দিরাইয়ে সরকারি জায়গা দখলের অভিযোগ

দিরাই প্রতিনিধি


জানুয়ারি ০৩, ২০২১
১০:০০ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ০৩, ২০২১
১০:০০ অপরাহ্ন



দিরাইয়ে সরকারি জায়গা দখলের অভিযোগ

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের নুরনগর গ্রামের মৃত মিন্তার উদ্দিনের ছেলে ফিরোজ আলী ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে সরকারি খাস জমি ও জনসাধারণের চলাচলের সরকারি গোপাট দখল, কৃষি জমিতে পানি সেচে বাধা ও জলমহাল নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ উঠেছে। ফিরোজ আলী ও তার লোকজনের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে ও প্রতিকার চেয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর নুর নগর, আলী নগর ও পাশা নগর গ্রামের পক্ষে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নুর নগর গ্রামের মাওলানা শাব্বির আহমদ।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ফিরোজ আলীর বাহিনীর তাণ্ডবে অসহায় উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের নূর নগর, আলী নগর ও পাশা নগর গ্রামের লোকজন। ১ নম্বর সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত দয়াদুপনী মৌজার জেল নম্বর ১৬ এর ১০০১ দাগে ৩৪ শতক খাল, ১০০২ দাগে ১.১০ শতক লায়েক পতিত, ১০০৩ দাগে মোট ৭৭ শতক নালা রয়েছে, যা এলাকার লোকজন যুগ যুগ ধরে কৃষিকাজের জন্য ভোগ-ব্যবহারসহ গরু-বাছুর ছড়ানো, পানি খাওয়ানোসহ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে আসছে। ফিরোজ আলী ও তার লোকজন কতিপয় ভূমিখেকোদের নিয়ে অবৈধভাবে তা দখলে নেওয়ার নেয়ার পাঁয়তারা করছেন। দয়াদুপনি মৌজার জে এল নম্বর ১৬, খতিয়ান নম্বর ১, দাগ নম্বর ১০০২ লায়েক পতিত জায়গাটির ফিরোজ আলী এবং তার সঙ্গী নবাব, পারুল, জমসেদ, গিয়াস, রেজু, সলিম, বছু, ছুটিল, ছোট মিয়া, আব্দুন নুর গংরা এলাকাবাসীকে তোয়াক্কা না করে গোপাট ভূমি বিক্রি করছেন। প্রাথমিকভাবে তারা প্রতিটি বসতভিটা নির্মাণ করার শর্তে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন। অথচ এই লায়েক পতিত জমি দিয়ে ভাটিপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিমের হাওরগুলো থেকে হাজার হাজার টন ধান, খড়সহ যাবতীয় জিনিস এবং গরু-বাছুর আসা-যাওয়া করে। উক্ত গোপাট ছাড়া পশ্চিমের হাওরগুলো থেকে ধান এবং গরু-বাছুর আসা-যাওয়ার আর কোনো বিকল্প রাস্তা নেই। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসেও অভিযোগ করা হয়েছে।

নুর নগর গ্রামের আবু রশিদ, ফজল ও আজব নুর, আলী নগরের রফিক মিয়া, আনেস মিয়া তালুকদার, ভাটিপাড়া গ্রামের মইদর আলী ও খালেক মিয়াসহ এলাকার বেশ কিছু লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, ফিরোজ আলী ও তার বাহিনীর লোকজন লায়েক পতিত গোপাটে ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে চাইলে বাধা দেন গ্রামের সাধারণ মানুষ। যার ফলে তাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে গ্রামের সুমন, সফর, তারাজুল, সফিকুলসহ আরও অনেককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করা হয়। নিজেদের মালিকানার জমিতেও চাষাবাদ করতে পারছেন না গ্রামের সাধারণ লোকজন। ১ নম্বর নালা সামিপুর (দাগ নম্বর ১৪৬), ২ নম্বর নালা (দাগ নম্বর ২০৬), সরকারি গোপাট (দাগ নম্বর ১৬৬), কুন্দকাটি পানির নালা (দাগ নম্বর ১৪৯৯), কাউয়াজানের দাইর (দাগ নম্বর ৯৬-৯৮) অবৈধভাবে দখল করে টাকার পাহাড় বানিয়ে নিরীহ জনগণকে হেনস্থা করছেন ফিরোজ আলীর লোকজন।

তবে ফিরোজ আলী ও তার লোকজনের উপর আনীত এসব অভিযোগ মিথ্যা উল্লেখ করে ফিরোজ আলীর ভাতিজা গ্রামের রেজু মিয়া বলেন, 'আমরা আইনের উর্ধ্বে নই। সরকারি জায়গায় আমরা চাইছিলাম এলাকার গরিব লোকদের ঘর করে দিতে। এতে শাব্বির মিয়ার লোকজন বাধা দিচ্ছে। আমরা দশের কথায় বাদ দিয়েছি। শাাব্বির মিয়ার লোকজনই খাস জায়গায় ক্ষেত করে। আমরা শক্তি দেখাই না। ফিরোজ আলীর কোনো বাহিনী নেই। আমরা অবৈধ কোনো কাজ করিনা।'

ভাটিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান কাজী বলেন, 'এলাকায় দুইপক্ষের দ্বন্দ্ব চলছে। একপক্ষ আরেকপক্ষকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। ফিরোজ আলী ও তার লোকজন কারও কথা শোনে না। তাদের সংঘবদ্ধ বহিনীর তাণ্ডবে এলাকার মানুষ অনেকটা অসহায়।'

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'খাস জায়গাকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। সমস্যা হচ্ছে যে জায়গা নিয়ে ঝামেলা সেই জায়গা জামালগঞ্জ থানার সীমানায় আর ঝগড়া হয়েছে দিরাই থানায়। এ নিয়ে দু'টি মামলা রয়েছে। খাস জায়গার বিষয় তো ভূমি অফিস দেখবে। শুনেছি ফিরোজ আলীর লোকজন ওই জায়গা প্লট করে বিক্রি করছে।'

ইউনিয়ন ভূমি সহকারী জহুর আহমদ বলেন, 'সরকারি জায়গা দখলের অভিযোগের তদন্তে সরেজমিনে গিয়েছি। গ্রামে দুটি গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সরকারি জায়গায় ঘর নির্মাণ বা চাষাবাদ করার সুযোগ নেই। দাঙ্গা-হাঙ্গামা না করতে উভয়পক্ষকেই আমরা নিষেধ করে আসছি।'

 

এএইচ/আরআর-১১