সুনামগঞ্জে শান্তিপূর্ণ ভোট, নেই কারও অভিযোগ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি


জানুয়ারি ১৭, ২০২১
১২:৫৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ১৭, ২০২১
০১:১৪ পূর্বাহ্ন



সুনামগঞ্জে শান্তিপূর্ণ ভোট, নেই কারও অভিযোগ

সুনামগঞ্জ, ছাতক ও জগন্নাথপুরসহ ৩টি পৌরসভায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। তিন পৌরসভার ৫৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৪টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করলেও সেগুলোতেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আজ শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট প্রদান করেছেন ভোটাররা। ৩টি পৌরসভায় প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রার্থীরাও ভোটে কারচুপি ও অনিয়ম বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেননি।

এদিকে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণের এমন ঘটনায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে প্রশাসন। প্রশাসন প্রতিটি কেন্দ্রে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম ও পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান সারাদিন বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন। মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির টহল।

সুনামগঞ্জের ৩টি পৌরসভার মধ্যে জগন্নাথপুর পৌরসভায় এবার প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হয়। এছাড়া সুনামগঞ্জ ও ছাতকে ব্যালটে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে ১০ জন মেয়র প্রার্থী, ১২০ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৬ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রতিটি কেন্দ্রেই নারী ভোটারদের বিপুল উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

সরেজমিনে সকাল সাড়ে ৮টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পিটিআই প্রশিক্ষণ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সেখানে কোনো ভোটার নেই। রোদ পোহাচ্ছেন আনসার, পুলিশসহ ভোট কেন্দ্রের বাইরের দ্বায়িত্বপ্রাপ্তরা। তবে ভেতরে পোলিং অফিসার ও এজেন্টরা বসেছিলেন। কিছুক্ষণ পর পৌর শহরের আরপিননগর কেবিমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী নাদের বখত ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসছেন। তার সঙ্গে তার বড়ভাই নজরুল বখত ও ছোটভাই পলিন বখতসহ পরিবারে লোকজন ছিলেন। এই ভোটকেন্দ্রে দেখা গেছে ৩০-৪০ জন নারী ভোটারের সারিবদ্ধ উপস্থিতি। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কেন্দ্রের চারদিকে পুলিশের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়।

সকাল ১০টায় শহরের বুলচান্দ উচ্চবিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ ক্যাম্পাসে ভোটারদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করে বাঁশ ও রশি দিয়ে সারি বানানো হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি সারিই খালি। একজন-দুইজন ভোটার এসে সরাসরি বুথে প্রবেশ করছেন। এ সময় পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানকে পুলিশের বিশেষ দল নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করতে দেখা যায়। তিনি কয়েকটি বুথ ঘুরে দেখেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন।

সকাল সোয়া ১০টায় শহরের জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারদের উপস্থিতি নেই। বাইরে প্রার্থীদের লোকজন ভোটার তালিকা নিয়ে বসে আছেন। মাঠে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছেন। এ সময় স্কুলে প্রবেশ করেন জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন ও পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। তারা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আহমদ সাহলানকে নির্বিঘ্নে দায়িত্বপালনের নির্দেশ দেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন পুলিশ সুপার। 

সকাল পৌনে ১১টায় শহরের মোহাম্মদপুর ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন, ছাত্রলীগ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপনসহ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রে প্রবেশ করছেন। তারা প্রিসাইডিং অফিসার ও দায়িত্বরত পুলিশের সঙ্গে কথা বলে চলে যান।

সকাল ১১টায় শহরের লবজান চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নারী ভোটারদের দীর্ঘ ৪টি সারি। পুরুষরাও আলাদা লম্বা সারিতে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে এই কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল উপস্থিতি ছিল। এখান থেকে ২০ মিনিট পর বড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারদের দীর্ঘ উপস্থিতি। দুপুর পৌনে ১২টায় শহরের নবীনগর পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রেও গিয়ে দেখা যায় ভোটারদের দীর্ঘ সারি। দুপুর ১২টায় সরকারি মহিলা কলেজ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটারদের দীর্ঘ সারি। সোয়া ১২টায় শহরের এইচএমপি উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়েও একই চিত্র দেখা যায়। বিকেল পৌনে ৪টায় মল্লিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটার নেই। পোলিং অফিসাররা বসে আছেন। মাঠে সদর থানার ওসিকে পুলিশ নিয়ে টহল দিতে দেখা যায়। সুনামগঞ্জ পৌরসভার ২৩টি কেন্দ্রের সবগুলোতেই দুপুর থেকে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই একজন সাব-ইন্সপেক্টরসহ ৭ জন পুলিশ, ব্যাটালিয়ান আনসার, সাধারণ আনসারসহ মোট ১৯ জনের টিম দায়িত্বপালন করছে। তিনটি পৌরসভাতেই র‌্যাব ও বিজিবির টহল ছিল। ভোটকেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল পুলিশের মোবাইল টিম। তিনটি পৌরসভায় ৩ প্লাটুন বিজিবিসহ মোবাইল টিম ও রিজার্ভ টিম টহলে ছিল। তাছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বপালন করেছেন। তিনটি পৌরসভায় তিনজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও দায়িত্বপালন করেছেন। ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার সুযোগ ছিল না। তাই কোনো প্রার্থীই নির্বাচন নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেননি।

পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌরসভায় ২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, জগন্নাথপুর পৌরসভায় ১২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ছাতক পৌরসভায় ১৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ৯টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহিৃত করা হয়েছিল। এসব কেন্দ্রের সবগুলোতেই শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী নাদের বখত, বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোরশেদ আলম এবং ইসলামিক আন্দোলনের প্রার্থী রহমত আলী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ছাতক পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী কালাম চৌধুরী ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী রাশিদা আহমদ ন্যান্সী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। জগন্নাথপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মিজানুর রশিদ ভুইয়া, বিএনপির মেয়র প্রার্থী হারুনুজ্জামান, স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক প্রভাবশালী নেতা ও বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক পৌর মেয়র আখতার হোসেন, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আমজদ আলী শফিক ও বিষ্ণু রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণকালে কোনো প্রার্থীই নির্বাচনে কারচুপির কোনো প্রশ্ন তোলেননি।

সুনামগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোরশেদ আলম বলেন, 'কোনো অনিয়ম ও কারচুপি আমার চোখে পড়েনি। ফলাফল যাই হোক আমি মেনে নেব।'

সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আহমদ সাহলান বলেন, 'শান্তিপূর্ণ ও স্বাধীন এবং নিরপেক্ষভাবে আমরা ভোট নিয়েছি। কোনো অনিয়ম হয়নি।'

সুনামগঞ্জের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুরাদ উদ্দিন হাওলাদার বলেন, 'তিনটি পৌরসভায় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কঠোর অবস্থানে ছিল। তাই ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছেন। এ কারণে কোনো প্রার্থী কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ করতে পারেননি।'

 

এসএস/আরআর-০৪