মডার্না, ফাইজার ও অক্সফোর্ড টিকায় পার্থক্য যেখানে

সিলেট মিরর ডেস্ক


জানুয়ারি ০৫, ২০২১
০২:৪৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ০৫, ২০২১
০১:৪০ অপরাহ্ন



মডার্না, ফাইজার ও অক্সফোর্ড টিকায় পার্থক্য যেখানে

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মডার্না, ফাইজার ও অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়েছে। প্রয়োগও শুরু হয়েছে। তিনটি ভ্যাকসিনই তাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের শেষপর্বে ৯০ শতাংশ কার্যকর বলে আসছে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের শেষ পর্বের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে ২৩ নভেম্বর। যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমএইচআরও গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় এবং ৪ জানুয়ারি প্রয়োগ শুরু হয়। ৮২ বছর বয়সী ব্রায়ান পিংকার প্রথম রোগী হিসেবে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নিয়েছেন।   

প্রথম ভ্যাকসিন হিসেবে যুক্তরাজ্যে অনুমোদন পায় ফাইজার-বায়োএনটেকের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন। এটিও দেশটিতে প্রয়োগ করা হচ্ছে। মডার্নার ভ্যাকসিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদনের পর প্রয়োগ শুরু হয়েছে। তবে যুক্তরাজ্যে এখনও তা ছাড়পত্র পায়নি।

করোনাভাইরাসকে টার্গেট করে অক্সফোর্ড তাদের প্রচলিত ভ্যাকসিন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছে।

তাদের এই প্রযুক্তিতে শিম্পাঞ্জির দেহে সাধারণ ঠান্ডা সৃষ্টি করে এমন একটি ভাইরাসকে ট্রোজান হর্স হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে। এই ভাইরাসটিকে পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে এটি মানুষের দেহে রোগ সৃষ্টি করবে না। এতে নতুন করোনাভাইরাসে একটি জিন যুক্ত করা হয়েছে।

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন মানুষের দেহকোষে করোনাভাইরাসের জিনের প্রবেশ ঘটায়, যা স্পাইক প্রোটিন তৈরি করে। এতে থাকে কোভিড-১৯-এর অন্যান্য বৈশিষ্ট্য। এর ফলে শরীরে যদি আসল করোনাভাইরাস প্রবেশ করে তাহলে রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিন যে প্রযুক্তিতে তৈরি হয়েছে তা এমআরএনএ নামে পরিচিত। এতে মানুষের দেহে একটি মেসেঞ্জার সিকুয়েন্স প্রবেশ করানো হয়, যাতে জেনেটিক নির্দেশ থাকে। এই নির্দেশে ওই ব্যক্তির দেহকোষকে অ্যান্টিজেন উৎপাদনের কথা বলা হয় এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। এমআরএনও প্রযুক্তিকে এভাবে ব্যবহার একেবারে নতুন।

তিনটি ভ্যাকসিনেরই দুটি ডোজের প্রয়োজন হয়। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকারকে পরামর্শদানকারী সংস্থা জয়েন্ট কমিটি অন ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনিজাইশেন জানিয়েছে, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নিয়ে লক্ষ্য হলো ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়া। কোর্স সম্পন্ন করতে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে।

ফাইজার ভ্যাকসিনে দুটি ডোজ দেওয়ার পর ৯৫ শতাংশ সুরক্ষা পাওয়া গেছে। ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে এটি ৯৪ শতাংশ কার্যকর। এই বয়সসীমার মানুষ সর্বাধিক ঝুঁকিতে রয়েছেন। প্রথম ডোজ দেওয়ার ১২ দিনের মধ্যে সুরক্ষা পাওয়া গেছে ৫২ শতাংশ।

মডার্নার ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ৯৪.৫ শতাংশ কার্যকর বলে জানা গেছে। তবে তারা জানিয়েছে, তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষা এখনও চলছে। হয়তো কার্যকারিতার হার বদলাতে পারে।

অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের দুটি ডোজের ক্ষেত্রে কার্যকারিতা ৬২ শতাংশ। কিন্তু যখন প্রথমে অর্ধেক ডোজ এবং অন্তত এক মাসের ব্যবধানে পূর্ণাঙ্গ দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে, তখন কার্যকারিতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ শতাংশ।

এই ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন ব্রিটিশ ওষুধ নিয়ন্ত্রকরা। তারা পরীক্ষার ফলাফলের তথ্য পর্যালোচনার পর দুটি পূর্ণাঙ্গ ডোজ প্রয়োগ করার সুপারিশ দিয়েছেন। সংস্থাটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রথম ডোজের পর তিন মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ প্রদান করা হলে কার্যকারিতা ৮০ শতাংশ। প্রথম ডোজ প্রদানের ২২ দিনের মাথায় ভ্যাকসিনে সুরক্ষা পাওয়া যায় ৭০ শতাংশ।

ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিন প্রথম ডোজ গ্রহণের ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে। ফাইজারের ভ্যাকসিন অনুমোদনের সময় ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রকরা বলেছিলেন, প্রথম ডোজের ২১ দিনের মাথায় দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। কিন্তু পরে তা পাল্টে ২১ দিন থেকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত করা হয়। অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে ৪ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে।

তিনটি ভ্যাকসিনের একটি বড় পার্থক্য হলো কীভাবে সংরক্ষণ করা হবে। ফাইজারের চেয়ে মডার্নার ভ্যাকসিন বিতরণ সহজ। এ দুটির ক্ষেত্রে কিছুটা উদ্বেগ থাকলেও সবচেয়ে সহজ হলো অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন বিতরণ। পরিবহন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ফাইজারের ভ্যাকসিন মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে এবং প্রয়োগের আগে অন্য একটি তরল পদার্থের সঙ্গে মিশ্রিত করতে হবে। ফাইজার ভ্যাকসিনের জন্য কোম্পানিটি নিজেদের প্যাকেজিং ব্যবস্থা তৈরি করেছে। এতে বিশেষায়িত ফ্রিজার ছাড়াই ১০ দিন সংরক্ষণ করা যাবে।

মডার্নার ভ্যাকসিন বাসাবাড়ির সাধারণ ফ্রিজে ত্রিশ দিন পর্যন্ত রাখা যায়। রুমের তাপমাত্রায় এই ভ্যাকসিনটি ১ ঘণ্টা রাখা যাবে। মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বাড়িতে বা মেডিক্যাল ফ্রিজারে ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। কোম্পানিটির দাবি, তাদের ভ্যাকসিন বর্তমানে বহুল প্রচলিত পরিবহন ও সংরক্ষণ অবকাঠামোতে বিতরণ করা যাবে।  

যেকোনও ভ্যাকসিনের মতোই অক্সফোর্ডের উদ্ভাবিত টিকাও ভ্যাকসিন কেন্দ্রে রেফ্রিজারেটর ভ্যান বা কুলবক্সে করে পাঠাতে হবে। এগুলো সংরক্ষণ করতে বিশেষ ভ্যাকসিন ফ্রিজে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এবং আলো থেকে দূরে রাখতে হবে।

তিনটি ভ্যাকসিনের দামেও পার্থক্য রয়েছে। যদিও যুক্তরাজ্যের এনএইচএস’র সেবা গ্রহীতারা ভ্যাকসিনটি সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে পাবেন। সবচেয়ে দামি হলো মডার্নার ভ্যাকসিন। গ্রীষ্মে একটি ডোজের দাম পড়বে ৩৮ ডলার। আর ফাইজারের একটি ডোজের দাম ২০ ডলার।

মডার্না ও ফাইজারের চেয়ে দামে সস্তা অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন। অ্যাস্ট্রাজেনেকার দাবি, একটি ডোজের জন্য সরকারকে এক কাপ কফির দাম পরিশোধ করতে হবে। ধারণা হচ্ছে, একটি ডোজের দাম পড়বে ৩ ডলারের কম। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনটি মুনাফার জন্য বিক্রি করবে না, যাতে যেকোনও আকারের অর্থনীতির দেশেও তা পাওয়া যায়।

 

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

 

এএফ/০৩