেশ তাদের অবস্থান বদলে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে।

নিউ ইয়র্ক থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণে গঠিত আন্তর্জাতিক কাঠামোর জন্য অর্থায়নসহ বেশ কিছু ইস্যুতে প্রস্তাবটি নিয়ে ভোটাভুটিতে দেরি হচ্ছিল। অবশেষে বছরের শেষ দিনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্লেনারি অধিবেশনে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে।

এদিকে ভোটাভুটির আগে জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি কিয়াউ মো তুন প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেছেন, রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির ফল ভালো হবে না। এই চাপকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানবাধিকার ইস্যুতে জাতিসংঘকে অপব্যবহার করা এবং চাপ দেওয়াকে মিয়ানমার মেনে নেবে না।

জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি তাঁর দেশে নেওয়া উদ্যোগের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মিয়ানমার মানবাধিকারের সুরক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, এটি রাখাইন রাজ্যে সংকট সমাধানে কোনো কাজে আসবে না।

মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তৃতীয় কমিটির নেওয়া প্রস্তাব গত বৃহস্পতিবার রাতে ৭৫তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪৮তম প্লেনারি অধিবেশনে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রস্তাবটি নিয়ে প্লেনারি অধিবেশনের সিদ্ধান্তের আগে মিয়ানমার এ নিয়ে ভোটাভুটির আহ্বান জানিয়েছিল।

জানা গেছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে গত নভেম্বর মাসে সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে মিয়ানমারের বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। সেই প্রস্তাবের ওপর এবার প্লেনারি অধিবেশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ও মিয়ানমার বিরোধিতা করে। এবার মিয়ানমার আরো কম ভোট পেয়েছে।

গত নভেম্বর মাসে গৃহীত প্রস্তাবটি এনেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস, সংক্ষেপে আইসিজে) অন্তর্বর্তী আদেশ, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের তদন্ত শুরুর বিষয় এবং রোহিঙ্গা ও অন্য সংখ্যালঘুদের মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে বঞ্চিত করার মতো নতুন বিষয়গুলো উঠে এসেছে ওই প্রস্তাবে। এ ছাড়া সেখানে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান, প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি করাসহ সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে যে অনুকরণীয় মানবিক দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করেছে তার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে ওই প্রস্তাবে।

সূত্র : কালের কণ্ঠ

 

এএফ/০৩