ঝুঁকিতে জামালগঞ্জের তেরানগর সেতু

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


জানুয়ারি ০৮, ২০২১
০৮:২৩ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ০৮, ২০২১
১০:৫০ অপরাহ্ন



ঝুঁকিতে জামালগঞ্জের তেরানগর সেতু

জীবনের ঝুঁকিতে পতিত হয়েছে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের জনগুরুত্বপূর্ণ তেরানগর সেতু। অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুটি চলাচলের উপযোগী করতে এর দুই মুখে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। কাজের জন্য এ সেতু দিয়ে আপাতত যান ও যাত্রী চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাতায়াতের সুবিধার্থে সেতুর নীচে বসানো হয়েছে অস্থায়ী ফেরি। তবে কর্তৃপক্ষের তড়িঘড়ি সংস্কার কাজ যাত্রী চলাচলে স্বাভাবিক গতি আনলেও সেতুর মূল পিলারে বড় ধরনের ত্রুটি দেখা দেওয়ায় যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এমন শঙ্কা প্রকাশ করে টেকসই ও প্রশস্ত সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

ভীমখালী ইউনিয়নের তেরানগর গ্রাম সংলগ্ন দৌলতা নদীর উপর দণ্ডায়মান তেরানগর সেতু দিয়ে এতদিন চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেছেন সাধারণ মানুষ। সময়ে সময়ে ছোট-বড় অনেক দুর্ঘটনাও ঘটেছে এ সেতুতে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতায় গত মাসখানেক আগে সেতু পার হতে গিয়ে ট্রলি উল্টে হানিফ মিয়া নামের এক শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। সম্প্রতি তেরানগর সেতুর প্রবেশদ্বারের দুই অংশ ভেঙে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। কেবল দায় সারতে লোক দেখানো সংস্কার কাজে হাত দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের।

এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে চরম উদাসীন তার বড় উদাহরণ সাচনা চৌধুরী বাড়ি সেতু। গেল বছরের ৩০ অক্টোবর দৈনিক সিলেট মিরর পত্রিকায় সেতুটির বেহাল দশা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরও সেতু সংস্কারে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন চালকসহ যাত্রীসাধারণ।

জানা যায়, তেরানগর সেতুটি জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু। চরম ঝুঁকি নিয়ে দিনের পর দিন উপজেলার ভীমখালী ও ফেনারবাঁক ইউনিয়নসহ দিরাইয়ের রফিনগর ও ভাটিপাড়া ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ এ সেতু দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করছেন। শুকনো মৌসুমে যাতায়াতের পাশাপাশি হাজারও কৃষকের ফসল ওঠানোর কাজ চলে এ সেতু দিয়ে। উন্নয়নবঞ্চিত এই এলাকার চলাচলে একমাত্র ভরসা তেরানগর সেতু। সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত ও দায়সারাভাবে নির্মিত এই সেতুটি নির্মাণের ২০ বছর যেতে না যেতেই চরম ঝুঁকিতে পতিত হয়েছে। জীবন-জীবিকার তাগিদে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়েই তাদের নিত্যযাতায়াত বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুটির তেরানগর প্রবেশমুখে বামদিকের নিরাপত্তা বেষ্টনীর বেশ কিছু অংশ ভেঙে পড়েছে। অপর প্রান্তের নিরাপত্তা বেষ্টনীর অবস্থা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় ৩০০ ফুটের বেশি দৈর্ঘ ও ৬ ফুট প্রস্থ সরু সেতুটির স্থানে স্থানে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেতুর দুই প্রান্তের অধিক ঢালু জায়গা ডিঙিয়ে তারপর মূল সেতুতে উঠে যানবাহন। সেতু থেকে নামতে গিয়ে দুইপাশে নেই কোনো নিরাপত্তা বলয়। যাত্রীবাহী কোনো যান একটু এদিক-সেদিক হলেই নিশ্চিত দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া ছাড়া আর কোনো গতি নেই। যে পিলারে ভর করে সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে সেই পিলারের অবস্থা আরও নাজুক। সেতুটি সাময়িক সংস্কার করে দায় এড়ানো সম্ভব হলেও যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঠেকানো হয়তো সম্ভব হবে না।

ফেনারবাঁক ইউনিয়নের মাতারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও পশ্চিম রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সীতেশ রঞ্জন তালুকদার বলেন, 'সেতুর নীচের পিলারগুলো দুর্বল হয়ে গেছে। দুই গাড়ি এক সঙ্গে উঠলে মনে হয় সেতুটা কেঁপে ওঠে। তারপরও আতঙ্ক নিয়েই সেতু পার হচ্ছে মানুষ। জরুরি ভিত্তিতে এই সেতুটি নির্মাণ করা দরকার।'

ভীমখালী ইউনিয়নের তেরানগর গ্রামের আব্দুল হক বলেন, 'ভাঙা সেতুতে এখন যে কাজ করা হচ্ছে এটা সাময়িক। কিছুদিন যাওয়ার পর আবার আগের অবস্থায় চলে যাবে। পুরাতন এই সেতু ভেঙে স্থায়ীভাবে নতুন মজবুত সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন। নইলে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।'

ফেনারবাঁক ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য অক্ষয় দাস বলেন, '৩-৪ বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ চলাচল করছে। এখনকার ঝুঁকিটা এক্কেবারে বেশি। কিছুদিন আগে এখানে একজন মারাও গেছেন। তবু বিপদে পড়ে এই সেতু দিয়েই হাট-বাজারে যেতে হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতু ভেঙে দ্রুত নতুন সেতু করা হোক- এ দাবি সকলের।'

ফেনারবাঁক গ্রামের বাসিন্দা মো. নবাব মিয়া জানিয়েছেন, ২০-২২ বছর আগে সেতুটি যখন নির্মাণ করা হয়, তখন এর কাজ সঠিকভাবে হয়নি। যে কারণে মাঝে মাঝে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এবং দুই মুখের কিনারের রেলিং ভেঙে গেছে। এখন যদি এ সেতু নতুন করে নির্মাণ করা না হয়, তাহলে যেকোনো দিন দুর্ঘটনা ঘটে মানুষ মারা যেতে পারে।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, 'এই সেতুটি রিপ্লেস হবে, নতুন হবে। এটা ডিপিপিতে প্রক্রিয়াধীন আছে। ডিপিপি অনুমোদন হয়ে গেলেই এটার টেন্ডার হবে। টেন্ডারে গেলেই আমরা চেষ্টা করব কাজটা দ্রুত শেষ করার।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, 'তেরানগর সেতু নতুন করে নির্মাণের পরিকল্পনা আছে কি না সে ব্যাপারে এলজিইডি ভালো বলতে পারবে। তবে জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি নির্মাণ করা দরকার। বর্তমানে সংস্কারের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুই-চারদিনের মধ্যে চলাচলের উপযোগী হয়ে যাবে।'

 

বিআর/আরআর-০৮